রমজানের সংযম শিক্ষা প্রতিফলিত হোক ঈদ বাজারে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিশ্ব মুসলিমের উৎসবমুখর দু’টি দিনের মধ্যে একটি হলো- ঈদুল ফিতর। অর্থাৎ পবিত্র মাহে রমজানের পর শাওয়ালের প্রথম দিনটিই হলো ঈদুল ফিতর। খুশির বন্যা নিয়ে ধনী-গরীবের নির্বিশেষে মাঝে আসে মহা উৎসবের দিন।

ঈদুল ফিতর উদযাপনের পূর্বে ঈদ বাজারগুলোতে মুসলমান নর-নারীসহ সকল স্তরের মানুষের ঈদ আনন্দকে সার্থক করে তোলার জন্য নতুন কেনাকাটার একটি উৎসব আমেজ ঘিরে থাকে মার্কেটগুলোতে। ধনী, গরীব যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ঈদের অর্ধেক আনন্দই আসে কেনাকাটার মাধ্যমে। যার যার পছন্দ ও রুচিমাফিক খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় ক্রয় করার মাধ্যমে উৎসব আমেজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। আর তারই ফলশ্রুতিতে সবাই অপেক্ষায় থাকে ঈদুল ফিতর উদযাপনে।

মুসলিম বিশ্বের সর্বত্রই মাহে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে পূত-পবিত্র আনন্দ ও খুশির উৎসব নিয়ে আসে শাওয়ালের প্রথম চাঁদ। তাই ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই বিনোদনের মহাআনন্দের ফল্গুধারা। অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির ঐতিহাসিক মহামিলনের মহেন্দ্রক্ষণ। নানা আয়োজন ও অন্তরের প্রেম-প্রীতি ভালোবাসার অতিন্দ্রীয় চেতনায় এক পূত-পবিত্র শিহরণ জাগরিত হয় মুসলিম হৃদয়ের পরম্পরায়। ছোট বড়, ধনী-গরীব ব্যবধান ভুলে জেগে উঠে মানবতার জয়গানের শাশ্বত সুর বীণায় শান্তি ও কল্যাণের মহাবারতা। সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের তরে মানব প্রেমের সুর মন্দ্রিত পবিত্র সত্তার আত্মিক প্রেরণায় উদ্বেলিত হয় জাগতিক কল্যাণের সকল আয়োজন। অবক্ষয় আর নৈতিক অধঃপতন থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য প্রার্থনায় নিমগ্ন হয় ঈদগাহে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর দরবারে করুণা ভিক্ষার মাধ্যমে।

সেজদাবনত হয়ে সমস্ত অকল্যাণ আর ধ্বংস থেকে হেফাজত করে মহান প্রভুর প্রশংসার ডালি দিয়ে যেন মানবতা সমস্বরে কৃতজ্ঞতা জানায় দু’হস্ত উর্ধ্বাকাশ তুলে ধরে। আগামি দিনগুলোতে মহান প্রভুর বারতাকে বিজয়ী করে ধূলির ধরাকে যেন বেহেশতি পরিবেশের আবাসন গড়ে তোলা যায়, তারই ঐকান্তিক কামনায় মুসলিম বিশ্ব আকুতি জানায় মহান আল্লাহর দরবারে। মানবের দুঃখ-বেদনা তিরোহিত করে সুখ-শান্তি ও চিরকল্যাণের সামাজিক বিধান কোরআন-হাদিসের আলোকে সমাজ বিনির্মাণের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও মুসলিম মিল্লাতের প্রতিটি সদস্যই যেন মহান প্রভুর সন্তুষ্টির তরে তৎপর হয়ে ওঠে, সেই ঐকান্তিক কামনা আমৃত্যু যেন জারি থাকে প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির অন্তরে।

ঈদ আনন্দ আর ঈদ বিনোদনের তরে সেটিই হবে ঈদুল ফিতরের আসল শিক্ষা।
সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, ফেতনা-ফ্যাসাদসহ সব অকল্যাণের মূলোৎপাটনে ঈদুল ফিতরের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে সত্যিকার অর্থে দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য সুখ-আয়োজনের সকল কল্যাণধর্ম কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা যদি অব্যাহতভাবে চালানো যায় এবং পাশাপাশি মানবমনের অসুরকে দমন করে পূত-পবিত্র মন-মানসিকতা সৃষ্টি করা যায় এবং জাগতিক কল্যাণে আত্মনিবেদিত হওয়া যায় ও ভোগের পরিবর্তে ত্যাগের মহিমা জেগে ওঠে তবেই জাতি হেসে উঠবে মানবতার জয়গানে। সফল হবে ঈদ-উৎসব এবং ঈদ বাজারের সকল আয়োজন।

তবে ঈদ বাজারে নীতি-নৈতিকতা ভুলে যে পরিবেশে সৃষ্টি হয়, যেসব কর্মকাণ্ড চলে- এ  বিষয়টির দিকে সবার সচেতনভাবে নজর দেওয়া দরকার। কেননা, গোটা মুসলিম দুনিয়ায় আজ বিভিন্ন উৎসবের নামে যে সকল অপসংস্কৃতির বা নৈতিকতাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করছে, সেগুলোকে কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা দিয়ে সমাজ পরিবর্তন বা নৈতিকতার উৎকর্ষ বিধানে মুসলিম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুবা যে ধরনের বিদেশি সংস্কৃতি বা আকাশ সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে চলছে, এভাবে অব্যাহত থাকলে আমাদের ভবিষ্যত বংশধারা নৈতিকতার চরম দেউলিয়াত্বের শিকার হয়ে মুসলিম পারিবারিক বা সামাজিক ভিত্তি ধ্বংসের পথকেই তরান্বিত করবে। তাই সময় থাকতে কোরআনের আলোকে আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি রচনা করে সামাজিক ঐক্য ও সংহতিকে পুনর্গঠনের জন্য এখনই দৃঢ়ভূমিকা রাখতে হবে।

তাই আসুন সকল মুসলিম নরনারী আজ সচেতনভাবে এক একটি পরিবারকে ইসলামি শিক্ষা ও নৈতিকতার পাঠদানের মাধ্যমে ভবিষ্যতের সুখি-সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনের জন্য রমজানের শিক্ষা থেকে দীক্ষা নেই এবং ঈদ বাজারসহ সবক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটাই।

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম