রবীন্দ্রনাথ কেন জরুরি : নোটিশ প্রত্যাহার চান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে লেখা প্রবন্ধ ‘আপত্তিকর’ উল্লেখ করে এক ব্যক্তি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে আইনি নেটিশ দিয়েছিলেন। আইনজীবীর মাধ্যমে সেই নোটিশের জবাব দিয়ে তা প্রত্যাহার করতে বলেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

রোববার (২৩ আগস্ট) অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নোটিশদাতার আইনজীবীকে জবাব পাঠান। গত ১৬ আগস্ট ওই নোটিশটি পাঠিয়েছিলেন মুহম্মদ মাহবুব আলম নামের এক ব্যক্তি।

নোটিশের জবাবে মুহম্মদ মাহবুব আলমের আইনজীবীকে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘আপনার পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে মতে আমার মক্কেলের লিখিত ‘রবীন্দ্রনাথ কেন জরুরি’ শীর্ষক প্রবন্ধটি বিগত ৭ আগস্ট দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশ হয় এবং সেই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু পাঠ করার পর আপনার মক্কেলের নিকট ওই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু অসত্য, বিকৃত ও আপত্তিকর মনে হয়েছে।

কিন্তু, আমাদের মক্কেল কর্তৃক লিখিত প্রবন্ধে তার নিজস্ব মতামতের প্রতিফলন ঘটেছে যার পেছনে রয়েছে আমাদের মক্কেলের নিজের মতো করে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য পাঠ।

এই মত প্রকাশের অধিকার সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত এবং আমাদের মক্কেলের প্রবন্ধে অপরকে অপমান বা হেয় করার কোনো উপদান ছিল না।আপনার মক্কেল হয়ত অবগত আছেন যে, আমাদের মক্কেলও সুদীর্ঘ ছয় দশকের অধিক কাল ধরে সাহিত্য, দর্শন ও অন্যান্য বিষয়ে লেখালেখির কারণে বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে স্বীকৃত এবং পাঠকনন্দিত। তিনি রবীন্দ্রনাথকে যেভাবে পাঠ করেছেন তার ভিত্তিতেই তিনি উপরোক্ত প্রবন্ধে নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন। আমাদের মক্কেল মনে করেন, সাহিত্য আলোচনার ক্ষেত্রে কারো আইনি অধিকার ভঙ্গের ব্যাপার থাকে না কারণ এতে সত্য-মিথ্যার উপস্থিতি থাকে না, থাকে কোনো বিষয়কে দেখার, বোঝার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের মক্কেলের লিখিত প্রবন্ধের কারণে আপনার মক্কেলের কোনো আইনগত অধিকার বা স্বার্থ ভঙ্গের বিষয় জড়িত নেই বিধায় তিনি উপরোক্ত লেখার কারণে কোনোভাবেই সংক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাছাড়া আমাদের মক্কেল উপরোক্ত প্রবন্ধ আপনার মক্কেলকে উদ্দেশ্য করে লেখেননি।

পক্ষান্তরে, আমাদের মক্কেলের বরাবরে আপনার মক্কেল বেআইনি, হয়রানিমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অপ্রয়োজনীয় আইনি নোটিশ প্রেরণ করে আমাদের মক্কেলের সাংবিধানিক অধিকারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন যা আপনার মক্কেল কর্তৃক সুষ্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন।’

Robi-Thakur-1

গত ৭ আগস্ট দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকীতে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়

জবাবে আরও বলা হয়, ‘আপনার প্রেরিত আইনি নোটিশে আমাদের মক্কেলকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে যা অত্যন্ত অপমানজনক, অপ্রয়োজনীয় এবং আমাদের মক্কেলকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার মানসে প্রেরণ করা হয়েছে বলে আমাদের মক্কেল মনে করেন। আপনার প্রেরিত আইনি নোটিশের সার্বিক বক্তব্য, আপনার মক্কেলের ব্যক্তিগত মতামত বিধায় আমাদের মক্কেল উপরোক্ত বক্তব্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিধায় তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছেন।’

অতএব, নোটিশ গ্রহীতাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে যে, জবাব প্রাপ্তির ৭ (সাত) দিনের মধ্যে আমাদের মক্কেল বরাবরে লিখিতভাবে আপনার প্রেরিত লিগ্যাল নোটিশ প্রত্যাহার করার বিষয়ে অবগত করবেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের হয়রানিমূলক, অবমাননাকর ও বেআইনি নোটিশ প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো, অন্যথায়, আমাদের মক্কেল আপনার মক্কেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন- বলে জবাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ