রপ্তানীতে বাধা: রাজশাহীর আমচাষিদের ২৮ কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রতিবছর রাজশাহীর সুস্বাদু আম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে লাভের মুখ দেখছিলেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা। এবারো বিপুল পরিমাণ আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশও এবার অর্জিত হবে না কোয়ারেন্টাইনের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে। এতে কৃষকদের ২৮ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে।

রাজশাহী অঞ্চলের আম উৎপাদক ও রপ্তানিকারকরা অভিযোগ করেছেন, বিদেশে রপ্তানির জন্য প্যাকেটিংয়ের আগে কেয়ারেন্টাইন স্টেশন কর্তৃক ছাড়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও প্রায় ৭০ শতাংশ আমকেই রপ্তানি অযোগ্য বলে ঘোষণা দিচ্ছে তারা। এটা অনৈতিক ও অযাচিত হস্তক্ষেপ কোয়ারান্টাইনের।

আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দীন জানান, কোয়ারেন্টাইন অফিসের দায়িত্ব হচ্ছে আমে তিন ধরনের পোকা আছে কী না সেটা যাচাই করে সনদ দেয়া। রাজশাহী অঞ্চলের আমে ওই তিনটি পোকার উপস্থিতি নেই। ফলে সহজেই ছাড়পত্র পাওয়ার কথা। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন আমের সাইজ, দাগ আছে কি না এসব বিবেচনা করে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। এটা তাদের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে না।

কৃষকরা জানিয়েছেন, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করতে হয় বিশেষ প্রক্রিয়ায়। এতে করে খরচ বেশি পড়ে। কর্মচারীদের অনেক প্রশিক্ষণ দিতে হয়। এভাবে কোয়ারান্টাইন পেস্ট দমন করা হয়। কৃষকদের এবারের উৎপাদিত আম দেখে খুশী রপ্তানিকারকরা। এছাড়া আমদানিকারকরাও আগ্রহী। কিন্তু মাঝখান থেকে কোয়ারান্টাইন বাগড়া দিচ্ছে।

তারা আরো জানান, রাজশাহী শতাধিক আম চাষী আম বাগানে প্রায় ৩৫ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদিত হয়েছে। অথচ ২ হাজার মেট্রিকটন আম রপ্তানীর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ৭০ শতাংশ আম বাতিল করা হলে কৃষকদেও প্রায় ২৮ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে। যারা ঋণ নিয়ে আম চাষ করেছে তাদের পথে বসতে হবে।
রাপ্তানিকারকরা জানান, গতবার ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত প্রায় শতভাগ আম রপ্তানির অনুমতি পেয়েছিলেন তারা। এবারো ব্যাগিং পদ্ধতিতেই রাপ্তানির জন্য আম উৎপাদন করেছেন কৃষকরা। কিন্তু এবার অহেতুক প্রায় ৭০ শতাংশ আম বাতিল করছে। এটি মেনে নেয়া যায় না।

রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হক শুক্রবার রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অসাধু তৎপরতায় রপ্তানি নষ্ট না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। এই সমস্যার সমাধান অতি দ্রুত না হলে মানববন্ধন, কৃষি ডিডি অফিস ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও হুমকি দেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন- সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান খান।

স/আর