রপ্তানি আয় বাড়াচ্ছে তৈরি পোশাক, মুখ থুবড়ে পড়ছে পাটজাত পণ্য

তৈরি পোশাকে ভর করে মহামারিকালেও এগিয়ে যাচ্ছে দেশের রপ্তানিখাত। বেড়েই চলেছে রপ্তানি আয়। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বর মাসে ৪০৪ কোটি ১৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৭ কোটি ডলার বেশি।

নভেম্বরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নভেম্বরে রপ্তানি আয় ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি হয়েছে। এছাড়া গত অর্থবছরের চেয়েও এবার নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে।

গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৩০৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের নভেম্বরের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ওই প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী- তৈরি পোশাক, ফার্নিচার, সিরামিক, গ্লাস প্রোডাক্ট রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে মুখ থুবড়ে পড়েছে পাটজাত পণ্য, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসসহ একাধিক পণ্য।

মহামারির মধ্যে রপ্তানির এই উল্লম্ফনেও স্বস্তিতে নেই রপ্তানিকারকরা। করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন নতুন করে রপ্তানিকারকদের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে।

ইপিবির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৯৭৯ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ের (জুলাই-নভেম্বর) তুলনায় ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-নভেম্বর) আয় ছিল এক হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।

পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২.৯৭ শতাংশ
এক হাজার ৪১১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৮৫ কোটি ৬২ ডলার। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই খাতে রপ্তানি ছিল এক হাজার ২৮৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে নিটওয়্যার পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। ওভেন পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার কারণে নিটওয়্যারের চাহিদা বেড়েছ। মানুষ এখনো ঘরে থাকতে নিরাপদ বোধ করছেন। ক্রেতার ফ্যাশনেও পরিবর্তন হয়েছে। শীতকালে সোয়েটারের পরিবর্তে স্পোর্টস ট্র্যাক ব্যবহার করছেন। এসবের ফলে নিটওয়্যারের চাহিদা বাড়ছে।’

জুলাই-নভেম্বর এ পাঁচ মাসে প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ, কৃষিজাত পণ্যে ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, চামড়াজাত পণ্যে ২৭ দশমিক ৪১ শতাংশ ও ফার্নিচারে ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অন্যদিকে গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে পাটজাত পণ্যে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসে ৮৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ রপ্তানি কমেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত রপ্তানি আয় শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ এরই মধ্যে তা রপ্তানিকারকদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণে বৈশ্বিক অর্থনীতি এরই মধ্যে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। চলতি বছরে বড়দিনের বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রপ্তানিখাতের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হবে।

 

সুত্রঃ আজগো নিউজ