রঙ বেরঙের ঘুড়িতে রঙিন সৈকতের আকাশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শীতের পড়ন্ত বিকেলে সোনালী আভা ছড়ানো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আকাশ আরো বর্ণিল হয়ে উঠেছিল নানা রঙের ঘুড়িতে।

দেশের প্রচলিত জনপ্রিয় বাংলা ঘুড়ির পাশাপাশি আধুনিক ঘুড়ি- বেসাতি, ড্রাগন, ডেল্টা, বহুবিধ বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, গুবরেপোকা, আগুনপাখি, পেঁচা, ফিনিক্স, জিমিন, চরকি, পালতোলা নৌকা, সাইকেল, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুকুর, হাতি, ফুটবল ও জাতীয় পতাকা সহ আরো অনেক ঘুড়ির সমাহার ছিল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আকাশে ।

ছিল ২৫ ফুট দীর্ঘ বিরাট টেরাকোটা টেপা পুতুল এবং নৃত্যরত বিশাল হাওয়াই মানুষ সহ নানা ধরণের বর্ণিল মনোহরি ঘুড়ির আয়োজন।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ২ দিনব্যাপী শুরু হওয়া ‘জাতীয় ঘুড়ি উৎসব-২০১৯ এর দৃশ্য ছিল এটি। বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের আয়োজনে শুক্রবার বিকেলে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল।

প্রতিমন্ত্রী রাসেল জাতীয় পতাকা এবং চীনের রাষ্ট্রদূত মি. ঝাং জু চীন ও বাংলাদেশের পতাকার সমন্বয়ে তৈরি মৈত্রী পতাকা আদলের ঘুড়ি উড়িয়ে উৎসবের শুভ সূচনা করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘুড়ি বাঙালীর জাতীয় জীবনের সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে জড়িয়ে আছে। এমন কোন বাঙালী খুঁজে পাওয়া যাবে না যার শৈশব কৈশোরে ঘুড়ি ওড়ানোর স্মৃতি নেই।’

তিনি বলেন, ‘আজকের যান্ত্রিকময় নাগরিক জীবনে কোলাহলমুক্ত পরিবেশের ছোঁয়া পাওয়া মানুষের জন্য তেমনটা হয়ে উঠে না। আর ঘুড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুক্ত আকাশের কোলাহলমুক্ত পরিবেশের। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মুক্ত আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। এ ধরণের আয়োজনে আমরা ফিরে পাই ফেলে আসা হাসি কোলাহলের শৈশব কৈশোর।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যটন নগরী কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে ভূমিকা রাখবে। এতে নতুন প্রজন্ম হারানো ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি মন মনন এবং সুকুমার বৃত্তিগুলোর বিকাশে সহায়ক হবে।’

এছাড়াও ঘুড়ি উৎসবের এ আয়োজন পর্যটন শিল্পের বিকাশে এবং কক্সবাজারসহ দেশের পরিচিতি বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন জাহিদ আহসান রাসেল।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে আগত বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের কাছে ঘুড়ি উৎসবের মত আয়োজন বিনোদনের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। এতে ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির সঙ্গে দেশি-বিদেশী পর্যটকরা মেলবন্ধনে আবদ্ধ হবে।

ঘুড়ি ওড়ানোতে অংশ নিয়ে অনেকে ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা শৈশব কৈশোরের সোনালী দিনগুলোতে। শিশু কিশোর আর আবাল বৃদ্ধ-বনিতার অংশগ্রহণে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব যেন রূপ নেয় মুক্তপ্রাণের মিলনমেলায়। উৎসবে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষ্যনীয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ও বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেনু সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

উৎসবের আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবারের উৎসবে দুই শতাধিক দেশি-বিদেশী রঙ বেরঙের ঘুড়ির ব্যবস্থা ছিল। নিবন্ধিতরা ছাড়াও  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা ঘুড়ি উড়িয়ে উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। উৎসবে অভূতপূর্ব মনলোভা বৈচিত্র্যপূর্ণ সবধরনের ঘুড়ি ওড়ানোর ব্যবস্থা ছিল।

উৎসব উপলক্ষ্যে সন্ধ্যায় আলোক সজ্জিত ঘুড়ি ও আতশবাজি পোড়ানোর দৃশ্য ছিল অপূর্ব।

ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে ঘুড়ি উৎসবে অংশ নিতে আশফাকুল ইসলাম মনি (৪৫) অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকার কোলাহল যন্ত্রণা কাটাতে বিশাল সমুদ্র সৈকতের মুক্ত আকাশে ঘুড়ি উৎসবে অংশ নিতে এসেছি।’

উৎসবে ঘুড়ি ওড়াতে থাকা ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা (১৪) বলেন, ‘ঢাকার বদ্ধ নাগরিক জীবনে বিল্ডিংয়ের ছাদে ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উদযাপন করতাম। তখন অল্প আয়তনের ছাদ থেকে আকাশটাকে খুবই ছোট মনে হত।’

উৎসবে ঘুড়ি ওড়ানোয় অংশ নেন ৬৫ বছরের কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘ঘুড়ি উড়িয়ে শৈশব কৈশোরের চেয়ে ভিন্ন রকমের স্বাদ পেয়েছেন। তখনকার চেয়ে এখনকার ঘুড়িগুলো বেশ বর্ণিল এবং আকারেও বড়।’ তিনি ঘুড়ি উড়িয়ে যেন ফিরে পেয়েছিলেন হারানো সেই সোনালী শৈশব কৈশোর।

এদিকে উৎসবের আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রতিবারে সমসাময়িক প্রেক্ষিতে দেশপ্রেম, পরিবেশ, সংস্কৃতি ও সামাজিক সমস্যার আদর্শগত ভাবনা থেকেও নানা আয়োজন থাকে এবার সেটি নিয়ে আয়োজন করা হয় কক্সবাজারে পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতির ভাবনা।

উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেনু বলেন, ‘ঘুড়ি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য উপাদান। প্রাচীনকাল থেকে উৎসব, মেলা, পূজা-পার্বণসহ নানা অনুষ্ঠানাদিতে ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উদযাপনের প্রচলন ছিল। কিন্তু বস্তুতন্ত্রের জড়-মানসিকতায় আমরা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে অকৃত্রিম অনাবিল আনন্দ উদযাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’