রং আর তুলির আঁচড়ে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ, মণ্ডপে যাওয়ার প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আর মাত্র কয়েক দিন বাদেই শারদীয় দুর্গোৎসব। দিন-রাত এক করে এখন রং আর তুলির আঁচড়ে শেষ রূপায়নের কাজ করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। তাই পাল বাড়ি জুড়ে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ, তারপরেই দেবীর মণ্ডপের  উঠার প্রস্তুতি।

 

ঋতু রাণী শরৎ এলেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে দোলা দেয় দশ ভূজা, মহামায়া, ত্রিনয়নী দেবীর আবাহনী। জানান দেয় শারদীয় উৎসবের। দূর্গতিনাশিনী দেবীর আগমনী বার্তায় ভক্তকূলে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। রাজশাহীর আলুপট্টি এলাকার পাল বাড়িতে পা দিলেই দোলা দিচ্ছে সেই উৎসবের হাওয়া।

 

বোধনের মধ্য দিয়ে আগামী ৭ অক্টোবর দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গা দর্শন দেবেন তার ভক্তদের। ধূপ, ধুনুচি আর ঢাকের তালে কয়েকদিন পরেই মেতে উঠবে রাজশাহী। ইতোমধ্যে দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মণ্ডপ সাজানো ও নতুন জামা-কাপড় কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

 

এদিকে, প্রতিমা শিল্পী  কার্তিক চন্দ্র পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গা প্রতীমা তৈরির কাজ এখন শেষ শুরু হয়েছে রঙের কাজ। প্রতিবছর রাজশাহী শহর এলাকায় বেশিরভাগ পূজা মণ্ডপেই সেজে ওঠে পাল বাড়ির এ প্রতিমায়। এবার ছোট বড় সব মিলিয়ে ১৭ টা প্রতিমার কাজ করছেন কার্তিক চন্দ্রপাল। প্রতিমার সাজসজ্জা শেষে তুলে দেওয়া হয় মহানগীর বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে।

14518212_686117324879585_845854751_n-copy

কার্তিক চন্দ্র পাল সিল্কসিটি নিউজকে জানান, বংশ পরম্পরায় এ পেশা পেয়েছেন তিনি। বাবা বাবু চন্দ্র পাল তার শৈল্পিক হাতে প্রতিমা তৈরি করতেন। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে এগুলো দেখেই তার বেড়ে ওঠা। মাত্র দশ বছর বয়সেই দীক্ষা নেন বাবার কাছে। বাবার কাছেই শেখেন কাদা-মাটি আর কাঠ-খড় দিয়ে কিভাবে প্রতিমা গড়া যায়। এখন ২৫ বছর থেকে তিনি প্রতিমা তৈরির কাজ করেন।

 

কার্তিক আরও  জানান, আষাঢ়ের ৯ তারিখ থেকে তারা প্রতিমা তৈরি শুরু করেছেন, এখন শুধু প্রতিমাগুলোর রঙের কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যেই  দুর্গা প্রতিমাগুলোয় চূড়ান্ত রঙ লাগিয়ে পোশাক পরিচ্ছদে সুসজ্জিত করা হবে। তারপর যাবে মণ্ডপে।

এবার রাজশাহীতে বেড়েছে পূজামণ্ডপের সংখ্যা। জেলা ও মহানগরে এবার ৪২৯টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার নয়টি উপজেলায় ৩৫৩টি ও নগরে ৭৬টি। গত বছর ছিল ৪০২টি। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশেই কারণে এবার শারদীয় দুর্গোৎসবে পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, এবার পূজামণ্ডপে পটকা ও আতশবাজি ব্যবহার বন্ধ এবং ভ্যানেটি ব্যাগসহ যেকোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে পূজামণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বিজয়া দশমীর দিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দিতে আয়োজকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ও রাজশাহী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অনিল কুমার সরকার বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। তবে এ নির্দেশনায় তাদের উৎসবের কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। ইতোমধ্যেই প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার তা সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে  বিতরণ করা হয়েছে।

স/অ