যোদ্ধা পরিবারে জন্ম, বিপিনের মৃত্যুও হলো সেনা পোশাকে

স্বাধীন ভারতের সামরিক ইতিহাসে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার প্রধান হওয়ার কৃতিত্বের পালক জেনারেল বিপিন লক্ষ্মণ সিংহ রাওয়াতের টুপিতে। সেই তিনি চপার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। সামরিক মর্যাদায় আগামিকাল তার শেষকৃত্য হবে।

জানা গেছে, ১৯৫৮ সালের ১৬ মার্চ ভারতের উত্তরাখণ্ডের পৌড়ীর এক গঢ়ওয়ালি রাজপুত পরিবারে জন্ম বিপিন রাওয়াতের। তার পরিবারে সেনাবাহিনীতে যোগদানের ইতিহাস পুরুষানুক্রমিক। বাবা লক্ষ্মণ সিংহ রাওয়াত ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল।

সেই রীতি মেনেই সেনাবাহিনীতে যোগদান রাওয়াতের। শিমলার সেন্ট এডওয়ার্ড স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে তিনি যান পুণেতে। খড়কভাসলার ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে। এর পর দেহরাদূনে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে যোগ দেন সেনাবাহিনীর ১১ গোর্খা রাইফেলসের পঞ্চম ব্যাটালিয়নে।

দীর্ঘ কর্মজীবনের বড় অংশ জম্মু ও কাশ্মীরে কাটিয়েছেন রাওয়াত। সোপোরে সন্ত্রাসদমন অভিযান থেকে রাজৌরির নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানি হামলা প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে। পেয়েছেন উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেলসহ একাধিক সেনা-সম্মাননা।

আফ্রিকার কঙ্গোয় জাতিসংঘের শান্তি বাহিনীর একটি ব্রিগেডের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। মেজর জেনারেল হিসেবে ১৮ নম্বর পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসারের দায়িত্বও পালন করেছেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উত্তীর্ণ হওয়ার পর রাওয়াত নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে সেনাবাহিনীর ৩ নম্বর কোরের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। এর পর হন পুণের দক্ষিণাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের প্রধান। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভারতের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।

সেনাপ্রধান পদে রাওয়াতের পূর্বসূরি জেনারেল দলবীর সিংহ সুহাগ ২০১৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব নিলেও তার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছিল মনমোহন সিং সরকারের জমানায়।

রাওয়াত সেনাপ্রধান থাকাকালীন কাশ্মীরে পাথর ছোড়া ঠেকাতে এক বিক্ষোভকারীকে জিপে বেঁধে ঘুরিয়েছিল সেনাবাহিনী। সেই পদক্ষেপ সমর্থন করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।

এর পর কাশ্মীরে বিক্ষোভকারীদের পাথরে সেনাদের আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, পাথরের বদলে ওরা যদি গুলি ছুড়ত, আমাদের পক্ষে মোকাবিলা করা অনেক সহজ হত।

তিন বছর কাজ করার পর ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্থলসেনা প্রধান হিসেবে অবসর নেওয়ার কথা ছিল রাওয়াতের। তার এক দিন আগে ভারতের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক পদে তাকে নিযুক্ত করে মোদি সরকার।

বিপিনের আগে ভারতের দুই সাবেক সেনাপ্রধান কে এম কারিয়াপ্পা এবং শ্যাম মানেকশকে অবসরের পর আলঙ্কারিকভাবে ফিল্ড মার্শাল পদে উত্তীর্ণ করা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সমন্বয় রক্ষার দায়িত্ব পাননি।

মোদি সরকার সেনা বিধি সংশোধন করে রাওয়াতকেই প্রথম তিন বাহিনীর ‘সিঙ্গল পয়েন্ট অ্যাডভাইজর’-এর দায়িত্ব দিয়েছিল। জল্পনা ছিল, অবসরের আগে রাওয়াতকেও পাঁচতারা ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হতে পারে। জীবদ্দশায় সেই সুযোগ পেলেন না রাওয়াত।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ