যে কারণে জঙ্গিদের লাশ পরিবারকে দেওয়া হয় না

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযানে নিহত জঙ্গিদের লাশ নিতে স্বজনদের সবসময় নিরুৎসাহী করা হয়। এরপরও স্বজনরা জঙ্গিদের লাশ চাইলেও তা ফেরত না দিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন করার ব্যবস্থা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যদিও তারা দাবি করেন, স্বজনরা লাশ নিতে অস্বীকার করেছেন। কৌশলগত কারণেই জঙ্গিদের লাশ স্ব-স্ব পরিবারের কাছে দেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

তাদের দাবি, জঙ্গিদের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণার কারণও এটি। এছাড়া জঙ্গিদের কবর ঘিরে যেন বিশেষ কোনও স্থাপনা গড়ে উঠতে পারেন, সে কারণেও লাশ স্বজনদের  দেওয়া হয় না।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক নিহত হন। এছাড়া হামলার সময় পুলিশি অভিযানের শুরুতে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন রবিউল ইসলাম ও সালাউদ্দিন খান নামে দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আহত হন আরও ২৫ পুলিশ সদস্য।

পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামিহ মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল নামে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। এছাড়া নিহত হন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার নামে এক শেফও। হামলায় অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গি ও সন্দেহভাজন শেফের লাশ দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের মর্গে ছিল। অনেকের পরিবার তাদের লাশ নিতে চায়নি।  পুলিশ প্রায় দাবি করে,  জঙ্গিদের লাশ নিতে চায় না তাদের পরিবার। এ ঘটনার প্রায় দুই মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর ছয়জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গত বছরের ২৬ জুলাই কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অভিযানে নিহত নয় জঙ্গি। ঘটনার দুই মাস পর ২৮ সেস্টেম্বর তাদের লাশও বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মফিদুলের কাছে দেওয়া হয়। ওইদিনই ৯ জঙ্গির লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নারায়ণগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় নিহত তিন জঙ্গি, সিলেটের আতিয়া মহলের চার জঙ্গি, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আস্তানায় নিহত পাঁচ জঙ্গির লাশ পরিবার নিতে না চাওয়ায় তাদের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।

মৌলভীবাজারে বড়হাট ও নাসিরপুরের জঙ্গি আস্তানায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ৪ শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়। সবার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গিদের পরিচয় দিতেই তাদের স্বজনরা লজ্জা পান। কোনও পরিবারের সদস্য যদি জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে, তারা সামাজিকভাবেই হীনমন্যতায় ভোগেন। তারা আর ওই জঙ্গির লাশ নিতে চান না। এমনকি তারা এসব এড়িয়ে চলেন। তাই তাদের লাশ দেওয়া হয় না। কেউ কখনও দেখতেও আসেন না।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকটি ঘটনায় লাশ চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে আইনি জটিলতা ও পরবর্তী সময়ে স্বজনদের অনাগ্রহের কারণে তা আর হয়নি। এছাড়া জঙ্গিদের লাশ নিয়ে পরবর্তী সময়ে যেন কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়টিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাথায় রাখতে হয়। তাই নিরাপদ স্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়।’

জঙ্গিদের লাশ চিহ্নিত হওয়ার পরও পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করার বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক একাধিকবার বলেছেন, ‘জঙ্গিদের লাশ তাদের স্বজনরা নিতে চান না। তাই বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। জঙ্গিদের তাদের পরিবার ও সমাজ ঘৃণা করে।’

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল  (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এমন কোনও বড় জঙ্গি নেই, যার কবর ঘিরে বড় কোনও বিশেষ জায়গা গড়ে উঠবে। তবে সতর্ক থাকা ভালো। গুলশানে যে ঘটনাটি ঘটছে, তা আকস্মিক। এটা ঘটার কথা ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘নিহত ব্যক্তির দাফনের বিষয়ে আমাদের আইনগত বাধ্যবাদকতা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাদের বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে, হয়তো তাদের পরিবার নিতে চায়নি। তবে তাদের দাফন করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি সন্দেহে অভিযান চালিয়েছে। এরমধ্যে গত ৯ মাসে ভয়াবহ ২০টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এসব জঙ্গি আস্তানায় ৮শিশু, ৭নারী ও ৪৩ পুরুষ জঙ্গি নিহত হয়েছে।  সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন