যে কারণে ‘ইউপি’ প্রথম ধাপের ভোট বিজেপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ

ভারতের উত্তরপ্রদেশে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার জন্য আজ বৃহস্পতিবার থেকে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লির পশ্চিম সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে ভোট হচ্ছে এদিন। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ নামে পরিচিত অঞ্চলে যা ঘটে, তার ওপর ভারতের নির্বাচনের অনেক কিছু নির্ভর করার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিবিসির বিশ্লেষকরা।

গত সপ্তাহের কথা।

কনকনে শীত উপেক্ষা করে শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হাজারো সমর্থক উত্তর প্রদেশের মিরাট জেলার এক গ্রামের ছোট্ট মাঠে ভিড় করেছিল। পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে ট্রাক্টরে করে নিয়ে আসা বহু সমর্থক মাঠের বাইরে সমবেত হয়। বিজেপির পতাকা নিয়ে দলে দলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আসার অপেক্ষা করছিল তারা।

৪৯ বছর বয়সী যোগী আদিত্যনাথ গেরুয়া পোশাকে মঞ্চে ওঠার সময়, উপস্থিত জনতা তাঁর নামে স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানায়।

মাত্র ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন আদিত্যনাথ। ওই সময়ের মধ্যেই তিনি বিরোধীদের সমালোচনা করেন। তুলে ধরেন তাঁর বিদায়ী সরকারের অর্জনের কথাও।

সমর্থকদের কাছে যোগী জানতে চেয়েছেন, ‘আমি কি আপনাদের আশ্বাস পেতে পারি যে আমার প্রার্থীকে ভোট দেবেন?’ জনতা সমস্বরে ইতিবাচক জবাব দেয়।

যোগী আদিত্যনাথ সমাবেশ শেষে সভাস্থল ত্যাগ করার পর সমর্থকরা বলেন, তারা বিজেপিকে ভোট দেবেন। কারণ, দলটি কৃষকদের মঙ্গলের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্যও কাজ করেছে।

তবে এলাকাটিতে দলের জনপ্রিয়তার অবস্থা আসলেই কেমন তা নিয়ে কিছু সংশয়ের কারণ আছে। এ কারণেই হয়তো কালো জাম্পার কিংবা জ্যাকেট পরে সভায় আসা লোকজনকে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছিল। স্থানীয় একজন সাংবাদিক বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, আয়োজকরা ভয় পেয়েছিলেন- কেউ ওই পোশাককে কালো পতাকা হিসেবে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে প্রচারে তা কাজে লাগাতে পারে।

গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম উত্তর প্রদেশে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে যেখানে বিজেপির প্রার্থীদের লক্ষ করে কাদা ছোড়া, কালো পতাকা দেখানো এবং পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটেছে।

কেন উত্তর প্রদেশ গুরুত্বপূর্ণ?
২৪ কোটি জনসংখ্যার উত্তর প্রদেশ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য। এটা আলাদা দেশ হলে বিশ্বে জনসংখ্যার দিক দিয়ে পঞ্চম স্থানে থাকতো। চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ার পরেই থাকত উত্তরপ্রদেশ। এ রাজ্যটির জনসংখ্যা পাকিস্তান ও ব্রাজিলের চেয়েও বেশি।

ভারতের পার্লামেন্টে উত্তর প্রদেশ থেকে ৮০ জন সাংসদ স্থান পান। সে কারণে রাজ্যটিতে যারা জেতেন, তারাই সাধারণত ভারতের নেতৃত্ব দেন। সেই রাজ্যের মিরাট এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বৃহস্পতিবার (আজ) সাত ধাপের মধ্যে প্রথম দফার ভোট হচ্ছে। এ অঞ্চলে ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিজেপির জয়জয়কার ছিল। তবে এবার বিজেপি তত একচেটিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।

কৃষকরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রবর্তিত তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রতিবাদ করে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী একবছর রাজধানী কার্যত অবরোধ করে রাখে। নতি স্বীকারে বাধ্য হয় মোদি সরকার। সেই ইস্যুটি এবারের নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশে বিজেপিবিরোধী অন্যতম মুখে পরিণত হয়েছেন।   ২০১৭ সালের নির্বাচনে বিজেপি উত্তর প্রদেশে ৫০টির বেশি আসন পেয়েছিল। হিন্দু জাতীয়তাবাদের ধূয়া তুলে গতবার ভোটের বাক্স পুরেছিল বিজেপি। টিকায়েত তাঁর সমর্থকদের বলেছেন, যারা কৃষকদের অপমান করেছে, তাদের যেন ভোট দেওয়া না হয়। ওই অঞ্চলে তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমর্থক রয়েছে। বিজেপির সম্ভাবনাকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে টিকায়েতের সমর্থকরা।

এছাড়া আরেকটি কারণেও বিজেপি লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হতে পারে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংয়ের নাতি জয়ন্ত চৌধুরী। পারিবারিকভাবে ওই অঞ্চলে একটা দাবি রয়েছে তাঁর।

তাছাড়া ২০২০ সালের কৃষকদের বিক্ষোভের সময়ও তাদের পাশে ছিলেন জয়ন্ত চৌধুরী। সে কারণে কৃষকদের সমর্থন পেতে পারেন তিনি । নির্বাচনের জন্য জয়ন্ত সমাজবাদী পার্টির (এসপি) অখিলেশ যাদবের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন অখিলেশ।

এদিকে রাজ্যটিতে মুসলিম ভোটার ২৬ শতাংশ। মুসলিম, কৃষকসহ অন্যরা বিজেপির বিপক্ষে চলে গেলে নরেন্দ্র মোদির দলের বেকায়দায় পড়ার আশঙ্কা প্রবল।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ