যে কারণে আইভী আবারও জয়ী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন কোনও চমকপ্রদ আশ্বাস না দিয়েও সেলিনা হায়াৎ আইভী কেন নির্বাচনে এগিয়ে, তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সারাদিনই মুখর ছিল। নারায়ণগঞ্জবাসী বলছেন, নারায়ণগঞ্জের রাস্তা বড় করে ও নতুন রাস্তা তৈরির পাশাপাশি খালগুলো দখলমুক্ত করে নতুন নারায়ণগঞ্জ তৈরির চেষ্টা করেছেন আইভী।

 

এছাড়া আইভী তার কাজ ও ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তরুণ ভোটারদেরও আকৃষ্ট করতে পেরেছেন। ফলে এখনই তার বিকল্প কাউকে ভাবতে পারছেন না নারায়ণগঞ্জবাসী। আর নিরাপত্তার দিক থেকেও নারীদের জন্য ইতিবাচক কাজ করেছেন বলে ২ লাখ ৩৫ হাজার ২শ ৬৯ নারী ভোটারের বড় একটি অংশ গেছে তারই ঝুলিতে।

 

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (নাসিক) ১৭৪টি কেন্দ্রের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬১১ ভোট এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৪৪ ভোট।
কেন আইভী আবারও মেয়র নির্বাচিত হলেন, সে বিষয়ে কথা হয় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। ভোট দিয়ে এসে বাসায় বসে টেলিভিশন দেখতে বসা পূরবীর সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনোদিন এই নারায়ণগঞ্জ দেখব ভাবিনি। তিনি এত বড় বড় রাস্তা বানিয়েছেন যে, শহরের চেহারাই বদলে গেছে। এছাড়া আইভী আপা এমন সব জায়গা দিয়ে রাস্তা বের করেছেন যে, অবাক হয়ে ভাবি এও সম্ভব ছিল! যে মানুষটা কাজ করতে চাইছেন তাকে কেন কাজের জায়গা করে দেব না?’
আইভী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর কী কাজ করেছেন- জানতে চাইলে চাষাড়ার শাহীন বলেন, ‘নদীর পূর্ব পাড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ও একশ ফুট প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করেছেন তিনি। এই রাস্তা ছাড়াও শীতলক্ষ্যার পাড়ে প্রচুর ঘাটলা করা হয়েছে। এখন গোটা এলাকার চেহারাই বদলে গেছে।’
নগরীর সিদ্ধিরগঞ্জ ও নদীর পাড় কদমরসুল এলাকার বড় একটি অংশ রয়েছে ডিএনডি বাঁধের ভিতর। এই এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে প্রচুর ড্রেনের কাজ করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। এসব কাজও আইভীকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
এবারের নাসিক নির্বাচনের প্রচারণায় আইভী জানিয়েছেন, গত চার বছরে নাসিক এলাকায় সাড়ে চারশ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, জাইকা ছাড়াও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কাজগুলো করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এবারের নির্বাচনে জয়ী হলে এই কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দ্রুতই আরও কাজ হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। তার এই ঘোষণা মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করেছে বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জবাসীরা।
অভিযোগ রয়েছে, আইভী অপরিকল্পিত নগরী তৈরি করেছেন। তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
সে বিষয়ে জানতে চাইলে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হওয়ার মুখে নাসরিন জাহান বলেন, ‘এগুলোর বিপরীতে তিনি কী কী করেছেন তার একটা তালিকা দিন। নারায়ণগঞ্জ অপরিকল্পিত নগরী কেন হবে? নারায়ণগঞ্জ নতুন করে তৈরি হচ্ছে। এর জন্য সময় লাগবে না? উনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলো দৃশ্যমান। আমার সামনে বিকল্প নেই, ফলে এই কাজগুলো এগিয়ে নিতে তাকেই দরকার।’
নাসরিন জাহান আরও বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন অপরিচিত মুখ হিসেবে খারাপ করেননি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যিনি জনগণের জন্য কাজ করছেন এবং কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন, তাকেই মানুষ বেছে নেবে। এটাই স্বাভাবিক। নতুন ও অপরিচিত প্রার্থী হিসেবে সাখাওয়াত অনেক ভালো করেছেন।’
সকাল ৯টা থেকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত আইভীর নির্বাচনি মাঠ পরিদর্শকদলের সঙ্গে থেকে দেখা গেল- তরুণ, নারী এবং এমনকি প্রতিবন্ধী ভোটাররাও তাকেই বেছে নিতে চাইছেন। তরুণদের কাছে জানতে চাই, কেন আইভী আপনাদের চোখে এগিয়ে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে থাকা কিছু তরুণ তখন তাদের প্রিয় আইভী আপার সঙ্গে সেলফি তুলছেন।
তাদের একজন এগিয়ে এসে বললেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন, একজন মেয়র আপনার সঙ্গে এভাবে বড় বোনের মতো সাক্ষাৎ করছেন! পুরুষ মেয়রদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক লোভী মানুষ আশেপাশে এত বেশি থাকে যে, তিনি নিজে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই দিকটি বিবেচনায় আইভী আপা অবশ্যই এগিয়ে ছিলেন, থাকবেন।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন