‘যে অভিযোগে শোভন-রাব্বানী বাদ, সেই অভিযোগে ভিসির অপসারণ নয় কেন’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ না করার নিন্দা জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, যে অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শোভন-রাব্বানীকে বাদ দেয়া হয়েছে একই অভিযোগে ভিসিকে কেন অপসারণ করা হচ্ছে না।

মঙ্গলবার দুপুরে জাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পরে সংহতি সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শুধু নিজের মর্যাদাই ক্ষুণ্ণ করেননি তিনি অধ্যাপকের মর্যাদা ও এই পদকে কলঙ্কিত করেছেন। যে অভিযোগে শোভন-রাব্বানী পদ হারাল সেই অভিযোগে উপাচার্যকে কেন অপসারণ করা হল না? শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে ‘ঈদ সেলামি’ কাণ্ডেই দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ যখন হামলা করল তখন উপাচার্য কী করল? হামলা করা যদি ছাত্রলীগের দায় হয়ে থাকে তবে তিনি (উপাচার্য) কেন পদত্যাগ করলেন না?

দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করা আন্দোলনকারীদের দায়িত্ব সরকারের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্নীতির প্রমাণ করতে হয় তবে সরকারের পুলিশ, গোয়েন্দা ও অন্যান্য সংস্থা কী করে? যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্নীতির প্রমাণ করতে হয় তবে ধরে নেব দেশে কোনো প্রশাসন নেই।’

সংহতি সমাবেশে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, হল বন্ধ, ক্লাস বন্ধ, অনেকগুলো পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল সেগুলোও বন্ধ। শিক্ষার্থীদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হল এর জন্য কে দায়ী? আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সবাই জানি এর জন্য কারা দায়ী। এখানে মেগা প্রকল্প ঘিরে একটি দুর্নীতি হয়েছে- এটা অনেকটাই প্রমাণিত। আর এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর যে আন্দোলন শুরু করেছে তা সারা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জাবিতে যখনই অন্যায়, নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তখনই আন্দোলন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, এই ঘটনার একটি বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য ও মেরুদণ্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। এই তদন্ত কমিটি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন, সিনেট ও জাকসু নির্বাচন ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দায়িত্বে থাকলে ক্যাম্পাসকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমি আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। উপাচার্য এবং তার প্রশাসন পরাজয় মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। যদি তাদের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায়ের পথে থাকত তাহলে এমন করে ক্যাম্পাস বন্ধ করত না।’ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা তিনি আত্মসাত করেছেন। উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় ছাত্রলীগকে ঈদ সালামি দিয়েছেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে। সিনিয়র সহসভাপতি আল নাহিয়ান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।