যেভাবে দেয়া হলো সাত খুন মামলার রায়: ফাঁসি হলো যাদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আলোচিত সাত খুন মামলার রায় উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

খুব সকালে আদালতে পৌছানোর পর প্রধান ফটক থেকে শুরু করে এজলাস পর্যন্ত যেতে কয়েক দফা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয়। ঢাকার বাইরে কোন মামলার রায়ের জন্য এমন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ বিরল।

বিচারক আসার বেশ আগেই এজলাসকক্ষ গমগম করছিল সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের ভিড়ে। স্থানীয় সাংবাদিকদের বাইরেও প্রায় প্রতিটি বড় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা এসেছেন ঢাকা থেকে।

মামলার আসামীদের রাখার জন্য এজলাস কক্ষের ভেতর একটি খাঁচার মত একটি কক্ষ ছিল। ৯ টার আগেই বেশ কিছু আসামীকে সেই খাঁচার ভেতরে রাখা হয়। সাড়ে নয় টার মধ্যে মূল কয়েকজন আসামী বাদে গ্রেপ্তারকৃত সকল আসামীকেই সেই খাঁচায় রাখা হয়।

সকাল পৌনে দশটা নাগাদ এজলাসকক্ষে আনা হয় তিন সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেনেন্ট কমান্ডার মাসুদ রানা এবং সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেনকে। সকলকেই ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।

তবে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র নুর হোসনকে ঢোকানো হয় লোহার খাঁচার ভেতরে। তিনজন র‍্যাব কর্মকর্তাকে রাখা হয় খাঁচার বাইরে।

আসামীদের অনেককেই সেসময় বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

সকাল ১০ টার একটু পরেই এজলাসে প্রবেশ করেন বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন। এই মামলায় দায়েরকৃত দুটি মামলার অভিন্ন সংক্ষিপ্ত রায় পড়ে শোনান তিনি।

রায়ে ২৬ জন আসামীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন বিচারক। যাদের মধ্যে তিনজন র‍্যাব কর্মকর্তা এবং নুর হোসেনেরও নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৯ জন আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

রায় ঘোষণার সময় এই মামলার মোট ৩৫ জন আসামীর মধ্যে যে ২৩ জন কারাগারে ছিল তাদের সবাই এজলাসকক্ষে উপস্থিত ছিল।

মামলার একজন বাদী নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের সাথে রায়ের পর কথা হলে তিনি এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

প্রতিক্রিয়ায় মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী ওয়াজেদ আলী এই মামলাকে ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের পক্ষ থেকে রায়ের কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের উল্লাস মিছিল করতেও দেখা যায়।

 

ফাঁসি হলো যাদের:

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নূর হোসেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা (এমএম রানা), হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়ব,  কনস্টেবল মো: শিহাব উদ্দিন,  এসআই পুর্নেন্দ বালা,  র‌্যাবের সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার,  নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল, সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান, জামালউদ্দিন, সৈনিক আবদুল আলী, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, আলামিন শরিফ, তাজুল ইসলাম, এনামুল কবীর।

 
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহৃত হন।

 

 

২৮ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। ওই মামলায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান করে ৬জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাই বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় আরও একটি মামলা করেন। ৩০ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।   পরে স্বজনরা লাশগুলো শনাক্ত করেন।

 
তিন তদন্তকারী কর্মকর্তার ১১ মাসের তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৩৫জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এজাহারভুক্ত ৫ আসামি অব্যাহতির আবেদন করা হয়। সাত খুনের দু’টি মামলায় গ্রেফতার ২৩ জনের উপস্থিতিতে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে চার্জ গঠন করেন। পলাতক ১২ জনসহ সাত খুনের দুটি মামলায় অভিযুক্ত ৩৫ জনের সবার বিরুদ্ধেই চার্জগঠন করা হয়। ১২ জনের অনুপস্থিতিতেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের পক্ষে ৫জন আইনজীবী নিযুক্ত করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

সূত্র: বিবিসি বাংলা