যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের চ্যালেজ্ঞ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মার্কিন সামরিক উপস্থিতি জোরদারের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে যখন তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে ঠিক সেসময় একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। প্রথমে নাকচ করলেও পরে তার স্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটন যুদ্ধে জড়াতে চায় না বলেও জানিয়েছে। এমন অবস্থায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, পরমাণু সমঝোতার কিছু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন স্থগিত করে ইরান তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইরানকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। ইরানকে কোনোভাবেই দমাতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র।

বিবিসি জানায়, মার্কিন নৌবাহিনীর এমকিউ-ফোর সি ট্রাইটন মডেলের একটি ড্রোন ইরান ভূপাতিত করেছে।

ড্রোন নিয়ে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনাইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় প্রদেশ হরমুজগানের আকাশে অনুপ্রবেশকারী একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ড্রোনটি মার্কিন গোয়েন্দাদের বলে দাবি করেছে তেহরান।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানায়, প্রদেশের কুহে মোবারক এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি গ্লোবাল হক মডেলের একটি গোয়েন্দা ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে। ইরানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশকারী যেকোনো শক্র বিমান বা ড্রোন গুলি করে নামানোর যে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে তা তারা বাস্তবায়ন করেছে বলেও জানায় বিপ্লবী গার্ড।

এদিকে বুধবার ভূপাতিত করা ড্রোনটি যুক্তরাষ্ট্রের নয় বলে পাল্টা দাবি করেন মার্কিন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন বিল উরবান। তিনি বলেন, তাদের কোনো ড্রোন ইরানের আকাশে ওঠেনি। ফলে তা ভূপাতিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদিও পরে ওয়াশিংটনের র মধ্যেই ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ইরানকে কোনোভাবেই দমাতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন তার লক্ষ্য থেকে ইতোমধ্যে চ্যুত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রুহানি বলেন, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতার কিছু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ইরান প্রকৃতপক্ষে ছোটখাটো পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ‘ইরানের পরমাণু প্রতিশ্রুতি স্থগিত করা, যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার তুলনায় অনেক ছোট পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্র শুধু পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘনই করেনি বরং এর মূল চেতনাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সমঝোতার মূল চেতনা ছিল ইরান ও সারা বিশ্বের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য। সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপ শুধু মৌখিকভাবে সমঝোতা বাঁচিয়ে রাখার প্রতি সমর্থন দিয়েছে কিন্তু বাণিজ্য সুবিধা চালু রাখার বিষয়ে তেমন কিছু করেনি।’

গত ৮ই মে পরমাণু সমঝোতার কিছু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয়। এছাড়া বেশি মাত্রায় ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধ করার কথাও বলেছে। পাশাপাশি সমৃদ্ধ ইউরোনিয়াম মজুদের সীমা মানবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

এ অবস্থায় ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান নামদার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানকে ঠেকানোর মার্কিন বাসনা পূর্ণ করতে দেয়া হবে না। ইরানের তেল রফতানি শূন্যের কোঠায় নামাতে উঠেপড়ে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তারা ক্রেতাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আর ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি বলেন, গত বৃহস্পতিবার হরমুজ প্রণালীর কাছে দুটি তেলের ট্যাঙ্কারে হামলার ঘটনয় তেরহান জড়িত- ওয়াশিংটনের এমন বক্তব্য নিছক মিথ্যাচার। এটা যুক্তরাষ্ট্রের নীল নকশা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ অবস্থায় সংকট সমাধানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইরান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ব্রায়ান হুক।