যানজটে ভেঙ্গে গেল আরিফের স্বপ্ন

রেদওয়ানুল হক, রাবি:
‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে ভাই। বাবা মায়ের এত দিনের স্বপ্ন যানজট শেষ করে দিলো। যানজটের কারণে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের (ই ইউনিট) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। বিকেলে আরেকটা শিফটের পরীক্ষা। সেটাও ধরতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না। যানজট আমার স্বপ্ন শেষ করে দিল।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ¯œাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা আরিফ নামের এক ভর্তিচ্ছু কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন। আরিফের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীই যানজটের কারণে ‘ই’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।

জানা যায়, গত দুইদিনের বৃষ্টিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ওইদিন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে আসা অনেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীই যানজটে আটকা পড়েন। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই ভর্তি পরীক্ষা অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত হন। ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও চলমান রাস্তা সংস্কারের জন্য এমন দূর্ভোগের শিকার হন ভর্তিচ্ছুরা।

ঢাকা থেকে আসা এক ভর্তিচ্ছু রেজাউল বলেন, ‘প্রতিবছরই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষার সময়সূচি খুব কাছাকাছি সময়ে নির্ধারণ করে। এতে একটির পরীক্ষা দিলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা। রাজশাহীর পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আবার চট্টগ্রামে যেতে হবে। এ সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

ভর্তিচ্ছু আরিফ বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে রাত ১০ টায় বাসে উঠি। সকাল ৯ টায় এখন আমি সিরাজগঞ্জে আছি। আমাদের বাসে আরও ২০ জন আছে যারা রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। তাদেরও একই অবস্থা।’

ময়মনসিংহ থেকে আগত আরেক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ বলেন, ‘আমি বিশ^বিদ্যালয়ের মেইন গেটে গাড়ি থেকে নেমে তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষা দিতে যাই। পাঁচ মিনিট দেরি হওয়ায় আমাকে পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয়নি।’

ক্যাম্পাস ঘুড়ে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা কয়েকজন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। অভিভাবকেরাও রয়েছেন দুঃশ্চিন্তায়। তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যানজটের কারণে শেষ হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি কোনভাবেই মানতে পারছেন না তারা। তাদের অভিযোগ- ‘মূলত সড়কগুলোর সঠিক সংস্কার না হওয়ায় তাদের এত বড়ো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ই-১’ ইউনিটের পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে অনুপস্থিতির সংখ্যা ছিল খুব অল্প। বেশি হলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতাম।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘পরীক্ষার হলগুলো আমরা ঘুড়ে দেখেছি। প্রায় ৯০ ভাগেরও বেশি শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’

 

স/আ