যশোরে শিশুর মরেদহ আতঙ্কে ফেলে যায় স্বজনরাঃ পরীক্ষা ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

করোনা সন্দেহে যশোরে মৃত শিশুর মরদেহ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আতঙ্কে মরেদহ ফেলে যাওয়া স্বজনদের শনাক্ত করে সোমবার (৩০ মার্চ) দুপুরে মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু চিকিৎসকের দাবি, পরীক্ষা ছাড়া লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া ঠিক হয়নি। অবশ্য সিভিল সার্জনের দাবি, এই রোগীকে নিয়ে কোনও ধরনের শঙ্কা নেই।

রোববার বিকেলে জ্বর সর্দি কাশি নিয়ে আসা ওই শিশুকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর আজ ভোরে শিশুটি মারা যায়। মৃত্যুর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আইইডিসিআরের সাথে যোগাযোগ করার পর তথ্য জেনে নমুনা পাঠানোর প্রয়োজন নেই বলে তারা জানিয়ে দেয়। এরইমাঝে আতঙ্কে শিশুর স্বজনরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নিয়ে শিশুটির স্বজনদের শনাক্ত করে দুপুরে তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যাওয়া শিশুর মরদেহ পরীক্ষা ছাড়া স্বজনদের কছে হস্তান্তর করা ঠিক হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে যশোরে কর্তব্যরত কয়েকজন চিকিৎসক নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরীক্ষা ছাড়া করোনার মতো ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজনকে স্বজনদের কাছে দেওয়া মোটেও যুক্তিযুক্ত হয়নি। এরফলে সোশ্যাল ট্রান্সমিশনের একটা শঙ্কা থেকেই যায়।

জানতে চাইলে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, ওই শিশুটিকে হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ভর্তি করা হয়েছিল। তার নিউমোনিয়া প্রবলেম ছিল। আমরা আইইডিসিআরে বিষয়টি জানালে তারা স্যাম্পল পাঠাতে নিষেধ করে। কেননা করোনা পরীক্ষার জন্যে ওই শিশুর বেশকিছু নমুনা অনুপস্থিত ছিল। যেমন, তার বয়স ১২ বছর এবং সে কোনও বিদেশফেরত মানুষের সংস্পর্শে যায়নি।

কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি রোগীর রক্ত পরীক্ষা ছাড়া বলা অসম্ভব। প্রত্যেক মানুষই যেকোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার কার্ডিওরেসপেক্টরি ফেইলিওর হয়। করোনা আক্রান্তের মৃত্যুতেও কার্ডিওরেসপেক্টরি ফেইলিওর হয়। ফলে নির্দিষ্ট রোগ শনাক্তে পরীক্ষা নিরীক্ষার কোনও বিকল্প নেই।

শনাক্ত ছাড়া মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরে কোনও শঙ্কা থেকে যায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে হলে- পরীক্ষা করতেই হবে। আর করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা এখন ঢাকার বাইরে কেবল চট্টগ্রামে চালু হয়েছে। খুলনাতে চালু হতে এখনও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ওই শিশুর মরদেহ হস্তান্তরের সময় করোনা রোগী সৎকারের বিধিবদ্ধ নিয়মগুলো তার স্বজনদের বলে দেওয়া হয়েছে। যেমন- তারা যেন নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কমসংখ্যক মানুষ জানাজা এবং দাফনের সময় উপস্থিত থাকেন।

এতকিছুর পরও সোশ্যাল ট্রান্সমিশনের শঙ্কা থাকছে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে টেস্ট ছাড়া সন্দেহ কাটানোর কোনও বিকল্প পথ নেই।

অবশ্য যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেছেন, এই রোগীর ক্ষেত্রে কোনও প্রকার শঙ্কা নেই। কেননা রোগীকে যে ডাক্তার দেখেছেন- তার তথ্য মতে, শিশুটি নিউমোনিয়ায় মারা গেছে। এরপরও আইইডিসিআরের সাথে তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। তারাও এই শিশুকে করোনা আক্রান্ত নয় বলে জানিয়েছে।