ময়নার বাচ্চা দেখাতে নিয়ে গিয়ে প্রাণপাখিটাই উড়িয়ে দিলো ঘাতক

বিলাস ছড়া চা বাগানের সিএনজি অটোরিকশার চালক শিবু গড়ের একমাত্র সন্তান পাঁচ বছর বয়সী রিমন গড়। সন্তান নিয়ে সুখেই চলছিল শিবু গড়ের সংসার। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে শিবু গড় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কেনেন। নিজের একমাত্র সন্তানের নামে সিএনজির নাম দেন রিমন পরিবহন। এই সিএনজির ব্যাটারি চুরিকে কেন্দ্র করে একই এলাকার ইউনুছ উল্লাহর সঙ্গে শিবু গড়ের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

স্থানীয় বিচার সালিশে ইউনুছ উল্লাকে ব্যাটারি চুরির দায়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু ইউনুছ উল্লাহ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে শিবু গড়ের সঙ্গে তার মনোমালিন্য বাড়তে থাকে। টাকা না দিলে শিবু গড় তার নামে মামলা করবেন বলে হুমকি দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ইউনুছ উল্লাহ।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুরে ছোট্ট রিমন দুধ আনতে গেলে ছড়ার পাশে ইউনুছ উল্লাহর সঙ্গে তার দেখা হয়। ইউনুছ উল্লাহ রিমনকে ময়না পাখির বাচ্চা দেয়ার কথা বলে চা বাগানের ৪নং সেকশনের ছড়ার পাশে নিয়ে যায়। রিমনও ময়না পাখির বাচ্চা পাবে বলে বেজায় খুশি। ইউনুছ উল্লাহ তাকে ছড়ার দিকে ইশারা করে বলে ওইখানে ময়না পাখির বাচ্চা।

অবুঝ রিমনও ময়না পাখির বাচ্চা দেখার জন্য যেই না মাথা উঁচু করে ঘুরে তাকায় ঠিক তখনই হিংস্র ইউনুছ উল্লাহ রিমনের গলায় দা দিয়ে কোপ মারে। এ পৃথিবী থেকে হিংস্রতার বলি হয়ে বিদায় নেয় শিবু গড়ের আদরের ধন রিমন।

Rimon-1

খুনি ইউনুছ উল্লাহ মৃত্যু নিশ্চিত করে রিমনের দেহ ছড়ার নিচে ঝোপের মধ্যে ফেলে চলে যায়। এদিকে দীর্ঘ সময় সন্তান ঘরে না ফেরায় শুরু হয় রিমনকে খোঁজাখুঁজি। শিবু গড় বাসায় ফিরে এলাকার লোকজন নিয়ে রিমনকে খুঁজতে বের হন। খুঁজে খুঁজে যখন সবাই দিশেহারা তখনই ছড়ার মাঝখানে কিছু ছোট্ট গাছের ডালপালা কাটা দেখে থমকে দাঁড়ায় সবাই, ঝোপের নিচে উঁকি দিয়ে দেখতে পায় ছোট্ট রিমনের নিথর দেহ।

এ সময় রিমনের মা-বাবার আর্তনাদ আর প্রতিবেশীদের হাহাকারে ভারী হয়ে ওঠে বিলাস ছড়া গাঙ পাড়ের বাতাস। পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

শিশু রিমনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ইউনুস আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার (১ জুলাই) সকালে মৌলভীবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযুক্ত ইউনুস মিয়া তার জবানবন্দি দেন। আদালতের বরাত দিয়ে জাগো নিউজকে ঘটনার বিবরণ জানান শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান।

তিনি জানান, ঘটনার পরই পুলিশের একটি বিশেষ টিম পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদের নির্দেশে সম্ভাব্য অপরাধীকে খুঁজতে থাকে। পুলিশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পারে। এক পর্যায়ে জানা যায় ইউনুছ উল্লাহকে দুপুর দুইটার দিকে চার নম্বর সেকশনে ডিউটি করতে দেখেছে অনেকে। শুরু হয় ইউনুছ উল্লাহকে খোঁজা। এক পর্যায়ে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় ওই দিন রাতে ইউনুছ উল্লাহকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

শুরু হয় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাসাবাদে ইউনুছ উল্লাহ স্বীকার করে সিএনজির ব্যাটারি চুরির সালিশের জের ধরে শিবু গড়ের উপর প্রতিশোধ নিতে রিমনকে হত্যা করেছে সে। পরবর্তীতে ইউনুছ উল্লাহকে বুধবার আদালতে পাঠানো হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

পুলিশ সুপার বলেন, ইউনুছের আক্রোশের বলি রিমন। সে পৃথিবীর রূপ দেখেনি, দেখেনি ভালোবাসা কিন্তু মানুষের হিংস্রতা দেখেছে। এই হিংস্রতাই কেড়ে নিয়েছে নিষ্পাপ শিশু রিমনের জীবন। ওপারে ভালো থাকুক রিমন, আমরা রিমনকে বাঁচাতে পারিনি কিন্তু রিমনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। ইনশাল্লাহ সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাবে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ