মে দিবসের কাছে সভ্যতার যা ঋণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বৃষ্টির সঙ্গে প্রকৃতির যা সম্পর্ক, মজুরির সঙ্গে সমাজের সম্পর্ক প্রায় তেমনই।

 

বৃষ্টির কথাই আগে বলি। সাগর-খাল-বিল-নদী-নালা-পুকুরের জল রোদের তাপে বাষ্প হয়। সবচে বেশি বাষ্প আসে কোত্থেকে? সমুদ্র থেকেই।  বাষ্পের উড়ন্ত কণাগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে পরিণত হয়  মেঘে। সেই মেঘগুলো মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে ভেসে একসময় নিজেদের অতিরিক্ত ভারেই নেমে আসে নীচে। যেমন পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মেঘেরা তুমুল ধারায় নামে চেরাপুঞ্জিতে—সেখান থেকে ঢলের মতো চলে আসে বাংলাদেশের হাওরে। এমনি ভাবে ঢল আসে পদ্মায়, ব্রহ্মপুত্রে, তিস্তায়। এই যে মেঘেরা নেমে আসে,  সর্বত্র পুনর্বণ্টিত হয়, মাঠ-ঘাট-বাড়ি-ঘর-ক্ষেত-খামার-নগর-বন্দর সবাইকে ভিজিয়ে জলসিক্ত করে, সেই হাওর-বাওড়-নদী-খাল-বিল-পুকুর সবাইকে পুনর্ভরাট করে আবার ফিরে আসে লবণাক্ত সাগরে। সাগরের পানি আবারও সাগরেই ফিরে আসার এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় পানিচক্র— সবাই জানি।

 

এটাও তো সবার জানা, পানি চক্রটা টিকে আছে বলেই মাটিতে রস আসে, গাছেরা এই রসে দ্রবীভূত মাটির পুষ্টি সংগ্রহ করে সবুজ হয়, সঞ্চিত পুষ্টিতেই আগে পরে তারা ঋতু অনুযায়ী ফুল ফোটায়, ফল-ফসল হয়। ভ্রমর আর মৌমাছিরা আসে মধুর লোভে, পরাগায়ন ঘটায়, পাখিরা খাদ্য পায়। পানি চক্রের কল্যাণেই প্রকৃতি শুধু সবুজ হয় না, বর্ণিল হয় না, মানুষসহ প্রতিটি প্রাণ বেঁচেও থাকে। এই যে ধন-ধান্যে-পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, এখানে পাখিরা গান গায়, গাছেরা সবুজ, মানুষেরা উৎপাদন করে, ফুলেরা রঙিন— এই কোনো কিছুই ঠিকঠাক থাকবে না পানির চক্রটায় গোলমাল বাধলে, পানির প্রবাহে ঘাটতি হলে। যদি সূর্যের তাপ কমে গিয়ে পানি বাষ্প না হয়, যদি নদীগুলো আটকা পরে পানি সমুদ্র পৌঁছুতে না পারে, যদি পুকুর-বিল-হাওরগুলো উধাও হয়ে পানির প্রয়োজনীয় সঞ্চয়টুকু না হয়— প্রকৃতি ধূসর হতে থাকবে, পাখির গান বিরল হবে, ফুলেরা উঁকি দেবে না, পোকা-মাকড়ের দেখা মিলবে না।

 

পুঁজিবাদী একটা সমাজে মজুরি কাছাকাছি একটা ভূমিকাই পালন করে। মজুরি হলো উৎপাদনের খরচের সেই অংশ, যা শ্রমিকরা পান বেতন হিসেবে। উৎপাদনের বাকি খরচ (কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি) আর মজুরি বাদ দিয়ে, এবং তার সঙ্গে কর/রাজস্ব খাজনা যুক্ত করে বাকি যা থাকে তা হলো মালিকের লাভ। যেকোনো সমাজে দেখা যাবে  মালিকেরা সংখ্যায় খুবই কম। মজুরের সংখ্যাটা বিশাল। যেমন বাংলাদেশেই, পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য সংখ্যা হাজার পাঁচেকেরও বেশ কম। ওদিকে মজুরের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না, এ দেশে এই প্রায় ৫০ লাখ মজুর আর বিপরীতে মোট পাঁচ হাজার মালিক— কারা তৈরি পোশাকের দামের বড় অংশটা পায়। হয়তো মাত্র পাঁচ হাজার মালিক মজুরদের মোট আয়ের চেয়ে বেশি মুনাফা করে, বা হয়তো কাছাকাছি কিছু একটা। কিন্তু এই যে ৫৩০০ টাকা ন্যূনতম আয়ের মজুর, অর্থনীতির জলচক্রের যেটুকু রস তার কাছে আসছে, তা দিয়েই তাকে ঘরভাড়া দিতে হয়, খাবার কিনতে হয়, পোশাক কিনতে হয়, চিকিৎসার খরচ জোগার করতে হয়। বোঝাই যায়, মাসে তার আয় সব মিলে হাজার দশেক হলেও কোন মতে কায়ক্লেশে তাকে চলতে হয়। শরীরের যেটুকু শক্তি সে খরচ করে, তার পুনর্ভরন হয় না, শরীরটাই বরং ক্ষয় পেতে থাকে। সন্তানের শিক্ষা ঠিক মতো হয় না, পুষ্টিও না। শিল্পসাহিত্য? বিনোদন? কীভাবে, কোত্থেকে?

 

২.

বৃষ্টির সব পানি যদি একখানে আটকে রাখা হয়, পানিবঞ্চিত প্রকৃতির যা দশা হবে, মুনাফার প্রায় সবটা সুফল যদি মালিকদের ঘরেই চলে যায় শ্রমিকদের দশা তার চেয়ে ভালো কিছু হবে না, সে না হয় বোঝা গেল। কিন্তু এই মালিক-শ্রমিকের বাইরে যে সমাজ, তার কী হয়? তাদের দশাও ভালো কিছু হয় না, কেননা শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে সমাজের বাকিরা তাদের থেকে আর কোনো রসদ সংগ্রহ করতে পারে না। যেমন, পাঁচ হাজার মালিক প্রত্যেকে নিজের জন্য ১০০ করে জামা কিনলেও মাত্র পাঁচ লাখ জামার চাহিদা তৈরি হয়, যদিও এই জামার প্রতিটা তারা বাইরে থেকেই কিনতে খুশি হবেন, তাদের জামার চাহিদার জন্য দেশে উৎপাদন সামান্যই বাড়বে। কিন্তু ৫০ লাখ পোশাক শ্রমিক যদি পরিবারের সবার জন্য মাত্র চারটা করে বাড়তি জামা কিনতে পারত, দেশে এই মুহূর্তে তবে তৈরি হয় দুই কোটি বাড়তি জামার চাহিদা। একই রকম ভাবে জুতার-চশমার-খেলনা-খাবার-বিলাসসামগ্রী-প্রসাধন— তার তো কিনতে ইচ্ছে করে মায়ের জন্য, বাবার জন্য, ছেলেমেয়ের জন্য। বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের চাহিদা এখন এত কম বলে, পেটে-ভাতে তাদের থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে বাংলাদেশে বাকি সব উৎপাদনি খাতেও চাহিদা এত কম। এবং এই চাহিদা বহু গুণ বৃদ্ধি পেতে যদি একদিকে মজুরি বাড়ত, আরেকদিকে সেই পণ্যগুলো দেশেই উৎপাদনের জন্য সুরক্ষা-কর থাকত। পোশাক শ্রমিক আর কৃষকরা এই দেশে লোকসানি জীবন যাপন করছেন বলেই কিন্তু বাংলাদেশে উৎপাদনি খাত তাই বিবর্ণ।

 

বিবর্ণ তাই বাংলাদেশে শিল্পসাহিত্যও। প্রাকআধুনিক কৃষিজীবী বাংলায় লোকসাহিত্য আর সঙ্গীত এত অসাধারণ আর প্রাণকাড়া, তার একটা বড় কারণ নিতান্তই খারাপ বছরগুলো বাদ দিলে অমন গান, অমন সাহিত্য তৈরি করার মতো মানুষগুলোকে ভরণপোষণ গ্রামীণ সমাজ করতেই পারত সহজে, ছিল সেই রকম অবসরও। গায়ক, শিল্পী, কবিয়ালের তাই টিকে থাকার জন্য ততটা দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। কৃষি অলাভজনক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকের সঙ্গে লোকশিল্পীর মিথোজীবীতার সম্পর্কে বাঁধা গ্রামীণ শিল্পের শক্তিও ফুরিয়ে এসেছে।

 

৩.

কিন্তু বিশ্বজুড়েই আধুনিক শিল্পসাহিত্যের একটা বড় বাজার যেমন মধ্যবিত্ত, তেমনি আরো বড় জনপ্রিয় সাহিত্যের বাজার তো শ্রমিকরাও। সামান্য হলেও শিক্ষার গুণে নিজে যেমন সে কিছু পড়ে, তেমনি সাধ্য থাকলে তার সন্তানের জন্যও কিনে নেয় বইপত্র। শ্রমিকদের জীবন, তাদের স্বপ্ন, তাদের টানাপড়েন, তাদের সংগ্রাম, তাদের আশা এবং ভালোবাসাও তখন সাহিত্যের উপজীব্য হয়ে উঠতে থাকে। তার নিজের শ্রেণি থেকে লেখকদের, কবিদের, বিজ্ঞানীদের, চিন্তাবিদদের আবির্ভাব ঘটতে থাকে। চিন্তার জগত বর্ণিল হয়, চিন্তার ধারাজল অভিজাতের সৌখিন কামরা ছাপিয়ে পৌঁছে যায় সমাজের সর্বত্র। এরই স্পর্শগুণে সহিষ্ণুতা বাড়ে, বৈচিত্র্য আসে, আসে নতুন গান, ওদিকে ঘটে ঐতিহ্যেরও বিস্তার। প্রজারা নাগরিক হয়ে ওঠে, আত্মঅধিকার বিষয়ে যেমন অধিকার সচেতন হয়, ওদিকে পরের ব্যক্তিগত বিষয়টা নিয়েও সচেতনতা আসে। সমাজে সব স্বার্থই কথা বলতে পারে, তর্ক তুলতে পারে, চিন্তার প্রকাশ ঘটাতে পারে। বেশির ভাগকে আর দমন করতে পারে না সংখ্যাল্প।  ভাষারও শক্তি বাড়ে, শিল্পের ডালপাতা বিস্তৃত হয়।

 

এর অভাবে, সাধারণ মানুষ যখন পাঠক নন, হয়ে ওঠার কোনো লক্ষণও যখন না থাকে, সংস্কৃতিতে চিন্তাশীলতা কমতে থাকে, সাহিত্যিকদের মাঝে খুদকুঁড়োজীবীরাই প্রাধান্যে চলে আসে, উচ্চবিত্তের কোনো না কোনো অংশের পিঠচাপড়ানি পায় মোসাহেবরা। সাধারণ মানুষ পাঠক হিসেবে জন্ম না নিতে থাকলে, তাদের প্রতি দায়বোধ যেমন কমে যায়, কমে জবাবদিহিতাও। মন্ত্রী-সচিব আর ক্ষমতাসীনদের কার সঙ্গে কার যোগাযোগ তাই দিয়ে তখন নির্ধারিত হবে কে কত বড় সাহিত্যিক। আর অন্যদিকে সংস্কৃতির বদ্ধজলে আটকা পড়া, অবসরহীনতায় ভোগা, বিনোদনের রসবঞ্চিত জনগণকে গ্রাস করার চেষ্টা করে প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার থাবা। ক্ষুদ্রতা-দীনতা আর মেকি সংস্কৃতি এবং প্রাণহীন সাহিত্য যুগ বৈশিষ্ট্য হয়ে দেখা দেয়।

 

এই কারণেই, শ্রমিকের বাঁচবার, আরো অগ্রসর হয়ে বললে শ্রমিকের মুক্তির প্রশ্নটি সমাজে বাকি সবারও বাঁচবার এবং মুক্তির প্রশ্ন অবিচ্ছেদ্য।  শ্রমিকের জীবন যদি শুকিয়ে আসতে থাকে, সমাজে বাকি সবার জন্যও তখন উৎপাদন আর কর্মসংস্থানের পরিবেশ সঙ্কুচিত হতে থাকে। আটকে রাখা জলে যেমন পানি বিষাক্ত হয়ে যায়, ওদিকে বাকি অংশটাও বিবর্ণ শুকনো হতে থাকে, সম্পদের আটকাবস্থাও সমাজে একটা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে, ওদিকে জীবনকেও শুকিয়ে আনে। মজুরি আর মুনাফার এই সম্পর্কের চক্রটি এমনকি সম্পদশালী দেশগুলোর জন্যও সত্য, সম্পদ যত বেশি কুক্ষিগত হতে থাকবে, শাসনে তত প্রকট হবে চরম প্রতিক্রিয়াশীলতা আর নৈরাজ্য, শিল্পসাহিত্য আটকা পড়বে গোলকধাঁধায়।

৪.

পানিচক্র যেমন প্রকৃতির সবুজ থাকার,  বর্ণিল থাকার নিয়ামক- মজুরির চক্রও তেমনি সমাজের প্রাণচঞ্চল-উচ্ছ্বল থাকার, আরো বিকশিত হওয়ার এবং নতুনতর, উন্নততর সভ্যতা গড়ার পূর্বশত।  চলচ্চিত্র কি আর কোনোদিন বিকশিত হতে পারবে, তাদের জীবনকে উপজীব্য হিসেবে একেবারে বাদ দিয়ে? তাদের দর্শক না বানিয়ে? অসম্ভব। বাংলাদেশের কবিতা-উপন্যাস-চলচ্চিত্র-বিজ্ঞান আন্দোলন সব ক্ষেত্রেই বদ্ধজল কাটাবার এই একটিই নিদান, অন্তত সমাজের এই স্তরে—এবং এটা যত দেরিতে ঘটবে, অক্ষম হতাশা তত ঘনীভূত হতে থাকবে।

 

এমন একটা সমাজে একদম ভালো কিছু হবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কিন্তু এটুকু বলা যাবে যে, সম্ভাবনার সামান্যই বিকাশ ঘটবে সেখানে। কিন্তু এই জীবনে সৌন্দের্যর ক্ষুধা যে মারাত্মক, তা সত্যিকারের কবিদের সংবেদনে কখনো এড়ায়নি। সৌন্দর্যের জন্য এই মানুষের আকুতি আর তাকে অর্জনে ব্যর্থতার পরিণতির নৈরাজ্য জয় গোস্বামীর ভাষায় :

 

“বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপ চারা।
কিন্তু পুঁতব কোথায়? ফুল কি হবেই তাতে?
সে অনেক পরের কথা টান দিই গঞ্জিকাতে।

 

আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে?
আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে।
মাঝে মাঝে চলেও না দিন বাড়ি ফিরি দুপুররাতে ;
খেতে বসে রাগ চড়ে যায় নুন নেই ঠান্ডা ভাতে।
রাগ চড়ে মাথায় আমার আমি তার মাথায় চড়ি,
বাপব্যাটা দুভায়ে মিলে সারা পাড়া মাথায় করি।
করি তো কার তাতে কী? আমরা তো সামান্য লোক।
আমাদের ভাতের পাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”

 

Top of Form

এমন আর একটা সমাজেই শেরিফ ব্যাটাকে গুলি করার কারণ লিখেছিলেন বব মার্লে: ‘জন ব্রাউন আমাকে করতো ঘৃণা/ কেন, আমি তার কারণ জানি না/ যতবার, যতবার আমি বুনতাম বীজ/ বলতো সে, মেরে ফেল ওটা/ ওগুলো মেরে ফেল, বাড়তে দিও না’। অদ্ভুদ নয় যে,  ঊনিশ শতকের জার্মান কবি হাইনেও পিতৃভূমিকে অভিশাপ  দিতে গিয়ে, সেখানে সম্ভাবনাগুলোকে কীভাবে পিষে ফেলা হয় করা হয় তার প্রকাশ ঘটাতে প্রকৃতির একই অনুষঙ্গের আশ্রয় নেন :

 

‘আর অভিসম্পাত পিতৃভূমিকে, মিথ্যে সে ভালোবাসা,
দেয়নি তো সে অন্য কিছুই, শুধু অপমান আর লাঞ্ছনা
কলিরা যেখানে ফোঁটার আগেই দলিত হবে জানা
কদর্য যে ভূমিতে কীটরোই শুধু বাড়ন্ত অতি খাসা,…  তাই বুনে যাই তাঁত, বিরাম নেইকো কোনো।

“তাঁত ঘোরে বনবন, মাকু ছোটে সাইসাই মুছে দিতে এই পাপ;
চোখে নেই ঘুম, নিদ্রাবিহীন হাতে
পুরোনো জার্মানি, তোমার কফিন বুনছি মোদের তাঁতে
আর তাতে বুনি তিন অভিশাপ;…  তাই বুনে যাই তাঁত, বিরাম নেইকো কোনো।’

 

মে দিবসে শ্রমিকরা লড়াই করেছিল, প্রাণ দিয়েছিল আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিনোদন আর আট ঘণ্টা বিশ্রামের অধিকারের জন্য। সমাজের বৃহদাংশই শ্রমিক, আট ঘণ্টা ঘুমাবার অধিকারক তারও আছে। আট ঘণ্টা শ্রমে সংসার চালিয়ে যদি বাকি আট ঘণ্টা তারা বিনোদনে ব্যয় করতে পারে, তবেই তাদের যতটুকু  মঙ্গল হবে, তার সংস্কৃতি আর জীবন-মানের যে উন্নতি ঘটবে, চাহিদার বৃদ্ধির ফলে যে উৎপাদনের সমৃদ্ধি ঘটবে— সমাজের ওপর তার সামগ্রিক মাঙ্গলিক প্রভাব বহু শত সহস্রগুণে বর্ধিত আকারে ফিরে আসবে। মে দিবসে শ্রমিকরা সমাজকে এইভাবে সভ্যতার নতুন একটি স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সংগ্রাম করেছিল এবং তাদের সংগ্রামের ফল অনেকখানি অর্জিতও হয়েছে। যদিও এই সংগ্রামে আগুপিছু আছে, আছে জয়-পরাজয়। কিন্তু এই আকাঙ্ক্ষার পিছু হটা নেই।

 

মে দিবসে প্রাণ দেওয়া সেই শ্রমিকদের প্রতি তাই শ্রদ্ধা জানাই, ভালোবাসা জানাই তাদের পূর্বসূরী এবং তাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে আজও যারা শ্রমিকদের মুক্তির জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে, তাদের সাবইকে—সমাজ যতটুকু সবুজ আর প্রাণবান, তার বড় অংশটা তাদেরই অবদান। আমরা স্মরণে রাখি-বা-নাই-রাখি, গণতান্ত্রিক অধিকার বলতে আমরা যা কিছু বুঝি, নির্বাচনের অধিকার, নারীর অধিকার, শিক্ষার অধিকার, সাম্যের অধিকার—প্রতিটিই তারা উপহার দিয়েছে রক্ত আর ঘামে মাখামাখি সংগ্রামে।

 

লেখক : সদস্য, রাজনৈতিক পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন

সূত্র: এনটিভি