শনিবার , ২৭ আগস্ট ২০১৬ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

স্বর্ণজয়ী মেয়েকে নিয়ে আর দুর্গাপুরে ফেরা হলো না মামুনের

Paris
আগস্ট ২৭, ২০১৬ ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রিও অলিম্পিকে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে স্বর্ণপদক জেতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশ অ্যাথলেট মার্গারিতা মামুনকে নিয়ে তার বাবা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আল মামুন গ্রামের বাড়ি ঘুরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ইচ্ছে আর পূরণ হলো না মামুনের।

 

মৃত্যুর আগে মেয়েরে সাফল্য দেখে যেতে পারলেও তাকে নিয়ে রাজশাহীর দুর্গাপুরের গ্রামের বাড়িতে এসে ঘুরে যাওয়ার যে স্বপ্ন ছিল, সেটা আর বাস্তবায়ন করতে না পেরেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন মামুন।

প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার রাশিয়াতে তিনি মারা যান বলে তাঁর স্বজনরা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। আগের দিন বৃহস্পতিবারই মস্কোর ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে ফুলেল সংবর্ধনা পেয়েছেন মার্গারিতা। নিজ হাতে মার্গারিতাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানজনক ব্যাজও পরিয়ে দেন পুতিন।

index

মার্গারিতার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুনের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ক্ষিদ্রকাশিপুরে। তাঁর স্ত্রী সাবেক রিদমিক জিমন্যাস্ট আন্না। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার মস্কোতে থাকেন।

 

মামুনের মামা ও দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আশরাফুল কবির বুলু জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সময় গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় মস্কোতে নিজ বাসায় মারা গেছেন মার্গারিতার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন। রাশিয়াতেই তাঁর লাশ দাফন হবে। তাঁর মৃত্যুতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গভীর শোক জানিয়েছেন।

034157kalerkantho-27-08-16-NS-30

আশরাফুল কবির আরো জানান, মামুনের লাশ দেশে আনা হবে না। মস্কোতেই তাঁর লাশ দাফন করা হবে। মামুনের পরিবারকে বাড়িসহ আরো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

 

মামুনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তাঁর রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ক্ষিদ্রকাশিপুরের গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সন্ধ্যার পর থেকেই স্বজন, প্রতিবেশী ও আশপাশের গ্রামের মানুষ বাড়িতে আসতে থাকে। তারা মামুনের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেয়।

 

মামুনের ফুফাতো ভাই শামসুজ্জোহা জানান, তাঁর ভাই কিছুদিন ধরে মস্কোতে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অসুস্থতার কারণে মামুন তিন বছর ধরে গ্রামের বাড়িও আসতে পারেননি। অথচ এর আগে প্রায় প্রতিবছরই তিনি বেড়াতে আসতেন। মেয়ে মার্গারিটা স্বর্ণ জয়ের পরে তাকে নিয়ে আবার গ্রামের বাড়ি ঘুরে যেতে চেয়েছিলেন মামুন। কিন্তু সেটি আর হলো না।

 

পরিবারের সদস্যরা জানান, চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মামুন দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। এখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি ভর্তি হন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে। এরপর শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ১৯৮৩ সালে রাশিয়ায় চলে যান মামুন। সেখানে বিয়ে করেন রুশকন্যা আন্নাকে। মামুন-আন্না দম্পতির ঘরে ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর মস্কোতে জন্ম নেন মার্গারিতা। ফিলিপ আল মামুন নামে তাঁদের এক ছেলেও রয়েছে।

 

গত ২০ আগস্ট গভীর রাতে ব্রাজিলের রিওতে অলিম্পিকে মার্গারিতা সোনা জয় করেন।

e0a6aee0a6bee0a6b0e0a78de0a697e0a6bee0a6b0e0a6bfe0a69fe0a6be1

স্পোতনিকনিউজ জানায়, মস্কোর ক্রেমলিনে বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাশিয়ার হয়ে অলিম্পিকে পদকজয়ী সবাইকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সময় পুতিন ঘোষণা দেন, পদকজয়ী প্রত্যেককে একটি করে বিএমডাব্লিউ গাড়ি ও নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে।

 

মার্গারিতা মামুনরা কঠিন সময়ে রাশিয়াকে এনে দিয়েছেন অলিম্পিকের সাফল্য। যেখানে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডসহ কয়েকটি ইভেন্টে রুশরা ছিল নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রের সহায়তায় ড্রাগ নিয়ে খেলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়েও রিওতে ৫৬টি পদক জিতে পদক তালিকায় চতুর্থ স্থানে থেকে গেমস শেষ করেছে রাশিয়া। জিতেছে ১৯টি সোনা, ১৮টি রুপা ও ১৯টি ব্রোঞ্জ। রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের ব্যক্তিগত অল-রাউন্ডে সোনা জিতেছেন মার্গারিতা; যাকে এই ইভেন্টে বিশ্বের সেরা ধরা হয় এখন।

 

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘এবারের অলিম্পিকে অসামান্য সাফল্য লাভ করায় রুশ দলকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। অনেক বাধা-বিপত্তির পরও দেশের সুনাম রক্ষায় আপনারা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ আপনাদের প্রাপ্য। আপনারা নিজেদের সেরা দক্ষতা, সেরা সহিষ্ণুতা ও শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছেন বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে রাশিয়ার শক্তিশালী অবস্থানের বিষয়টিও।’

 

২০ বছর বয়সী মার্গারিতা মামুন (ডাকনাম রিতা) সর্বশেষ ২০০৯ সালে তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে দুর্গাপুর উপজেলার ক্ষিদ্রকাশিপুরের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মার্গারিতার বাবা বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁর মেয়েকে বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহণ করানোর জন্য। কিন্তু তখনকার প্রশাসন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। ফলে মায়ের দেশ রাশিয়ার হয়েই অলিম্পিকে অংশ নেন মার্গারিতা।

 

অলিম্পিকে রাশিয়ার হয়ে সোনা জয় করলেও পদকপ্রাপ্তির অনুভূতি জানাতে গিয়ে মার্গারিতা সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর এই জয় দুই দেশের জন্য, রাশিয়া ও বাংলাদেশ। রাশিয়ার গণমাধ্যমে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলার বাঘিনী’। রিওতে যখন তিনি সোনা জিতলেন, টেলিভিশন ভাষ্যকাররাও তাঁর নামের সঙ্গে ‘বেঙ্গল টাইগার’ শব্দটি উচ্চারণ করছিলেন বারবার। সেই হিসেবে মার্গারিতার এই পদকপ্রাপ্তির গৌরব বাংলাদেশেরও।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর