মেননের এমপি পদ বাতিল ও শাস্তি দাবি বাবুনগরীর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে কওমি মাদ্রাসাকে বিষবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা, ইসলামী অনুশাসনকে মোল্লাতন্ত্র, হেফাজতে ইসলাম ও আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে কটাক্ষ করায় বাম নেতা রাশেদ খান মেননের সংসদ সদস্যপদ বাতিলপূর্বক গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী।

রাশেদ খান মেননের দেয়া অশালীন, আক্রমণাত্মক ও উসকানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বুধবার বিকালে হেফাজতে ইসলামের এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি করেন।

বিবৃতিতে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সংসদে দাঁড়িয়ে ইসলামের মৌলিক আকিদা খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী কাফের কাদিয়ানীদের পক্ষে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য রেখেছেন। কোরআন হাদিস ও শরিয়তের বিধান হলো যারা আকিদায়ে খতমে নবুওয়াত স্বীকার করে না তারা কাফের ও অমুসলিম। আর যারা কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে অমুসলিম মনে করে না তারাও কাফের।

তিনি বলেন, সারা বিশ্ব ও বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম ও তওহিদি জনতার ঐকমত্যের ভিত্তিতে তারা অমুসলিম। মেনন সাহেব কাদিয়ানীদের পক্ষে ওকালতি করে প্রমাণ করেছেন তিনিও এই কুফরি আকিদায় বিশ্বাসী। সুতরাং, খতমে নবুওয়াত অস্বীকারকারী মেনন মুসলমান হতে পারে না।

জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্র কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা হলে তারা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মতো নাগরিক অধিকার নিয়ে এ দেশে বসবাস করতে পারবে, তাতে কোনো আপত্তি থাকবে না।

উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনিধারা হলো কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা- এমন দাবি করে তিনি বলেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ ইসলাম ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুসলমানদের ঈমান আকিদা সংরক্ষণ, জনগণের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কওমি মাদ্রাসা ও আলেম সমাজের ত্যাগ ও অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। কওমি শিক্ষার সঙ্গে এ দেশের আপামর জনসাধারণের গভীর সম্পর্ক।

তিনি বলেন, সরকারি সহযোগিতা ছাড়া দেশের লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীদের ইসলামি শিক্ষা, নীতিনৈতিকতাসম্পন্ন আদর্শ নাগরিক তৈরি, এতিম অনাথ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সন্তানদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা এবং মানবতার সেবায় কাজ করছে আলেমসমাজ। ঘুষ, সুদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণ কওমি মাদ্রাসা অনন্য নজির স্থাপন করেছে।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব বলেন, রাশেদ খান মেনন কওমি মাদ্রাসাকে ‘বিষবৃক্ষ’ বলে আলেম-উলামা, ছাত্র শিক্ষক ও তৌহিদি জনতার অন্তরে আঘাত করেছে। কওমি মাদ্রাসাকে বিষবৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। জাতীয় সংসদকে অপমানিত করেছেন। তার বক্তব্য ইসলামি শিক্ষা, নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রবিরোধী।

তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব আমিরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে নিয়ে যে অশালীন, কুরুচিপূর্ণ ও ঔদ্ধত্যমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, এ জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় তার আলেম ওলামা ও ধর্মবিদ্বেষের বিরুদ্ধে কঠিন কর্মসূচি দিয়ে সমুচিত জবাব দেয়া হবে।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আকিদা রক্ষায় সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সংগঠন। মহান আল্লাহ, মহানবী সা., সাহাবায়ে কেরামের শান-মান মর্যাদা রক্ষা, নাস্তিক্যবাদী ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তি এবং বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদি খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদী, রাম-বাম গোষ্ঠীর মোকাবেলায় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি কোনো অপশক্তি ইসলামকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়ার স্পর্ধা দেখালে দেশের তৌহিদী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিরোধ করা হবে। অথচ সংসদে তিনি হেফাজতের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছেন।

তিনি আরও বলেন, মূলত কমিউনিস্টরা এখন গণধিকৃত। তাদের সঙ্গে দেশের গণমানুষের সম্পর্ক নেই। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে মেনন-ইনুরা বেসামাল হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে ফায়দা লুটতে চায়। আমরা মনে করি, এরা বিদেশি অপশক্তির ক্রীড়ানক হয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতেই অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এসব বক্তব্য দিয়ে ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীর কৃপা পেতে চায়।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী আল্লাহ, রাসূল, কোরআনের শিক্ষা এবং ইসলামকে অবমাননা করায় মেননকে গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে নাস্তিক্যবাদের দোসর মেনন-ইনু গংদের আস্ফালন সহ্য করা যায় না। এ ধরনের ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে সে জাতীয় সংসদের সদস্য থাকতে পারে না। অবিলম্বে মেননের সংসদ সদস্যপদ বাতিল করে তার বিচার করুন।

তিনি বলেন, এ জাতীয় মোনাফেকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের আলম সমাজ ও তৌহিদি জনতা তার ইসলামবিদ্বেষের বিরুদ্ধে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে। তখন তারা পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না।