শনিবার , ১৩ জুলাই ২০১৯ | ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীতে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ব্যাংক ডাকাতি ঠেকালেন প্রহরী

Paris
জুলাই ১৩, ২০১৯ ১০:২০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও নিজের জীবন বাজি রেখে ব্যাংক ডাকাতির হাত থেকে রক্ষা করলেন এক নিরাপত্তা প্রহরী। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে রূপালী ব্যাংক শাখায়। ডাকাত দলের সদস্যরা ব্যাংক লুট করতে ব্যর্থ হলেও তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত প্রহরী লিটনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসপাাতলের চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের একজন ইন্টার্নি চিকিৎসক জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ব্যাংকের প্রহরীর গলার অনেকটা অংশ কেটে গেছে। দুই-একদিন পার না হওয়া পর্যন্ত তিনি ঝুঁকিমুক্ত নন। আহত প্রহরী লিটনের ডান কানের নিচে গলায় প্রায় ৪ ইঞ্চ পরিমাণ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মক জখম সৃষ্টি হয়েছে। জখমটি অনেকটা গভীর হয়ে গেছে। সেখান দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। যার কারণে তিনি শঙ্কামুক্ত নন।

এদিকে, ডাকাত দলের সদস্যরা ব্যাংকের ভল্ট ঘেঁষে দেয়াল কাটার চেষ্টা করেও প্রহরী লিটনের চিৎকারে ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে যায়। তবে ব্যাংক থেকে কোনো টাকা-পয়সা লুট করতে পারেনি ডাকাত দলের সদস্যরা।
আহত প্রহরী লিটন নগরীর রামচন্দ্রপুর বাশার রোড এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এক বছর ৩ মাস আগে রুপালি ব্যাংক রুয়েট শাখায় চুক্তিভিত্তিক সিকিউরিটি কম্পানীর হয়ে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। হতদরিদ্র লিটনের সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করছে রুপালি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
রুয়েট ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থিত এই ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টার ঘটনাটির পরে এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও দেকা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

ব্যাংকের রুয়েট শাখার ম্যানেজার সোয়াইবুর রহমান খান জানান, বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ১২টার পর দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের নিচতলায় অবস্থিত ক্যাফেটেরিয়ার গেট ভেঙে দোতলায় প্রবেশ করে। এ সময় ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনের সিসি ক্যামেরাটি তারা অকেজো করে দেয়। পরে তারা ব্যাংকের প্রধান গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যাংকের ভিতরে থাকা প্রহরী লিটন বাধা দেয়। কিন্তুদুর্বৃত্তরা লিটনের গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে লুটিয়ে পড়ে লিটন। তবে ধারণা করা হচ্ছে লুটিয়ে পড়েও লিটন চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে হয়। এ কারণে দুর্বৃত্তরা ব্যাংকের ভল্টের দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে যায়।

সোয়াইবুর রহমান বলেন, ‘লিটন ভোর পৌনে ৬টার দিকে আমাকে ব্যাংকের টেলিফোন থেকে ফোন করেন। কারণ তাঁর মোবাইল ফোনটি ডাকাত দলের সদস্যরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হয়তো লুটিয়ে পড়ে অচেতন বা মুমূষু হয়ে পড়ে লিটন। এ কারণে সে হয়তো ঘটনার সময় ফোন করতে পারেনি। তবে ভোর পৌনে ৬টার দিকে যেখানে লুটিয়ে পড়ে, সেখান থেকে প্রায় ১০ গজ দূরে রাখা ল্যান্ড ফোনের কাছে কোনো মতে গিয়ে আমাকে টেলিফোন করে। এরপর আমি দ্রুত থানায় ফোন করলে পুলিশ গিয়ে লিটনকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে।’

এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে সরেজমিনে ব্যাংকে দেখা যায়, ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনের সিসি ক্যামেরার মুখটি ঘুরিয়ে উপর দিকে রাখা রয়েছে। ব্যাংকের ভেতরে শাখা ব্যবস্থাপকের কক্ষের পাশে আরেকটি কক্ষে লিটনের রক্তমাখা জামা পড়ে রয়েছে। ব্যাংকের মেঝের জায়গায় জায়গায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। ব্যাংকের ভিতরে ভল্টের পাশে ওয়াল গর্ত হয়ে আছে।

ডাকাত দলের সদস্যরা সাবল বা ছেউনি জাতীয় কিছু দিয়ে ওয়াল ভাঙার যে চেষ্টা করে, তার চিহ্ন রয়ে গেছে। এমন দৃশ্য দেখে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখে-মুখে তথনো আতঙ্কের ছাপ যেন স্পষ্ট ফুটে উঠে।

ঘটনাস্থলে পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেতে দেখা গেছে। তারা ঘটনা তদন্তে কাজ করছে।

রুপালি ব্যাংকের আরকে কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ডাকাত দলের সদস্যরা ব্যাংক থেকে কোনো টাকা-পয়সা লুট করতে পারেনি। তবে তারা ব্যাংকের ভল্টের দেয়াল ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে। তবে তাতেও ব্যর্থ হয়েছে হয়তো লিটনের চিৎকার-চেঁচামেচির কারণে।’

রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা নষ্ট করার পূর্বে দুর্বৃত্তদের একজন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তবে তার মুখটি কাপড়ে ঢাকা ছিল। তারা ডাকাতির জন্যই ব্যাংকে ঢুকেছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রাইম সিন থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি।’

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী নিজের জীবন বাজি রেখে যে সাহস দেখিয়েছে সেটি নিঃসন্দেহে প্রশাংসাযোগ্য। তবে তার অবস্থা গুরুতর বলে আমরা জেনেছি। তিনি সুস্থ হলে হয়তো আরো কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।’

 

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর