মৃত্যুভয় পেরিয়ে এখানে বছরে পর্যটক হয় ১০ কোটি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এদেশে উত্তেজনা ছড়ায় প্রতি মুহূর্তে৷ যখন তখন গুলিতে প্রাণপাখি উড়ে যেতে পারে৷ কিন্তু সৌন্দর্যের পূজারিদের বোধহয় সেই সব শঙ্কা মনে স্থান পায় না৷ নাহলে একটা বাগানের টানে কখনও কাবুলে বছরে ভিড় জমাতে পারে ১০ কোটি মানুষ?

অবশ্য এ যে সে বাগান নয়৷ খোদ বাবর বাদশা তৈরি করেছিলেন৷ বাগানের নামও বাগ-এ-বাবর৷ বাবরের বাগান৷ কাবুল শহরে অবস্থিত এই কুঞ্জবন৷ বাবরের এই সাধের বাগানকে একবার চোখের দেখা দেখতে কাবুলে প্রতি বছর ভিড় জমায় প্রায় ১০ কোটি পর্যটক৷ এর মধ্যে যেমন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরা রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিদেশি ভ্রমণপিপসুরাও৷ সরকারের হিসাব বলছে, শুধু প্রবেশ মূল্য থেকেই প্রতি বছর বাগান কর্তৃপক্ষ আয় করে ৩ লাখ মার্কিন ডলার৷

শের দরওয়াজা পাহাড়ের কোলে নিজস্ব কানন বানিয়েছিলেন বাদশা৷ প্রায় ১১ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বাগান৷ বাগানের প্রবেশপথে রয়েছে একটি সরাইখানা৷ ২০০২ সালে গৃহযুদ্ধের সময় এটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ তবু বাবরের স্বপ্ন জিইয়ে, এখনও ভগ্নাংশ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সরাইখানাটি৷ বাগান কর্তৃপক্ষের প্রধান আহমেদ শাহ ওয়ারদাক জানিয়েছেন, ওই জায়গায় সাতটি ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে৷ আগে বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্যারাভ্যান আসত৷ তখন তো বাণিজ্য মানে ছিল বিনিময় প্রথা৷ ফলে সব ক্যারাভ্যানেই জিনিসপত্র বোঝাই থাকত৷ এই সরাইখানায় এসে গা এলিয়ে বিশ্রাম নিত ব্যবসায়ীরা৷ তারপর নতুন উদ্যমে আবার কাজে লেগে পড়ত৷ সামনের খোলা মাঠেই বসত হাট৷ জিনিসপত্র আদানপ্রদান হত৷

৫০০ বছর আগে যখন আফগানিস্তান এসেছিলেন মুঘল বাদশা, তখনই তিনি এই বাগান তৈরি করেন৷ বাবরের খুব সাধের জায়গা ছিল এটি৷ দিল্লির দরবারের বসেও তিনি ভুলতে পারেননি নিজের হাতে সৃষ্টি এই কাননের কথা৷ কাছের মানুষদের তিনি জানিয়েছিলেন মৃত্যুর পর যেন তাঁকে কাবুলের সেই বাগানেই সমাধিস্থ করা হয়৷
আজও সেই বাগান নিশ্চিন্তে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন মুঘল বাদশা জাহির-উদ-ইন মহম্মদ বাবর৷ তাঁর সমাধিক্ষেত্র যেমন বাগানের একটি দর্শনীয় স্থান, তেমনই আরও ছয়টি দর্শনীয় স্থান এখানে রয়েছে৷ শাহজাহান মসজিদ, বাগানের কেন্দ্রীয় অক্ষ, বাগানের দেওয়াল, সরাইখানা, হারেম ও শাহজাহান দরওয়াজা৷

 

পৃথিবীর সব দর্শনীয় স্থানের মতো এখানেও ট্যুর গাইড আছেন৷ তাঁরা শুধু জায়গা ঘুরিয়েই দেখানে না, তাঁরা চান মানুষ যেন এখানকার ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়৷ অনেকেই এই বাগানের মাহাত্ম্য জানা না৷ নিছক ঘুরে দেখবে বলেই আসে৷ তাদের কাছে বাবরের কীর্তি ও ইতিহাস জানান গাইডরা৷

বাগানের আরও একটি দর্শনীয় জায়গা হল কোয়াসরে মালাকে (রানির অট্টালিকা)৷ বছরে প্রায় এক হাজার দর্শক এটি দেখতে আসে৷ বাগানের দক্ষিণ পূর্ব কোণে এই মহল অবস্থিত৷ অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানে এই মহল ভাড়া দেওয়া হয়৷ এই জায়গাটি তৈরি করেন আমির আবদুল রহমান খান৷ ১৮৮০ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানের আমির ছিলেন৷ অট্টালিকা তৈরির পর তিনি নিজে অনেকদিন এখানে ছিলেন৷ এখন প্রায় ৮৬ জন কর্মী এই মহল দেখাশোনা করেন৷