মিয়ানমারে ভয়াবহ সংঘাত, বাংলাদেশ সীমান্তে চাপ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির জান্তা সরকারের অনুগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চলমান এ সংঘাতে বিদ্রোহীদের আক্রমণে পর্যুদস্তপ্রায় হয়ে পড়েছে জান্তার সেনাবাহিনী। যত দিন যাচ্ছে ততই তাদের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে, হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে একের পর এক এলাকা।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে বেতবুনিয়া রাইট ক্যাম্প দখলে নিতে মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলছিল।

এদিন সীমান্তের ওপার থেকে আসা একটি মর্টারশেল বিস্ফোরণে বাংলাদেশে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। রাখাইন রাজ্যসংলগ্ন বাংলাদেশ সীমান্তের বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষের মধ্যে তাই ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে নিজ বসতভিটা ফেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র সরে গেছেন।

এদিকে যুদ্ধের ময়দান থেকে প্রাণভয়ে পিছু হটা মিয়ানমার সরকারের অনুগত সীমান্ত পুলিশ (বিজিপি) সদস্যের অনেকেই বাংলাদেশে আশ্রয়ের উদ্দেশে ছুটছেন; ছুটছেন যুদ্ধপীড়িত রাখাইনের অনেক বাসিন্দাও। এতদিন এই যুদ্ধকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলা হলেও, এখন এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের ওপর। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়ে গেছে নানারূপী চাপ। বিজিবি তাই এসব এলাকায় এখন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে, মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, মিয়ানমার বাহিনী আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান থেকে বোমা হামলা চালাতে শুরু করে। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পগুলোতে হামলা চালিয়ে গত তিন দিনে ৬২ জন সৈন্যকে হত্যা করেছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি; দখলে নিয়েছে বেশ কয়েকটি সেনাঘাঁটি।

দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতী নিউজের প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে সরকারি বাহিনীর সদস্যরা। আরাকান আর্মির আক্রমণের মুখে এ পর্যন্ত ৯৮ জন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হেফাজতে রয়েছেন। বিজিবি পাহারায় গুলিবিদ্ধ ৯ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমান্তের খুব কাছাকাছি যেতে বারণ করা হচ্ছে বারবার। সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলা হচ্ছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালী সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার থেকে ভেসে আসছে গুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ধামনখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবুনিয়া এলাকা থেকে ব্যাপক গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এতে আতঙ্কিত আছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের মধ্যে জানি মং ও নিমলাইনসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৯ জনকে ভর্তি করা হয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। সেখানে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত। এর বড় অংশ বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় যুদ্ধ জোরালো করেছে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি গোষ্ঠী। এদিকে বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমার থেকে উলুবনিয়া সীমান্ত পার হয়ে একটি রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও তাদের সঙ্গে ৩ শিশু রয়েছে।

হোয়াইক্যং উলুবনিয়া এলাকার জালাল আহমেদ বলেন, সকালে মিয়ানমারের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি এবং বোমার শব্দ শুনতে পাই। ভয়ে সীমান্ত থেকে লোকজন সরে যাচ্ছে। অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি এবং সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য বিজিবি সদস্যরা সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে।

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যকার তুমব্রু ঘুমধুম সীমান্তের তিনটি স্থান দিয়ে গত রবিবার দুপুর থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অবশ্য বলেছেন, সীমান্ত সুরক্ষিত আছে। প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরা এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি জানান, তাদের মধ্যে ৯৫ জন রেজিস্টার্ড হয়েছেন।

মিয়ানমার থেকে বিজিপির সদস্যদের বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া সম্পর্কে সরকারের মনোভাব জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ আছে। মিয়ানমারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা এ দেশে আশ্রিত বিজিপির সদস্যদর ফেরত নেওয়ার জন্য।  এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।