মায়ের কোলে চড়ে ক্লাসে আসা রুমকি নিচ তলায় ক্লাস হয় এমন বিভাগ চান

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শারীরিক প্রতিবন্ধীতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেড়ে ওঠা রুমকি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন।সেই স্বপ্নই তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।মায়ের কোলো চড়ে স্কুল কলেজ জীবন পার করার পর এখন ভর্তি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রতিকার না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাও পার করতে হবে মায়ের কোলে চড়ে। কিন্তু রুমকির চল্লিশোর্ধ্ব মা কি পারবেন আরও ৫ বছর মেয়েকে কোলে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তলায় শ্রেণীকক্ষে পৌছে দিতে।এই চিন্তা ভর করেছে রুমকির মনে।

তাই তো রুমকির নিবেদন তার বিষয় পরিবর্তন করে এমন একটি বিভাগে পড়ার সুযোগ দেয়া হোক যাতে করে মায়ের কষ্ট লাগব হয়, কোলে করে তিন তলায় না নিয়ে যেতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে নিচ তলায় ক্লাস হয় এমন একটি বিভাগে বিশেষ করে বাংলা বিভাগে মাইগ্রেশনের আবেদন করেছেন রুমকি।ভবিষ্যতে হতে চান একজন আদর্শ শিক্ষক।

জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা রুমকির বাড়ি রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকায়। বাবা হাফিজুর রহমান একজন পিকআপ ভ্যানচালক। মা নাজনীন বেগম গৃহিণী। জন্মগতভাবেই স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট পা রুমকির। চলফেরা করতে হয় হয় হুইল চেয়ারে কিংবা মায়ের কোলে চড়ে। তাতে কী, মনের দিক দিয়ে তিনি অনেক শক্তিশালী। মেধাতেও অনন্য। সেই জোরেই এবার সুযোগ পেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।

মায়ের কোলে চড়েই রুমকিকে যেতে হয়েছে স্কুল-কলেজে। ২০১৬ সাল রাজশাহী বহুমুখী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ ও ২০১৮ সালে রাজশাহী মহিলা কলেজ থেকে এএইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ০৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন রুমকি। মেধা আর অদম্য মনের জোরে ভর্তি যুদ্ধেও জয়ী হয়ে স্থান করে নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রতিবন্ধী কোটায় উর্দু বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান রুমকি। ভর্তি গিয়ে দেখেন, বিভাগটি শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনের তিন তলায়। কিন্তু পুরনো সেই ভবনে নেই লিফট কিংবা র‌্যাম্প। ফলে মা কিংবা অন্য কারও কোলে চড়ে তাকে ঢুকতে হয় বিভাগে। জানা গেল, বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মাঝেমধ্যে হুইল চেয়ারসহ রুমকিকে বয়ে নিয়ে যান তিন তলার সিঁড়ি।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেন রুমকি।কিন্তু বিধি বাম।উর্দু থেকে আরবি বিভাগে পড়ার সুযোগ মেলে। কিন্তু আরবি বিভাগের কার্যক্রমেও চলে একই ভবনের তিন তলায়! এ অবস্থাতেই মায়ের কোলে চড়ে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মায়েরও তো বয়স হয়েছে। তিনিই কতবার মেয়েকে কোলে করে ক্লাসে নিয়ে যেতে পারবেন— নিজেই যেন নিজেকে প্রশ্ন করেন রুমকি।

রুমকির মা নাজনীন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে, ভবনের নিচতলার কোনো বিভাগে যেন রুমকিকে মাইগ্রেট করা হয়। ওই শহীদুল্লাহ্ ভবনেরই নিচতলায় রয়েছে বাংলা বিভাগ।সেখানে রুমকি ভর্তির সুযোগ পেলে তার ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়ায় সমস্যা হবে না।

রুমকি জানান, বয়স্ক মায়ের পক্ষে এভাবে রোজ তাকে তিন তলা বয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়মিত ক্লাস না করলে পরীক্ষায় ভালো করাটাও কঠিন। তাই নিচ তলায় বাংলা বিভাগে পড়ার সুযোগ পেলে মায়ের কষ্ট লাগব হবে।

এ বিষয়ে জানতে রাবির আরবি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাজিম উদ্দীন গণমাধ্যমকে জানান, রুমকির বিভাগ পরিবর্তনের বিষয়টি তার হাতে নেই। এ বিষয়ে তিনি উপাচার্য বরাবর সুপারিশ করেছে। এখন প্রশাসন চাইলে হবে।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া জানান, শিগগিরই উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে রুমকির জন্য একটি ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন।