মাশরাফির অন্য চ্যালেঞ্জ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি এখন ক্রিকেটার কাম রাজনীতিবিদ। তবে বেশভুষায় এখনও কোনো পরিবর্তন আসেনি। অন্তত মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তাকে সেভাবে দেখা যায়নি। পরম চিরচেনা সেই ট্রাউজার ও জার্সি। অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলের গত আসরে রংপুর রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন মাশরাফি মুর্তজা।

এবার তার নামের সঙ্গে আরেকটি বিশেষণ যুক্ত হয়েছে। জাতীয় সংসদ সদস্য (এমপি)। নামের পাশে যুক্ত হওয়া পদবি ও মর্যাদার ভার যে কতটা সেটা খেলার মাঠে অবশ্য অনুভব করারই চেষ্টা করেন না মাশরাফি। তার কাছে সংসদ সদস্য সংসদের জায়গায়, মাঠ মাঠের জায়গায়। রংপুরকে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন করার লক্ষ্যে আজ থেকে বিপিএলে ডুবে যেতে চান মাশরাফি।

তবে রাজনীতি থেকে হুট করে খেলায় পুরো মনোযোগ দেয়ার কাজটা কঠিন মানছেন। আজ বিপিএলে নামার আগে নতুন চ্যালেঞ্জটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে তাকে। আবার ইনজুরির সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। গত বছর বিপিএল খেলার পর এই প্রথম টি ২০তে নামছেন। এসব করতে হিমশিম খাচ্ছেন। কাজটা সহজ মনে হচ্ছে না।

কাল মিরপুর একাডেমি মাঠে তিনি বলেন, ‘এই পর্বটা (ক্রিকেটার থেকে এমপি আবার এমপি থেকে ক্রিকেটার) খুব কঠিন। বিশেষ করে এই অল্প সময়ের মধ্যে। কিন্তু ম্যানেজ করছি, চেষ্টা করছি। এখন দেখা যাক, আল্লাহ ভরসা।’

তিনি বলেন, ‘যদি ভাবতে পারি পুরোপুরি খেলার মধ্যে ঢুকে আছি তাহলে আমার জন্য ভালো হবে। একটু সময় লাগবে হয়তো। ইনজুরি আছে। আবার এই ফরম্যাটে শেষ বিপিএলে খেলছি আবার এই প্রথম নামছি।’

এমপি হিসেবে মাঠে নামার আগে আলাদা কোনো অনুভূতি হচ্ছে কি না? তিনি বলেন, ‘আগের মতোই। এখানে আমি খেলোয়াড় হিসেবেই পরিচিত। মাঠেও নামছি খেলোয়াড় হিসেবে, সংসদ সদস্য হিসেবে না।’

রংপুরে রয়েছে বড় সব নাম। গত আসরে ক্রিস গেইলের ব্যাটেই শিরোপা জিতেছে রংপুর। এবার গেইলের পাশাপাশি দলে রয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স-অ্যালেক্স হেলসরা। অবশ্য বড় নাম মানেই যে কাজটা সহজ সেটা ভাবার কারণ দেখছেন না মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলটা ভালো, ভারসাম্যপূর্ণ। আগের আসরে যেহেতু চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবারও তাই চাওয়া আছে। আর আগের আসরের চেয়েও ভালো দল মনে হচ্ছে। খেলার সময় আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাস কোনোভাবেই না।’

বিপিএলে মাশরাফি অধিনায়ক মানেই যেন সেই দলের হাতে শিরোপা। প্রায় অলিখিত নিয়মই হয়ে গেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ও দর্শকদের প্রত্যাশাও থাকে আকাশচুম্বি। প্রত্যাশার চাপ নিয়ে রংপুর অধিনায়ক বলেন, ‘বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হলে আলাদা চাপ থাকে। প্রত্যাশা তো থাকবেই। শুধু অধিনায়ক হিসেবে না, খেলোয়াড় হিসেবেও থাকবে। আর অধিনায়ক মানেই তো আরও দায়িত্ব। এটা নিয়েই তো চলছে গত কয়েক বছর। নতুন কিছু না।’

ব্যাটিংয়ে রংপুরের নির্ভরতা বিদেশিরা। আবার বোলিংয়ে স্থানীয়দের ওপর ভরসা মাশরাফির। দুই স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু, সোহাগ গাজীর সঙ্গে রয়েছেন পেসার আবুল হাসান, শফিউল ইসলাম ও মাশরাফি। রংপুর অধিনায়ক বলেন, ‘আমাদের দলটা সেরকমই (ব্যাটিংয়ে বিদেশি ও বোলিংয়ে দেশি)। তবে বেশ কিছু অলরাউন্ডার রয়েছে। ফরম্যাটটা টি ২০। তাই এখানে যেদিন যে ভালো শুরু করবে তাকে আরও ভালো করার লক্ষ্য রাখতে হবে।’ ডেথ ওভারে কে বোলিং করবেন সেটা নিয়ে চলছে জল্পনা।

এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘কয়েকটা ম্যাচ হওয়ার পর হয়তো একটা কিছু দাঁড় করাতে পারব। এখন দলে ফরহাদ রেজা, শফিউল ও আমি আছি। এছাড়া দু’জন বিদেশিও আছেন। একটা দলের সব বিভাগ শক্তিশালী করা কঠিন।’

আজ প্রথম ম্যাচে রংপুরের প্রতিপক্ষ মুশফিকুর রহিমের চিটাগং ভাইকিংস। তারা আগের আসরগুলোতে ভালো অবস্থানে যেতে পারেনি। প্রথম ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ মাশরাফির কাছে। তিনি বলেন, ‘টি ২০ ক্রিকেটে এক’দু’জন ম্যাচের চিত্র বদলে দিতে পারে। নিদাহাস ট্রফির কথা চিন্তা করেন, মুশফিক একা একটা ম্যাচ জিতিয়েছে। ভালো দল বলেই যে একটা নির্দিষ্ট ম্যাচ জিতে যাবেন এমনটা আশা করা ভুল। সাতটি দলেরই শক্তিমত্তা খুব কাছাকাছি।

‘দর্শকরা চায় বড় রান দেখতে। ১৮০, ১৯০ বা ২০০ রান করে জিততে দেখলে টুর্নামেন্টের গ্রহণযোগ্যতা অনিবার্য। উইকেট একটা বিষয়। এবার ভালো কিছু খেলোয়াড় রয়েছে। আগেরবার যারা এসেছে তার থেকে মানসম্পন্ন এবং ফর্মে থাকা ক্রিকেটার রয়েছে। এবার টুর্নামেন্টের গ্রাফটা হয়তো ওপরের দিকেই যাবে।’