‘মার খেয়ে’ ছেলের আত্মহত্যা, শোকে গাছে ঝুললেন মা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দুষ্টু  ছেলেটি ঠিকমতো লেখাপড়া করত না। স্কুলেও যেত না। এ কারণে গৃহশিক্ষকের হাতে মার খেত মাঝেমধ্যেই। এমনই এক ঘটনায় তার মাও তাকে মারধর করেন গতকাল রোববার বিকেলে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা যায়।

স্থানীয় লোকজন আরো জানায়, অভিমান করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সুমন মণ্ডল (১৩) রাত ৮টায় ঘরের আড়ায় সঙ্গে চাদর পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। আর সেই শোক সইতে না পেরে সুমনের মা চন্দনা মণ্ডল ( ৫৫) বাড়ির পাশে একটি গাছের সঙ্গে শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন।

হৃদয়স্পর্শী এই ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার  কাদাকাটি  গ্রামে। রাতে মা ও ছেলের  লাশ নামানো হয়। আজ সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

কাদাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সঞ্জয় কুমার জানান, পড়ালেখা না করায় সুমনকে মারধর করেছিলেন তার মা চন্দনা। এর কিছুক্ষণ পর সে বাড়ির কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে সবার অজান্তে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় চাদর পেচিয়ে ঝুলে পড়ে সুমন।

সঞ্জয় কুমার জানান, কিছু সময় পর ওর মা চন্দনা রানী ঘরে ঢুকতে গিয়ে অন্ধকার দেখেন। লাইট দিয়েই দেখতে পান নিজের ছেলের ঝুলন্ত লাশ। মায়ের ডাকাডাকিতে পাড়ার সবাই ছুটে আসে। ওকে নামাতেই ডাক্তার বিনয় কুমারও আসেন। তিনি এসে বলেন সুমন আর নেই।

স্থানীয় লোকজন জানায়, ছেলের মৃত্যুর বিলাপ করতে থাকেন চন্দনা। ‘হায়রে কেন মারলাম আমার সোনাটারে’বার বার বলছিলেন এবং কাঁদছিলেন তিনি। এর মধ্যে  চন্দনা কখন যে চোখের আড়ালে চলে গেছেন কেউ টের কিছু পায়নি। কিছুক্ষণ পর খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে চন্দনাকে তাঁর নিজের শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে একটি ডেউয়া গাছে ঝুলতে দেখে স্বজনরা। একই পরিবারের মা ও ছেলের লাশ দেখে চোখ ছল ছল করে ওঠে এলাকার লোকজনের।

খবর পেয়ে সুমনের বাবা মনোরঞ্জন মণ্ডল তাঁর কর্মস্থল মাছের ঘের থেকে ফিরে এসে শোকে পাথর হয়ে যান। আহাজারি করে বলেন, ‘তিন ছেলেমেয়ের দুই জনের বিয়ে হয়ে গেছে। এক ছেলে আর স্ত্রী ছিল, তারাও চলে গেল। আমি এখন কী করব।’

স্বজনরা জানান, মনোরঞ্জনের দুই মেয়ে বিশাখা মণ্ডল আর যূথিকা মণ্ডলের বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে সুমনই বাড়িতে ছিল। সুমন কাদাকাটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) গোলাম রহমান বলেন, আত্মহত্যার বিপক্ষে কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি। এমনকি দুটি মৃত্যু নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) মধুসূদন রায়কে কাদাকাটি গ্রামে পাঠানো হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনো অভিযোগ পেলেই মামলা হবে।

সূত্র: এনটিভি