মারা যাওয়ার পরে বাঘার সেই বৃদ্ধের করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর আইডি হাপাতালে গড়ে তোলা করোনা আইসোলেশন ইউনিটে মারা যাওয়া আশি বছরের বৃদ্ধ আব্দুস সোবহানে করোনা রিপোর্ট ‘‌নেগেটিভ’ এসেছে। সন্দেহ থেকে দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষার জন্য মৃত্যুর আগের দিন তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই পরীক্ষার প্রতিবেদন ‘‌নেগেটিভ’ এসেছে। গত রোববার (২৬ এপ্রিল) আব্দুস সোবহান মারা যান। প্রথম দফা নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা ‌‘পজিটিভ’ এসেছিল। তার পর

তাকে রামেক হাসপাতাল থেকে আইডি হাসপাতালে নেয়া হয়। মারা যাওয়ার পরে তার ছেলে মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, করোনা আতঙ্কে চিকিৎসকরাও তার বাবার ঠিকমতো চিকিৎসা দেননি। এমনকি মারা যাওয়ার পরে নগরীর মেহেরচন্ডীপুর গোরস্থানে দাফন করতে গেলেও এলাকাবাসী মারমুখী আচরণ করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। পরে লাশ গোপনে দাফন করা হয় হেতেম খাঁ গোরস্থানে।

অথচ দ্বিতীয় প্রতিবেদনে মৃত সোবহান করোনা ছিলেন না বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) অধ্যক্ষ নওশাদ আলী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই ব্যক্তির ফুসফুসে পানি ও বাতাস জমায় চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি বলে জানান তিনি।

৮০ বছর বয়সী আব্দুস সোবহানের বাড়ি বাঘা উপজেলার একটি গ্রামে। তাঁকেই রাজশাহীতে করোনায় মৃত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। নিশ্চিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীতে আর কারও মৃত্যু হয়নি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯ এপ্রিল ওই বৃদ্ধ জ্বর ও প্রস্রাবের যন্ত্রণা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এক্স-রে করার পর চিকিৎসকেরা সন্দেহ করেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। চিকিৎসকেরা তাঁর নমুনা পরীক্ষা করান।

পরীক্ষার প্রতিবেদন ‘পজিটিভ’ আসে। তার পর থেকে তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে রাখা হয়। কিন্তু এর আগেই অনেক চিকিৎসক ও নার্স ওই বৃদ্ধের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এমন ৪২ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

এ ছাড়া ওই রোগীর সঙ্গে থাকা তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরও নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু পরীক্ষায় একটি প্রতিবেদনও ‘পজিটিভ’ আসেনি। ফলে চিকিৎসকেরা ওই রোগীর দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। গত শনিবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরের দিন সেই নমুনা পরীক্ষার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে রাজশাহী বিভাগীয় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা কমিটির সিদ্ধান্ত, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত সবাইকে নগরীর ভেতরে নির্ধারিত জায়গায় দাফন করা হবে।

তাই ওই বৃদ্ধের লাশ বাঘা উপজেলার গ্রামের বাড়িতে নিতে দেওয়া হয়নি। অবশ্য স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে নির্ধারিত কবরস্থানেও লাশ দাফন করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত নগরের হেতেমখাঁ কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

রামেক অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, দ্বিতীয় পরীক্ষায় ওই ব্যক্তির প্রতিবেদন করোনা ‌‘নেগেটিভ’ এসেছে। তিনি আসলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। তাঁর ফুসফুসে পানি ও বাতাস জমেছিল। এ কারণেই তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

স/আর