শনিবার , ২১ আগস্ট ২০২১ | ৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

‘মারা গেলে এত জ্বালা-যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো না’

Paris
আগস্ট ২১, ২০২১ ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

ভালো নেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতরা। স্প্লিন্টারের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে কাটছে দিন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সমস্যাও। পরিবারে হয়ে আছেন বোঝা। দুঃসময়ে দলের কর্মসূচিতে গিয়ে পড়েছেন এই সঙ্কটে। কিন্তু সুসময়ে দলের নেতাদের কাছে তারা যেন বোঝা। শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই খবর রাখেন না।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা। পার হয়েছে ১৭ বছর। অনেকে যৌবন শেষে বার্ধক্যের কোটায়। স্প্লিন্টারের কারণে নানা সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বয়স ক্ষয়ের নানা রোগও। এ যেন এক দুর্বিষহ জীবন।

২২ জনের প্রাণহানি ও শতাধিক মানুষের জীবনের এ দুঃসহ যন্ত্রণার ‘কারিগর’ তারেক রহমানের (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) ‘ফাঁসি’ চান আহতরা। তারা বলছেন, মূলহোতাই দেশের বাইরে আয়েশে জীবনযাপন করছে। আমাদের মরার আগেই দেশে এনে তারেক রহমানসহ জড়িত সবার বিচার কার্যকর করলে আত্মা শান্তি পাবে।

২১ আগস্টে হামলায় আহত রাশিদা আক্তার রুমা বলেন, ‘ওষুধের খরচ প্রতি মাসে ১০/১২ হাজার টাকা লাগে। ৩২ নম্বর থেকে ৫ হাজার টাকা করে দেয়। দুই-তিনটা অপারেশন করা প্রয়োজন। আমিসহ কয়েকজনের (আমি, নাজিম, বিল্লাল) অবস্থা খুবই খারাপ; দেশের বাইরে যাওয়া লাগবে। ক্ষণে ক্ষণে সমস্যা তৈরি হয়; পেট ফুলে যায়, পায়খানা হচ্ছে না ১০/১৫ দিন, বমি, চেহারা ফুলে যায়, কান থেকে পুঁজ পড়ে। এদিকে, পায়ের রডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে আরও ৬/৭ বছর আগেই। ওটা বের করা হয়নি। এটার কারণে পায়েও অনেক সমস্যা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কোনো নেতা, এমপি-মন্ত্রী এগুলো নিয়ে মাথা ঘামান না। কেউ কিচ্ছু করে নাই। শুধু নেত্রীই আমাদের খবর রাখেন। তিনি আমাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। নেত্রীর কাছে তো গত দুই বছর যাবৎ ভিড়তেই পারি না।’

গ্রেনেড হামলার বিচার নিয়ে রুমা বলেন, ‘বিচার তো হইছে, এটাতে আমরা সন্তুষ্ট না। যে মেইন মাফিয়া সে-ই তো বিদেশে। আমরা চাই, আমাদের মৃত্যুর আগে মূল ক্রিমিনাল তারেক রহমানসহ যারা যারা এটার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের ফাঁসি দেয়া হোক। আমরা তাদের ফাঁসি দেখে যেতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে যন্ত্রণা ভোগ করতেছি, ২০০৪ এ মারা গেলে হয়ত এত জ্বালা-যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো না। যতদিন যাচ্ছে, তত কষ্ট বাড়ছে। কারণ আগে তো জোয়ান ছিলাম, এখন বয়স বাড়ছে, সমস্যাও বাড়ছে। পয়ে জ্বালা-পোড়া, চুলকানি, রক্ত বের হওয়া, প্রচণ্ড ব্যথা, রাতে ঘুমাতে পারি না, চিল্লায়া উঠে যেতে হয়, বালতির পর বালতি গরম পারি ঢালতে হয়। কানে স্প্লিন্টার, পর্দা ফাটা, রক্ত বের হয়।’

২১ আগস্টের আহতদের একজন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন বলেন, ‘যে লোকটি এই ঘটনার (গ্রেনেড হামলা) মূল পরিকল্পনাকারী, আমাদের রক্ত বইয়ে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে, সে-ই লন্ডনে আয়েশে জীবনযাপন করছে। এটা কীভাবে সম্ভব? তার জন্য যাবজ্জীবন যথেষ্ট নয়। একজন নিহতের সন্তান হিসেবে ও একজন আক্রান্ত হিসেবে দাবি করি, ২১ আগস্ট ট্র্যাজেডির মূলহোতা তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে এনে তার রায় পুনর্বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হোক।’

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ঢাকার প্রয়াত মেয়র হানিফের আমরা যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারিনি। সেদিন নিজের জীবন বিলিয়ে তিনি নেত্রীর জীবন বাঁচিয়ে গেছেন।’

আরেকজন আহত নাজমুল হাসান নাজিম (৪৯) বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা এখন একটু খারাপ। বেশি ওষুধ খাইতে খাইতে কিডনিতে সমস্যা হয়ে গেছে। গত তিনদিন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে দৌঁড়াচ্ছি। টেনশনে পড়ে গেলাম। পা থেকে সারা শরীরে স্প্লিন্টার। এই ব্যথা বোঝানো যাবে না। পূর্ণিমায় অনেক ব্যথা করে, গরমকালে স্প্লিন্টারটা চুলকায়, রক্তাক্ত হয়ে যায়, শীতকালে হাত-পা অবশ হয়ে যায়, আর নার্ভের স্প্লিন্টারগুলো খালি দৌঁড়ায়, এটাই বেশি বেকায়দা।’

চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা না করলে তো বাঁচতে পারতাম না। নেত্রী দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসা দিয়ে এনেছেন। এ ঋণ শোধ করা যাবে না। আর এখনো সব সময় খেয়াল রাখেন। তবে যে টাকা দেয়া হয়, এটা যথেষ্ট নয়। প্রতি মাসে ৯/১০ হাজার খরচ হয়, দেয় ৫ হাজার।’

তিনি বলেন, ‘আমার এখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া জরুরি। করোনা ও টাকার কারণে যেতে পারিনি। যার কারণে জটিলতা বাড়ছে।’

বিচার নিয়ে নাজিম বলেন, ‘বিচারের রায় হয়েছে, এটি কার্যকরের অপেক্ষায় আছি। কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত সন্তুষ্ট হতে পারছি না। রায় কার্যকর হলে নিহতদের পরিবার ও আহতদের আত্মা শান্তি পাবে। খুনিদের পাশাপাশি মদদদাতারাও বিচারের আওতায় আসুক। প্রকৃত দোষীরা বিচারের আওতায় আসুক।’

উল্লেখ্য, ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ২০০৪ সালের এদিনে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে বর্বরোচিত এই গ্রেনেড হামলা হয়। সেদিন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী শাহাদাত বরণ করেন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে আঘাতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। আজও সে আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে সংগঠনের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় ঘাতকচক্র। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় গুলি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তার শ্রবণশক্তি চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ

সর্বশেষ - জাতীয়

আপনার জন্য নির্বাচিত