মানবতার পাশে রাজশাহীর পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঘটনাটি গত ২৯ মার্চের। সেদিন দুপুর দুইটার দিকে রাজশাহীর নগরীর মালোপাড়া এলাকায় রাস্তার ধারে পড়েছিলেন এক বৃদ্ধ। যার আনুমানিক বয়স প্রায় ৭০ বছর। এই অসুস্থ বৃদ্ধটি যেন কারো সাহায্য কামানা করছিলেন। কিন্তু করোনা সন্দেহে কেউ তাঁর কাছে ভয়ে যাচ্ছিলেন না। এসময় ওইদিন দিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টহল ডিউটি দেওয়ার সময় যাচ্ছিল একটি পুলিশের ভ্যান। রাস্তায় পড়ে থাকা বৃদ্ধকে দেখে গাড়িটি থেমে গেলো হটাৎ। এরপর গাড়ি থেকে নামলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সঙ্গে নামলেন এসআই শাহাদত হোসেন। তিনি ধিরে ধিরে এগিয়ে গেলেন বৃদ্ধের দিকে। কিন্তু এতোটা অসুস্থ বৃদ্ধ যে কথাটাটিও তাঁর মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না। এরপর বৃদ্ধকে এসআই শাহাদতসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা ধরে পুলিশের গাড়িতে তুলে নেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও নিয়ে যান এসআই শাহাদত হোসেন। সেখানে জরুরী বিভাগের চিকিৎসকরা বৃদ্ধকে দেখে জানান, করোনা ভাইরাসের রোগী নয়। বয়সের ভারে নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত তিনি। তার পর তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে। এরপর থেকে ওই বৃদ্ধকে কয়েকদিন হাসপাতালে গিয়ে নিজে হাতে খাইয়ে দিয়ে এসেছেন এসআই শাহাদত। এমনকি ওষুধও কিনে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু গত ১২ এপ্রিল সেই বৃদ্ধ শেষ পর্যন্ত মারা যান।

এসআই শাহাদত বলেন, ‘তিনি মারা যাওয়ার পরে আমি অনেকটাই কষ্ট পেয়েছি। এতোটা কষ্ট পেয়েছি যে মনে হচ্ছে নিজের কাউকে হারিয়েছি আমি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওই বৃদ্ধকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর পরিচয় খুঁজে পেতে এখনো আমি নানাভাবে চেষ্টা করছি। কিন্তু কেউ বলতে পারছে না তার পরিচয়।’

এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ে দেশজুড়ে ত্রাণের জন্য হাহাকার পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পরে রাজশাহীর দৃষ্টি প্রতিবন্ধিরাও পড়ের চরম বিপাকে। এই সংগঠনটির ১২০ জন সদস্য রয়েছে রাজশাহীতে। যাদের সবাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধি। সমাজের পিছিয়ে পড়া এই মানুষগুলো যখন ত্রাণ চাইতে যেতে পারছিলেন না কোথাও, ঠিক তখনই এগিয়ে আসে রাজশাহী জেলা পুলিশ। তাদের সকলকে চাল, ডালসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে জেলা পুলিশ সুপার মো: শহিদুল্লাহ। এছাড়া তাঁর উদ্যোগে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় থানার ওসিরা গুর ঘুরে ত্রাণ বিতরণ করছেন একেবারে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে। রাতের আঁধারে এসব ত্রাণ বিতরণ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম বলেন, আমরা গোপনে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি জেলায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। চৌকশ পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গঠিত এ টিম করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে জীবানুনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি করোনাভাইরাশ শনাক্ত রোগীদের বাড়িতে গিয়েও নানাভাবে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতেও এই টিম কাজ করছে।

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকেও হতদরিদ্র মানুষদের বাড়ি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এখানেও কোনো ধরনের প্রচারণা চালাতে নিষেধ করেছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ন কবির।

পাশাপাশি নগরীতে পুলিশের সাজোয়া জান দিয়ে ছেঠানো হচ্ছে জীবানুনাশক স্প্রে করা ছাড়াও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা ও করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীদের সাহায্যের জন্য একটি আলাদা টিম গঠন করা হহয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুধ কুদ্দুস।