মানবতাবিরোধী অপরাধ: সেলের পর সেল হলেও পলাতক আসামিরা নিশ্চিন্ত!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: গত ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গাজী আব্দুল মান্নান (৮০) ঢাকার কাঁচপুরে মারা গেলে, নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে পলাতক আসামি ধরতে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের সেলের কার্যকারিতা নিয়ে।

২০১৪ সাল থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের পলাতক আসামি ধরতে দুদফা উচ্চ পর্যায়ের সেল গঠন করার পরও এই সেল একজন পলাতককেও ধরতে সক্ষম হয়নি। সেলের নিয়মিত সভা হলেও তাদের নিজেদের কাজে সমন্বয়ের অভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কমিটির ভেতরের কেউ কেউ।

চিহ্নিত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান খান, জাহিদুল হক ওরফে খোকন কোন দেশে অবস্থান করছে, সে সম্পর্কে ধারণা থাকলেও তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের বিষয়ে কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বরং তারা নিশ্চিন্তভাবেই বিদেশে জীবন-যাপন করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, পলাতকদের গ্রেফতারে গঠিত দুটি সেলের একটি সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ধরতে এবং অন্যটি সকল পলাতক আসামি ধরতে গঠন করা হয়েছে। এদিকে আমাদের পক্ষ থেকে আসামি গ্রেফতারের এখতিয়ার না থাকায়, তদন্তের শুরুতেই আসামিদের অবস্থান জানতে পারলেও আমরা ধরতে পারি না।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৪ মে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ নিয়ে পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করে সরকার।পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে জানানো হয়, ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গত ২১ মে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।.

এর আগে ২০১৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের সাজা কার্যকরের বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি তদারকি সেল গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনোটিরই এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকারিতা দেখা যায়নি।

এই ব্যর্থতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে বলে মন্তব্য করেন তদন্ত সংস্থার সহ-সমন্বয়ক সানাউল হক। তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করার দায়িত্ব পুলিশের।

দায়িত্ব আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও। এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই। আমরা আবারও তাদেরকে পলাতক সকলের ছবি ও ঠিকানাসহ তালিকাসহ একটি চিঠি পাঠানোর কাজ করছি। কিন্তু সেলগুলো যে সভাগুলো করে সেগুলোর বিবেচনায় আপাতত আশান্বিত হওয়ার মতো কিছু দেখতে পাচ্ছি না।’

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামিদের বিষয়ে তদন্ত সংস্থা জানায়, এ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ২২ জনের মধ্যে একজন মারা গেছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত দুই জনসহ বিচারের বিভিন্ন পর্যায়ে পলাতক আছে মোট ৫৭জন।

পলাতকদের গ্রেফতারের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুযায়ী উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠনের পর সভা হয়েছে ১৩টি। কমিটির সর্বশেষ সভায় পলাতক আসামিদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনদের টেলিফোন নম্বর হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং এটি প্রস্তুত করে কমিটির কাছে দিলে বিভিন্ন সংস্থার কাছে সেই ফোন নম্বরগুলো মনিটরিং এ রাখার জন্য দেওয়া হবে বলে জানান তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা সানাউল হক। এর সমালোচনা করে এক কর্মকর্তা বলেন, পলাতক আসামি পালিয়ে আশেপাশে এবং নিজ সন্তানের বাসায় থাকার নজিরও আমরা দেখতে পেলাম।

তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক হান্নান খান বলেন, ‘পলাতক আসামির ব্যাপারে সবার মাঝেই কিছুটা হতাশা কাজ করে। যারা বিচারপ্রার্থী এবং আমরা যারা তদন্ত করে মাঠ থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণ আনছি, তাদের জন্য বিষয়টি দঃখজনক। কিন্তু আমরা গ্রেফতার করতে পারি না।’ তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে বারবার গ্রেফতারের ক্ষমতা চাওয়া হয়, অথচ প্রাথমিক তদন্তের সময় তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে পুলিশকে আসামির অবস্থান জানানো হয় কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু হয়ে সেটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার এবং শহর হলে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে যায়।আমাদের পক্ষ থেকে কিছু করা হয় না।’

 

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন