মাদক কারবারি সোহেল ইউপি চেয়ারম্যান: ফ্ল্যাটে তরুণীকে রেখে দিলেন দৌড়


নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাদক কারবারি সোহেলের বিরুদ্ধে এবার ফ্ল্যাটে এক তরুণীকে রেখে পালানোর অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার(০৯ ডিসেম্বর) বিকেলে সোহেল এক তরুণীকে নিয়ে রাজশাহী নগরীর থিম ওমর প্লাজা অবস্থিত তার ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে হানা দেয়। কিন্তু চেয়ারম্যান সোহেল তখন ওই তরুণীকে লুকিয়ে রেখে গোসল সেরে বের হচ্ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে জানা যায়, চেয়ারম্যান সোহেলের ফ্ল্যাটে পুলিশ প্রবেশ করে। তখন সন্ধ্যা হয়ে যায়। পুলিশ তার কাছে জানতে চান, ‘আর কে আছে ফ্ল্যাটে।’ চেয়ারম্যান বলেন, কেউ নেই তো। এরপর পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। ফ্ল্যাটের বাথরুমে তখন পাওয়া যায় ২২ বছরের এক তরুণীকে।

পুলিশ ফ্ল্যাট থেকে তরুণীকে বের করলেও চেয়ারম্যান সোহেল রানাকে ধরতে পারেনি। সোহেল কৌশলে সেখান থেকে বের হয়ে পালিয়ে এলাকায় চলে যান।

গোদাগাড়ীর একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ফ্লাটে তরুণীকে নিয়ে ঢোকার পরে পুলিশের হাত থেকে সোহেল বেঁচে গিয়ে এলাকায় একটি ইসলামি জলসায় যোগ দেন। থিম ওমর প্লাজার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় দেখা গেছে, ভবনের সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে পালিয়েছেন সোহেল। এর আগে গত ১১ নভেম্বর সোহেল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হলেও তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। এলাকায় গুঞ্জন আছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই সোহেলের পক্ষে কাজ করে নৌকা ডুবিয়েছেন।

থিম ওমর প্লাজায় সোহেলের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েছিলেন নগরীর শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর আলী। তিনি জানান, সোহেলের গ্রামের বাড়ি উজানপাড়া। আর ওই তরুণীর বাড়ি পাশের গ্রাম মাটিকাটায়। ফ্ল্যাট থেকে দুজনকে বের করে থানায় নেওয়া হবে, ঠিক এমন সময় দৌড়ে সোহেল পালিয়ে গেছেন। তাই তাকে ধরা সম্ভব হয়নি।’

আটকের পর ওই তরুণী পুলিশের কাছে প্রথমে দাবি করেন, তার জন্ম নিবন্ধন সনদে ভুল আছে। সেটি ঠিক করে দেওয়ার জন্য সোহেল তাকে ফ্ল্যাটে আনেন। তবে সোহেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বই গ্রহণ করেননি। তার শপথও হয়নি। নিবন্ধন সনদ তিনি ঠিক করতেই পারবেন না। পরে জেরার মুখে ওই তরুণী সোহেলের সঙ্গে আশালীন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এ কারণে দুজনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। শুক্রবার ওই তরুণীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সোহেলকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, এক যুগ আগেও সোহেল রানা ছিলেন একজন বাসের হেলপার। তারপর হেরোইনের ব্যবসায় জড়িয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এনিয়ে দৈনিক কালের কন্ঠে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এরপর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও সোহেলের মাদক কারবারি বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরীর করা থিম ওমর প্লাজায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। সেখানে তার দোকানও আছে। কয়েকটি ট্রাকসহ আরও অনেক সম্পদের মালিক গোদাগাড়ী থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত এই মাদক কারবারি। বছর দুয়েক আগে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার হলে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন।

তবে মাটিকাটা ইউপি নির্বাচন ঘনিয়ে এলে দলীয় মনোনয়ন পেতে তোড়জোড় শুরু করেন। মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। ছড়ান কাড়ি কাড়ি টাকা। জিতেও যান। তবে ভোটে জেতার এক মাস না পেরোতেই নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লেন তিনি। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকদফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

জেএ/এফ