মসজিদে বিস্ফোরণের দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে: হাইকোর্ট

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। শুনানিতে আদালত বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় এতগুলো মানুষ মারা গেল, এর দায় কাউকে না কাউকে নিতেই হবে। দায় এড়ানো যাবে না।

মঙ্গলবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তার সঙ্গে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মার ইয়াম খন্দকার। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. নুর-উস-সাদিক।

তৈমুর আলম খন্দকার শুনানির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালত রাষ্ট্রপক্ষ এবং আমাদের শুনানি গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় এতগুলো মানুষ মারা গেল, এর দায় কাউকেনা কাউকে তো নিতেই হবে। এখানে দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, শুনানিতে আমরা সংবিধানের ৩২ ধারা তুলে ধরে বলেছি, মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, এখানে দেখা গেছে গ্যাসের লিকেজ থেকেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনার আগে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। তারা মেরামতের জন্য ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে।

আইনজীবী বলেন, ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি যদি মিথ্যাও হয়ে থাকে তারপরও এটা মেরামতের দায়িত্ব তো তিতাসের।

তিনি বলেন, যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নত করে ব্যব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশনা চেয়েছি। আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেছেন।

শুনানিতে ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. নুর-উস-সাদিক বলেন, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনাটি এখনও তদন্তাধীন। এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখনও বলা যাচ্ছে না কারা এ ঘটনার জন্য দায়ী।

তিনি বলেন, তদন্তে যদি আসে যে মসজিদ কমিটির গাফিলতি ছিল, তাহলেতো এই রুলের কার্যকারিতা থাকবে না। সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আমাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় দেন। আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য রেখেছেন।

এদিকে নুর-উস-সাদিক বলেন, শুনানির পর মঙ্গলবার বিকালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে, মসজিদটি রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে করা হয়েছে। যেহেতু মসজিদ ধর্মীয় ব্যাপার, এখানে মানুষজনের একটা আলাদা ইমোশন জড়িত। এজন্য আমরা বাধা দিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি।

গত সোমবার নারায়ণগঞ্জের পশ্চিমতল্লা এলাকার বায়তুস সালাত মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে এ রিট দায়ের করা হয়। এছাড়াও ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিটে নির্দেশনা চাওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মার ইয়াম খন্দকার জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। রিটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সচিব, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার ওই মসজিদে বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন ৩৭ জন মুসল্লি। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে এ পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

গত ৬ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। পরে আদালত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করে আইনজীবীকে রিট আবেদন করতে বলেন।

যুগান্তর