সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
উত্তরের পর এবার দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ীর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
ফরিদপুরে বেড়িবাঁধ ভেঙে পদ্মার পানি ঢুকে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাচারীবাড়ি ও আদালত ভবনে পানি উঠেছে এবং ৫৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, সোমবার গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার যথাক্রমে ১০০, ৬০ ও ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার হ্রাস পেলেও ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বর পয়েন্টে এ নদীর পানি যথাক্রমে ২ ও ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
মধ্য জুলাই থেকে বন্যায় ইতোমধ্যে দেশের ১৬ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যাতে এ পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানালেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ৪২ জন।
স্বাভাবিক বন্যায় দেশের ২০-২৫ শতাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও এবার ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশের মতো এলাকা প্লাবিত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন।
তবে উজানে বৃষ্টিপাত কমতে থাকায় শুক্রবার থেকে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকায় পানি কমছে। এতে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে।
এদিকে গঙ্গা স্থিতিশীল থাকলেও পদ্মার পানি বাড়তে থাকায় মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও দুদিন অবনতি ঘটতে পারে।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের প্রকৌশলী সাজ্জাদ বলেন, “উত্তরাঞ্চলে উন্নতি হতে থাকলেও মধ্যাঞ্চলের পরিস্থিতি অবনতিশীল থাকবে আরও দুদিন। পদ্মাসংলগ্ন জেলার নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হচ্ছে।”
তবে সার্বিকভাবে এ সপ্তাহেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে আশা প্রকাশ করেন বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের এই প্রকৌশলী।
সরকারি হিসাবে, এ পর্যন্ত বন্যায় ১৬ জেলার ৭২টি উপজেলার ৩৭৮ ইউনিয়নের ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি আট হাজার ১৪০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে।
ফরিদপুরে বাঁধ ভেঙে ১৫ গ্রাম প্লাবিত
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের নতুনডাঙ্গি এলাকায় পদ্মা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়েছে প্লাবিত প্রায় ২৫ হাজার পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাঁচা বেড়িবাঁধের প্রায় একশ মিটার অংশ ধসে যায়। এরপর প্রচণ্ড তোড়ে বাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে।
ঘরবাড়ি থেকে মানুষ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সরবরাহ না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ ও শিশুরা।
গাজীরটেক ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে জয়দেব সরকারের ডাঙ্গী, চরওযুদ্ধা ছিটা ডাঙ্গী, ঢালার পাড়, চর হোসেনপুর, শিকদার ডাঙ্গী, কোহেল মাতুব্বরের ডাঙ্গী, চর অমরাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী নবীন ফকির জানান, প্রচণ্ড স্রোতে লুৎফর মোল্যা ও হাজী মো. মোচনের বাড়ি কয়েক মিনিটের মধ্যে ভেসে গেছে।
পানি ওঠায় চর আলীয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চর নটাখেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, পদ্মার পানির তোড় খুব বেশি হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বাঁধ রক্ষা করা যায়নি।
বাঁধটি আবার নির্মাণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী বলেন, বন্যা প্লাবিত এলাকার তিন হাজারের বেশি পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থের সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পানিবন্দি মানুষগুলোর জন্য প্রতিটি উপজেলায় ৪৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, এছাড়াও তিনটি উপজেলার সরকারি দপ্তর সমূহের ছুটি বাতিল করা হয় বলে জানানো হয়েছে।
ভাঙনের মুখে দৌলতদিয়া ঘাট
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। রোববার রাত থেকে ২ নম্বর ফেরিঘাট সচল করা হলেও ৪ নম্বর ফেরিঘটের অ্যাপ্রোচ সড়কে ভাঙন এবং তীব্র স্রোতের কারণে পন্টুন নষ্ট হওয়ায় গত চার দিন ধরে ঘাটটি দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে।
পানি বৃদ্ধির ফলে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও উজানচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, এ ইউনিয়নের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি এবং ২শ পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার একটি তালিকা করা হয়েছে।
স্থানীয় বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যাপস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, তিন দিন বন্ধ থাকার পর ২ নম্বর ফেরিঘাটের মেরামত কাজ শেষ করে রোববার রাত থেকে এ ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার শুরু হয়েছে। তবে ৪ নম্বর ঘাটটি কাজ শেষ করতে আরও ৩/৪ দিন সময় লাগতে পারে।
“দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরির মধ্যে ১২টি চলাচল করছে। বাকি পাঁচটি ফেরির ইঞ্জিন দুর্বল থাকায় নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে তা চলাচল করতে পারছে না।”
বর্তমানে ট্রাক ও যাত্রীবাহী পরিবহনসহ পাঁচ শতাধিকসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নদীপারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে তিনি জানান।
শরীয়তপুরে লক্ষাধিক পানিবন্দি
সদর, জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।
বন্যার পানির সঙ্গে প্রবল বর্ষণের কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডুবা, পালেরচর, বড়কান্দি, বিলাসপুর, কুন্ডেরচর, নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা, নওপাড়া, কেদারপুর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা, তারাবুনিয়া, গোসাইরহাট উপজেলার আলালপপুর, কোদালপুর, কুচাইপট্টি, শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর, চন্দ্রপুর, চিতলীয়া ও ডোমসার ইউনিয়নের অন্তত ৮০ গ্রামের ২ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। রান্না করার স্থানও কোনো কোনো এলাকায় নেই। দেখা দিয়েছে গো খাদ্যের সংকট।
চরনড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজী অসিমমদ্দিন মাদবর কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরত খার কান্দি সরকারি জগৎ জীবনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পালেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে ১২টি বিদ্যালয় পাঠ দান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে শিক্ষা কর্মকর্তারা জানান।
এছাড়া কাজিয়ারচর সলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মান্নান মল্লিকের কান্দি উচ্চ বিদ্যালয়, ডি, এম পাইলট জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৫টি উচ্চ বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পানিবন্দি আব্দুল হালিম, আব্দুল মজিদ, আজিজুল হক, মোর্শেদা বেগম, পারুল বেগম, রুপবান বিবি, সিরাজ বেপারী, তৈয়ব আলী মোল্য, জব্বার হাওলাদার ও রওশন আরা বেগম বলেন, ৭-৮ দিন ধরে তারা পানিবন্দি।
তাদের গরু-ছাগল নিয়ে খুবই সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
চর নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমনা আক্তার বলেন, “বন্যার পানিতে আমাদের স্কুল ডুবে গেছে। স্কুলে যাওয়ার রাস্তাও তলিয়ে গেছে। আমরা এখন স্কুলে যেতে পারছি না। তাই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে।”
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা মোকাবলার জন্য রোববার জরুরি সভা করা হয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য ১২৫ মেট্রিক টন ত্রাণের চাউল, সাত লাখ টাকা ও শুকনা খাবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা চলছে।
রবীন্দ্র কাচারীবাড়ির আঙিনায় পানি
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর এলাকায় অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কাচারীবাড়ি, ঐতিহ্যবাহী শাহ মখদুম জামে মসজিদ এবং উপজেলা চত্বরে অবস্থিত কোর্ট ভবনে বন্যার পানি ঢুকেছে।
এছাড়া উপজেলার রাউতারা এলাকার রিং বাঁধ, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং কয়েকশ বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া চলনবিঞ্চালনের বিস্তৃর্ণ এলাকা ও গো-চারন ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দুগ্ধভান্ডার হিসাবে খ্যাত শাহজাদপুরে গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের আবাদি ফসল।
শাহজাদপুর আদালতের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জানান, জেলা সদরের বাইরে দীর্ঘদিন যাবত শাহজাদপুর উপজেলা চত্বরের একপাশে অবস্থিত একটি ভবনে শুধু এই উপজেলার লোকজনের জন্য আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
“রোববার বিকালে আদালত চত্বর ও ভবনের অভ্যন্তরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে আদালতে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু মামলার নথিপত্র পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।”
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আহম্মেদ বলেন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১ লাখ ৬৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৩৭ হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৬৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপনও নিজ তহবিল থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম জানান, গত কয়েক দিনে বন্যার পানি প্রবেশ করায় জেলার ১৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্টানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ সদরের ১১টি, কাজিপুরের ১১টি, শাহজাদপুরে ৩৭টি, চৌহালীতে ৩৬টি, উল্লাপাড়ায় ১৭টি, বেলকুচিতে ২৯টি তাড়াশ উপজেলার ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
যমুনা নদীর পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুনরায় পাঠদান শুরু করা যাবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
১৬ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জামালপুর জেলার সাত উপজেলার ৫২ ইউনিয়ন প্লাবিত। এক লাখ ৭৮ হাজার ৩৯৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। পানিতে ডুবে ও বানে ভেসে মারা গেছে ৪ জন।
কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার ৫৭টি ইউপি’র এক লাখ ২৫ হাজার ১৭১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। এখানে মারা গেছে শিশুসহ ৪ জন। নদী ভাঙনেও বিলীন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ঘরবাড়ি।
নিলফামারীর দুই উপজেলার ৮টি ইউপি’র ১৯ হাজার ২০০ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত।
ফরিদপুরে পাঁচ উপজেলার ১৭টি ইউপি প্লাবিত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার ১৭২টি পরিবার। বন্যার পানিতে মারা গেছে ১ জন।
রংপুরে তিন উপজেলার ১১টি ইউপি’র ছয় হাজার ৮৫৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত।
মানিকগঞ্জে ছয় উপজেলার ৩৫ ইউপি’র ২৩ হাজার ৫০৬টি পরিবার, রাজবাড়ীতে দুই উপজেলার ৭টি ইউপি’র ১০ হাজার ৭০৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সিরাজগঞ্জে পাঁচ উপজেলার ৪০টি ইউপি’র ১ লাখ ১০ হাজার ৭৯৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জে ৭০০টি পরিবার ও টাঙ্গাইলের ছয় উপজেলার ৩৯ হাজার ৭০৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বগুড়ায় তিন উপজেলার ১৮ ইউপি’র ২৪ হাজার ২০০ পরিবার; লালমনিরহাটে পাঁচ উপজেলার ২৬টি ইউপির ৪৯ হাজার ৮৬০টি পরিবার; গাইবান্ধার চার উপজেলার ৩৩টি ইউপি’র ৫৩ হাজার ৫২০টি পরিবার; রাজশাহীর দুই উপজেলার ১৫০টি পরিবার; শরীয়তপুরের চার উপজেলার ৯৮৮টি পরিবার এবং মাদারীপুরের চারটি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি
বন্যায় প্রায় অর্ধশত মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেল্থ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাখাওয়াত হোসেন জানান, গত ২৫ জুলাই থেকে বন্যা উপদ্রুত ১৬ জেলায় এ পর্যন্ত ৪২ জন মারা গেছে। এর মধ্যে পানিতে ডুবে ৩৮ জন ও সাপে কেটে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সংকটের পাশাপাশি ডায়রিয়া, চর্ম রোগসহ নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তায় ৬১০ জন আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায়; আর চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩১৭ জন।
সাখাওয়াত বলেন, “স্থানীয় সিভিল সার্জনের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইন, এন্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এরপরও প্রয়োজনীয় চাহিদা সাপেক্ষে আগামী এক মাসের প্রস্তুতিও রাখা হচ্ছে।”
তবে এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত ২১ জন মারা গেছে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের জরুরি সাড়াদান কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ১৬টি জেলার ৭২টি উপজেলার ৩৭৮ ইউনিয়নের ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৮ হাজার ১৪০টি পরিবারের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
গত ৫ দিনে জামালপুরে চার জন, কুড়িগ্রামে ৩ জন, ফরিদপুরে একজন, গাইবান্ধায় ১ জন মারা গেছে। এর আগেই ১২ জন মারা গেছে বন্যায়।
বন্যায় রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের পাশে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ ও সহায়তা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
সূত্র: বিডিনিউজ