ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত রাজশাহীর জনজীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী কলেজের অনার্স (স্নাতক) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হুরাইয়া পারভীন। থাকেন নগরীল কাদিরগঞ্জের একটি মেসে। এরই মধ্যে তার শেষ বর্ষের পরীক্ষা চলছে। তাই এই সময় রাত-দিন পড়ায় মনোযোগ হুরাইয়ার। কিন্তু দিন-রাত বিদ্যুতের সমানতালে যে হারে লোডশেডিং হচ্ছে-তাতে অধিকাংশ সময় পড়তে বসতেই পারছেনই না তিনি। ফলে অনেক বিরক্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। আবার রাতেও ঠিকমতো না ঘুমাতে পেরে দিনের বেলাতেও ভালো করে পড়তে বসতে পারছেন না বিদ্যুতের অত্যাচারের কারণে। রাজশাহীতে চলমান ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া লোডশেডিংয়ে এমন পরিস্থিতিতেই পড়েছে এখানে অধ্যায়নরত সব শিক্ষার্থীরা। লোডশেডিং আর তীব্র গরমে যেন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহীর জনজীবন।

একবার বিদ্যুৎ গেলে দুই-তিন ঘন্টার মতো হাওয়া হয়ে থাকছে। আবার বিদ্যুৎ আসার পরে সর্বোচ্চ এক ঘন্টাও কখনো কখনো থাকছে না। ফলে বিদ্যুত যাচ্ছে না, বরং বলা যায় মাঝে মাঝে আসছে।

বিদ্যুতের এমন চরম বিপর্যয় নিয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্বেগেরর পাশাপাশি হুমকিও দেওয়া হয়েছে কার্যালয় ঘেরাও করার। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। বরং বেড়েই চলেছে অসহনীয় লোডশেডিংয়ের মাত্রা। আর তাতেই নাকাল হয়ে পড়েছেন গোটা রাজশাহী অঞ্চলেরই জনজীবন। রাজশাহী জেলাসহ আশে-পাশের জেলাগুলোতেও থামছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। যেন কোথাও শান্তিতে নেই মানুষ। ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয় চলছে গোটা রাজশাহী অঞ্চল জুড়েই। কিন্তু অদ্যবধি বিদ্যুৎ নিয়ে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে দিনের পর দিন মানুষের মাঝে ক্ষোভ এবং হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ নিয়ে।

সামাজাকি গণমাধ্যমগুলোতেও মাসের মাসের পর ধরে চলা বিদ্যুতের এমন চরম বিপর্যয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

লোডশেডিংই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর বিদ্যুৎ, সেটি আসার দিকে যেন চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকতে হচ্ছে। বলা যায়, ভয়াবহ বিদ্যুত বিপর্যয়ের কবলে রাত-দিন পার করছেন রাজশাহীবাসী। মহানগরীসহ গোটা জেলা এমনকি রাজশাহীর আশে-পাশের জেলাগুলোতেও চরম লোডশেডিংয়ে নাকাল হয়ে পড়েছেন মানুষ। দিন-রাত মিলে যেন ৯ ঘন্টাও বিদ্যুতের দেখা মিলছে না।

বিদ্যুতের এই চরম বিপর্যয়ে তীব্র গরমে যেন হাসফাঁস করতে হচ্ছে মানুষকে। গরম বাড়লে বাড়ছে লোডশেডিং-এর মাত্রা। অবস্থা এমন যেন গরমের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ ণিয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের বিদ্যুত ব্যবস্থা। একবার বিদ্যুৎ গেলে দুই থেকে তিন ঘন্টার আগে তার আর দেখা মিলছে না। দিন-রাত বিদ্যুতের লুকোচুরিতে যেন নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে রাজশাহীবাসীকে।

বিদ্যুৎ না থাকায় অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে রাজশাহীর কল-কারখানাসহ দোকান-পাটও। বিশেষ করে ইলেক্ট্রোনিক্স নির্ভর দোকান-গুলো নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। যেন ঠিকমতো খুলতেই পারছেন না কেউ কেউ। এই অবস্থায় কেনাকাটায়ও নেমেছে ধস। বিদ্যুতের অভাবে থমকে যাচ্ছে অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা কোম্পানীগুলোর কার্যক্রম। চার্জ দিতে না পারায় অনেক মানুষের অতি প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অফিসিয়াল কাজের ল্যাপটপটিও।

রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী সিল্কসিটি নিউজকে জানান, গত কয়েক দিন ধরেই বিদ্যুতের বিপর্যয়ে চরম অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। এমনিতেই হার্ট এবং পেশারের রোগী। এর মধ্যে বার বার লোডশেডিং-এর কারণে বাড়িতে যেন দাঁড়াতেও পারছেন না। বাইরেও দিনের বেলা তীব্র গরমে ঘুর-ফেরা করতে পরেছেন না। আবার রাতে মশার যন্ত্রণা। গত কয়েক মাস ধরেই রাজশাহীতে এমন অবস্থা বিরাজ করছে।

মুঞ্জর রহহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, দিনের বেলা তো বিদ্যুত থাকছেই না। আবার রাতে যে একটু শান্তিতে ঘুমাবো তারও উপায় নাই। এই ধারাবাহিকতায় সোমবার দিবাগত রাতজুড়ে দফায় দফায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বিরাজ করেছে। সেই সঙ্গে তীব্র গরমে যেন নাকাল হতে হয়েছে। সোমবার রাতজুতে দফায় দফায় লোডশেডিং দেখা দেয়। শুরুটা হয় সন্ধ্যা থেকেই। চলে একেভারে ভোর পর্যন্ত।

শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহীতে বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনেও প্রভাব পড়ছে বলে অনেকের অভিযোগ। নোট, বইসহ অন্যন্য জিনিসপত্র ফটোকপির করতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করছেন অনেকেই। তথ্য প্রযুক্তির যুগে সামন্য সময় বিদ্যুৎ না থাকলেই পড়তে হয় বিভিন্ন রকম বিড়ম্বনার।

 

বিদ্যুতের এমন লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসরিন ইয়াসমিন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ চাহিদা মতো না পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। জাতীয় গ্রীড থেকেই বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ মিলছে।’