ভ্যাটের আওতা বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নতুন অর্থবছরে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াই ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন ভ্যাট আইন। এতে আইনে মূল উদ্দেশ্য ভ্যাটের আওতা বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।

কারণ মাঠপর্যায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) সরবরাহ সম্ভব হয়নি ও টার্নওভারের তালিকাভুক্তি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যম সারির ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ে পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

পুরনো ১৯৯১ সালের আইনে শুধু আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে এবং সেবার ওপর ভ্যাট ছিল। সেখানে নতুন আইনে আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায় এবং সেবার সরবরাহ ও আমদানির ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।

তা ছাড়া অস্থাবর সম্পত্তি, লিজ, গ্রান্ট, লাইসেন্স, পারমিট, অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদিও ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাটের আওতা বাড়াতে নতুন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পর্যাপ্ত অবকাঠামো এনবিআর এখনও করতে পারেনি। আইনে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি এবং ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ক্ষেত্রে টার্নওভার ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে।

এ অব্যাহতি বা টার্নওভারের মাপকাঠি কী হবে তা পরিষ্কার নয়। এটা কী ব্যবসায়ীদের সংরক্ষিত হিসাবপত্রের মাধ্যমে হবে, নাকি এনবিআরের কর্মকর্তারা নির্ধারণ করবেন, সেটা পরিষ্কার নয়। এসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এনবিআরের দূরত্ব আরও বাড়তে পারে। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে ইসিআর মেশিন সরবরাহ করার কথা থাকলেও এনবিআর সেটা পারেনি।

নতুন আইনে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে ২৪ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, বিউটি পার্লার, তৈরি পোশাকের দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপারশপ, সিনেমা হল, কোচিং সেন্টার, আসবাবপত্র বিক্রয় কেন্দ্র। বিনামূল্যে এনবিআর থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন সরবরাহ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইএফডি মেশিনের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়নি।

ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ইএফডি মেশিন আমদানিকারক চূড়ান্ত হয়নি। তবে চলতি মাসেই মেশিন আমদানি সম্পন্ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

অন্যদিকে পুরনো আইনের অধীনে ছোট ব্যবসায়ীরা বার্ষিক ২৮ হাজার টাকা হারে প্যাকেজ ভ্যাট দিতেন। নতুন আইনে প্যাকেজ প্রথা বিলুপ্ত করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাবিক্রিকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

অর্থাৎ বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে ভ্যাট দিতে হবে না। এক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম নাকি বেশি তা নির্ধারণের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। ভ্যাট কর্মকর্তারা এটি নির্ধারণ করে দেবেন, নাকি ব্যবসায়ীদের ঘোষণা মেনে নেয়া হবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনে আতঙ্ক কাজ করছে।

পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ভ্যাট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেবে। কারণ ভ্যাট কর্মকর্তার ইচ্ছাকেই যদি ভ্যাট অব্যাহতি বা টার্নওভারের সীমার নির্ণায়ক ধরা হয়, তাহলে হয়রানি বাড়বে।

কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত মানতে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হবেন। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়বে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। টার্নওভার ট্যাক্স ৪ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। অথচ পাইকারি ব্যবসায় ৪ শতাংশ মুনাফা করা যায় না। এখন ব্যবসায়ীদের টার্নওভার ট্যাক্স দিতে বাধ্য করলে তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবেন। তখন আবার ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করা হবে।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের মহাসচিব ও এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব বলেন, শুরু থেকেই পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা নতুন ভ্যাট আইনের বিরোধিতা করে আসছিলেন। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আইনে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। কিন্তু সেটা বাস্তবতার নিরিখে করা হয়নি। যেমন নতুন আইন অনুযায়ী, ১৩ হাজার ৭০০ টাকা দৈনিক যে বিক্রি করবে তাকে ভ্যাটের আওতায় আনা হয়েছে।

এ পরিমাণ বেচাকেনা বর্তমানে চায়ের দোকানেও হয়। পুরান ঢাকার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এখন পাইকারি ব্যবসায়ীদের টার্নওভারের মধ্যে আনলে ভ্যাটের বোঝার কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বছরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনাকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এ হিসাব মতে, কোন ব্যবসায়ী ভ্যাটের আওতার বাইরে, আর কে ভেতরে থাকবেন তা স্পষ্ট করা হয়নি। যদি ভ্যাট কর্মকর্তাদের এ ক্ষমতা দেয়া হয়, তাহলে হয়রানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।