ভোটের রাজনীতির শিকার সাঁওতালরা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নির্বাচনের আগে ইক্ষু খামারের জমিতে ঘর বানানোর জন্য সাঁওতালদের সহযোগিতা করেছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বাররা। এমনকি সাঁওতাল পরিবারগুলোকে খামারের ভিতরে জমি মেপে দিয়েছিলেন তারা নিজেরাই। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর ভোল পাল্টে ফেলেন তারা।

 

যে ঘরগুলো তুলতে এক সময় সহযোগিতা করেছিলেন, ৬ ডিসেম্বর সেই ঘরগুলোই আবার পুড়িয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন সেই চেয়ারম্যান মেম্বাররা।

 
শনিবার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দা টাডু টুডু বলেন, ‘৫নং সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ বুলবুল নির্বাচনের আগে আমাদের দড়ি দিয়ে মেপে মেপে ঘর বানানোর জন্য জমি দিয়েছিলেন। মে মাসে সাহেবগঞ্জ বস্তিতে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ত্রাণ দিয়েছিলেন। এরপর আমাদের অনেককে ঘর বানানোর জন্য জমিও দিয়েছিলেন।

 

তিনি বলছিলেন, আমাদের কোনও সমস্যা হবে না। এই জমি আমরা পাবো। মেম্বার শাহ আলমও তার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আমাদের খেয়াল আর নেন না তিনি। উল্টো চেষ্টা করছেন আমাদের উচ্ছেদের জন্য।’

 
টাডু টুডু বলেন, ‘৬ ডিসেম্বর সব চেয়ারম্যান-মেম্বর মিলে প্রশাসনের সহায়তায় আমাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেন। পুলিশ আগুন দিয়েছে। চেয়ারম্যান শাকিল নিজেই আমাদের লোকজনকে পিটিয়েছেন।’

 
সাঁওতালদের ঘর ছাড়াও আসিয়া নামের এক নারীর ঘর সেদিন আগুনে পুড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘শাকিল আমাদের খামারের ভেতরে ঘর তৈরি করতে বলছেন। আবার শাকিলই ঘর পুড়িয়েছেন।’

 
সাঁওতাল পল্লীর আরেক বাসিন্দা নীল মনী সরান বলেন, ‘আমাদের কী ঠেকা পড়েছে যে আমরা খামারের জমিতে ঘর করব? আমাদের এখানে ঘর বানাতে বলছেন চেয়ারম্যান শাকিল ও মেম্বাররা। তারা দড়ি দিয়ে জায়গা মেপে দিছেন। তারপর আমরা ঘর বানিয়েছি। এখন তারাই আমাদের এই অবস্থা করছেন।’

 

 

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমাদের ত্রাণ দিছেন শাকিল। মাইকে বক্তব্য দিছেন আমাদের এখানে ঘর করে থাকার জন্য। কিন্তু তিনি এখন আমাদের চিনেন না।’

 
গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে চারটি বস্তি রয়েছে। এই বস্তিগুলোতে চার থেকে সাড়ে চারশ’ পরিবারের বাস। এই পল্লীতে ভোটারের সংখ্যাও পাঁচ শতাধিক। পল্লীর বাসিন্দারা বলছেন, নির্বাচনে তাদের ভোট পাওয়ার জন্যই তখন খামারের মধ্যে তাদের জায়গা দেওয়া হয়েছিল, ত্রাণ দেওয়া হয়েছিল।

 
তবে সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ বুলবুল তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিপুলে ভোটে জয়লাভ করেছি। একটি গ্রুপ এখন তাদের আমার বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে।’

 
চেয়ার‌ম্যান শাকিল বলেন, ‘সাঁওতালদের ভোট মাত্র ২৭৫টি। অথচ বলা হচ্ছে, আমি নাকি তাদের দুই/তিন হাজার ভোট পেয়ে জয়লাভ করছি। একটি গ্রুপ বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। গত ১৯ জুলাই ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল ও আদিবাসীদের সংগঠনের নেতারা এখানে এসে সমাবেশ করেন। এরপর আদিবাসীরা দিনাজপুর, রংপুর, পাঁচবিবি থেকে এসে এখানে ঘর করে। তারা তাদের নিজ গ্রামে আগেও ছিল, এখনও আছে।’

 
শাকিল আরও বলেন, ‘আমি ছোট মানুষ, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এত চাপ নিতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে শুধু সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দাদের কথা শোনা হচ্ছে। এলাকার অন্যান্য মানুষের কথা কেউ শুনছেন না। আমি সব পক্ষের চেয়ারম্যান। আমি কেন তাদের (সাঁওতাল) ক্ষতি করতে যাব?’

 
প্রসঙ্গত, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ-বাগদা ইক্ষু খামারে ৬ নভেম্বর পুলিশ ও আখ শ্রমিকদের সঙ্গে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতালের মৃত্যু হয়। আহত হন পুলিশসহ ৩০ জন। এ ঘটনায় তিনটি মামলাও দায়ের করা হয়। এরই মধ্যে খামারের জমি থেকে সাঁওতাল উচ্ছেদের একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। ওই ভিডিওতে সাঁওতালদের বাড়িতে পুলিশকে আগুন লাগাতে দেখা গেছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন