ভিন্ন রকম এক বর্ষার শুরু দেখলো রাজশাহীবাসী

জেসমিন আরা ফেরদৌস। পুরনো ছবি

জেসমিন আরা ফেরদৌস:

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে। ওগো,আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।’ কবিগুরুর এ উক্তিকে সঠিক প্রমাণ করে আজ প্রকৃতিও যেন সকলকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছিলো সকাল থেকেই৷ তার ওপর আছে লকডাউনের বিধিনিষেধ। যার ফলস্বরূপ আষাঢ়ের প্রথম দিন অনেকটা গৃহবন্দীই ছিল নগরবাসী। তাই একদিকে বাদলের ঘন বর্ষা অন্যদিকে করোনা মহামারীর কারণে সর্বাত্মক এই লকডাউনে এবার ভিন্ন রকম এক আষাঢ় দেখলো রাজশাহীবাসী।

হ্যাঁ সত্যিই তা। আজ (১৫ জুন) মঙ্গলবার। পহেলা আষাঢ়, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ। প্রকৃতির নিয়মেই ষড়ঋতুর রঙ্গমঞ্চের দ্বিতীয় পর্ব বা বর্ষা হাজির হয়েছে প্রকৃতিতে। প্রকৃতি সেজেছে তার নতুন সাজে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ শেষে প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়  শুধুই সবুজ আর সবুজ। ফুলের সৌরভে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে চারিদিক। ফুটতে শুরু করেছে কদম, জুঁই, কামিনী, বকুলের মতো স্নিগ্ধসাদা ফুল।

বর্ষা ঋতুকে আখ্যায়িত করা হয় প্রেম ও বিরহের ঋতু হিসেবে। এই আষাঢ়ের বৃষ্টিই কখনো কখনো প্রেমিক মনে জাগিয়ে তোলে বিরহের রিক্ত বেদনা। তাইতো কথার যাদুকর হুমায়ুন আহমেদ বলে গেছেন ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বর্ষায়’।

তবে এই বর্ষা সকলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে না বরং কারো কারো জন্য অভিশাপ ও বয়ে নিয়ে আসে। বিত্তবানেরা জানালার ধারে বসে কফির কাপে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করলেও নিম্নবর্গের মানুষদের পেটের জ্বালা নিবারণ করতে নামতে হয় রাস্তায়। আর তাই লকডাউন আর বৃষ্টি উপেক্ষা করেও কাক ভেজা হয়ে ভিজে রাস্তায় প্যাসেঞ্জার নিয়ে যেতে দেখা গেছে অনেক রিক্সাচালকদের।

সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হতে দেখা হলেও বিকালে প্রকৃতি ছিলো বেশ শান্ত। আকাশে তুলোর পাঁজার মতো মেঘ ভেসে বেড়াতে দেখা গেছে।লকডাউন উপেক্ষা করে বৃষ্টি বাদল মাথায় নিয়েও অনেক কপোত-কপোতীকে চুপি চুপি একসাথে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর আবারো আষাঢ় তার মূর্ত প্রতীক নিয়ে এ ধরায় হাজির হয়। অঝর ধারায় ঝরাতে শুরু করে বৃষ্টি।

তবে এমন ভিন্ন প্রকৃতির আষাঢ় যেন বার বার ফিরে না আসে এমনটাই আমাদের কামনা। কেননা- করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশ তথা পুরো বিশ্ব আজ নিস্তব্ধ। বিশেষ করে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা রাজশাহীর পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই নাজুক। প্রকৃতিতে আগামীর আষাঢ় যেন শুধুই দখলে থাকে বর্ষার। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, প্রেমিক-প্রেমিকাসহ নানা বয়সী মানুষ যেন আগামী বর্ষার শুরুর দিনটা প্রাণ খুলে যার যা ইচ্ছা সেটি পূরণ করতে পারে এমনটাই প্রত্যাশা।

লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

এএইচ/এস