ভাড়াটের প্রতি মানবিক হোন

জীবন ও জীবিকার তাগিদে তথা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি বা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার আশায় মানুষের ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা বহু আগে থেকেই।

এসব মানুষ ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। করোনা মহামারীর এই সংকটকালে এসব ভাড়াটে বিপাকে পড়েছেন। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকে সময়মতো ভাড়া দিতে পারছেন না।

এতে অনেক বাড়িওয়ালাই ভাড়াটেদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন বলে জানা গেছে। এমনকি ভাড়াটেদের বাসা থেকে সপরিবারে বের করে দেয়ারও খবর আছে। এ ধরনের আচরণ শুধু অমানবিকই নয়, আইনবিরুদ্ধও বটে।

বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের। আইন লঙ্ঘন করে ইচ্ছামতো ভাড়া নেয়া, ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া, ভাড়া নিয়ে রসিদ না দেয়া, ঔদ্ধত্যমূলক আচরণ করা ইত্যাদি ঘটনা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে।

শুধু ঢাকায় নয়, দেশের অন্যান্য বড় শহরেও এমন ঘটনা লক্ষণীয়। মূলত আইন প্রয়োগ না হওয়াই বাড়িওয়ালাদের এমন অনিয়ম ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণ। করোনার এই সংকটকালেও আইন ও সরকারের কঠোর নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে অনেক বাড়িওয়ালাই তাদের ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করছেন।

বাসা ভাড়া দেয়া ও নেয়ার ক্ষেত্রে ‘বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১’ থাকলেও তা না মানায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের। অনেক বাড়ির মালিক এ আইন সম্পর্কে জানেনই না। আবার কেউ কেউ জানলেও তা গ্রাহ্য করেন না। এ প্রবণতা রাজধানী ঢাকাতেই বেশি। উপায়ান্তর না থাকায় ভাড়াটিয়া মেনে নেন মালিকের সব স্বেচ্ছাচারিতা।

আইনের ১০ নং ধারায় বাসা ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রিম এক মাসের ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও অনেক মালিক নেন কমপক্ষে তিন মাসের ভাড়া।

এলাকাভেদে ছয় মাসের ভাড়াও নেয়া হচ্ছে। আইনের ১৬ নং ধারায় বড় কোনো ধরনের নির্মাণকাজ বা পরিবর্তন আনা ছাড়া দুই বছরের মধ্যে মূল ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম না থাকলেও গত ২০-২৫ বছরে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া বেড়েছে ২০০ শতাংশ।

এছাড়া ভবনে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহজনিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের খরচ মালিকপক্ষের বহন করার কথা থাকলেও এটিও ভাড়াটিয়াদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, নিয়ম-নীতি বহির্ভূতভাবে বা সরকারি মহলের নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে বাড়িওয়ালাদের এমন আচরণ কবে থামবে?

সরকারের উচিত ঢাকা শহরের এই নিয়ন্ত্রণহীন বাড়ি ভাড়ার বিষয়টি কঠোরভাবে তদারক করা। পাশাপাশি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছে অনুরোধ থাকবে, বাড়িওয়ালাদের এমন অমানবিক ও অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে যেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়।

লাগামহীনভাবে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া বাড়িওয়ালাদের এসব অনিয়ম-অত্যাচার রোধে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজনে সংশোধন করে এর দ্রুত বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

নাজমুল হোসেন: প্রকৌশলী ও প্রাবন্ধিক

nazmulhussen@yahoo.com

 

সুত্রঃ যুগান্তর