ভাস্কর্যটি এখন অ্যানেক্স ভবনের পানির পাম্পের পাশে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে তৈরি ভাস্কর্যটি সরিয়ে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণের অ্যানেক্স ভবনের সামনে প্রতিস্থাপন করার কথা থাকলেও আজ শুক্রবার তা পুনঃস্থাপিত হচ্ছে না। ঘটনাটি তদারকির সঙ্গে জড়িত একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের সামন থেকে অপসারণের পর এদিন ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকা মেট্রো ন-১৬-১৫০৪ নম্বরের পিকআপ ভ্যানে করে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের ভেতর পানির পাম্পের পাশে ভাস্কর্যটি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েকজন শ্রমিক ভাস্কর্যটিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নীল রঙের একটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখেন। এর আগে ভোর সাড়ে চারটার দিকে ভাস্কর্যটি অ্যানেক্স ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখার জন্য নেওয়া হলেও ভেতরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় তা আবারও বের করে পানির পাম্পের পাশে নিয়ে আসা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিকআপ ভ্যানের ড্রাইভার শফিকুল ইসলাম জানান, ভাস্কর্যটি হাইকোর্টের পেছনে রাখতে বলা হয়েছে তাকে।
যদিও ভাস্কর মৃণাল হক ভোরে বললেন, ‘কিচ্ছু জানি না। জানি না। আজকে স্থাপন হচ্ছে কি না, তাও জানি না।’
ঘটনাস্থলে থাকা প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা জানান,‘আজকে পুনঃস্থাপন হচ্ছে না। ভাস্কর্যটি হাইকোর্টের ভেতরে অ্যানেক্স ভবনের ভেতরে রাখা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। এই কর্মকর্তা আরও জানান, ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনের জায়গায় ঢালাইয়ের কাজ চলছে, এ কারণে বিলম্বিত হতে পারে।
যদিও আলাপকালে ঘটনাস্থলে প্রতিবেদককে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসন মনে করছে, থেমিসের ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হলে আবারও ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীটি আন্দোলন করতে পারে। এজন্য সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে পরামর্শ করে তা একেবারেই বাতিল করার চিন্তা -ভাবনা চলছে। যদিও ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে রাতেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে গণজাগরণ মঞ্চসহ প্রগতিশীল কয়েকটি সংগঠন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর ভাস্কর মৃণাল হকের নেতৃত্বে ১৩ জন কর্মীসহ মোট ২০ জন শ্রমিক ভাস্কর্যটির ভিত ভাঙার কাজ শুরু করেন। প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র  এ তথ্য জানায়।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া তিনটার দিকে অ্যানেক্স ভবনের সামনে জায়গা নির্ধারণ করে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়। রাতের মধ্যেই সেখানে প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ করতে কাজ শুরু করেছিলেন অর্জুন চাকমা ও সুজন চাকমা।
রাত একটার দিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম এই প্রতিস্থাপনের বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিকেলে প্রধান বিচারপতি তাকে ডেকে নিয়ে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে আমি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা চাই না। এটি সরিয়ে নেওয়া হোক এবং এমন জায়গায় স্থাপন করা হোক, যেন প্রশ্ন না ওঠে ।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের শেষ দিকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়। এরপর প্রায় দুই মাস এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কোনও মত প্রকাশ না হলেও ফেব্রুয়ারিতে মুখ খোলেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী। এক বিবৃতিতে তিনি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানান।

এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের সবগুলো ধর্মভিত্তিক সংগঠন ভাস্কর্যটি সরানোর দাবিতে আন্দোলন করছিল। হেফাজতের ঘোষণা ছিল, অপসারণ করা না হলে শাপলা চত্বরে আবারও সমাবেশ করবে তারা।

এই ধারাবাহিকতায় গত ১১ এপ্রিল গণভবনে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সরকারি স্বীকৃতি ঘোষণার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই প্রশ্ন তোলেন গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য নিয়ে। সুপ্রীম কোর্ট চত্বরে এই গ্রিক দেবী থাকা উচিৎ না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পরবর্তীতে আরও কয়েকবার প্রশ্ন তোলেন ভাস্কর্যের বাস্তবতা নিয়ে। তার প্রশ্ন, গ্রিক দেবীর গায়ে শাড়ি কেন?

বৃহস্পতিবার সকালেও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন রমজানের আগেই ভাস্কর্য সরাতে আহ্বান জানায়। এর আগে ইসলামী ঐক্যজোট হরতালের ঘোষণা দেয়-যে রমজানের আগে গ্রিক দেবী না সরালে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবে। অব্যাহত হুমকি আসে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দল, আওয়ামী ওলামা লীগসহ সুন্নীপন্থী একাধিক সংগঠনের তরফে। যদিও ভাস্কর্য রক্ষার দাবিতে দেশের প্রগতিশীলদের একটি অংশ বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছিল। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন