ভালোবাসার অশ্রু ঝরা দিন…

শাহিনুল আশিক:

ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না, আমার এত সাধের কান্নার দাগ ধুয়ো না, সে যেন এসে দেখে, পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি…। এমন মন ছুঁয়ে যাওয়া সেই বিখ্যাত গানের লাইন মনে পড়ে গেল মোসা. অন্তর আহম্মেদ ও রওনক সুলতানার অশ্রুসিক্ত নয়নে কথোপকথন দেখে। দুজনের মধ্যে কথা হচ্ছে, তবে চোখে জল টলমল। তারা রাজশাহী কলেজের ১৯৮১ ব্যাচের শিক্ষার্থী। কলেজের এইচএসসি পর্যায়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অ্যালামনাই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে এসেছেন। তারা বান্ধবীরা একই রঙের শাড়ি পরেছেন।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী রওনক সুলতানা বলেন, আমরা তো সেই রকম ছিলাম! ক্লাসে ছাত্রীদের পাল্লাই ভারী। ১০০ ছাত্রী। আর ৪০ ছাত্র। ক্লাসে টিকতে পারত না ছাত্ররা। ভয়ে তারা ক্লাসে আসতো না। শিক্ষকরা ক্লাসে এলে পিছু পিছু ঢুকতো। তিনি আরও বলেন, সেই সময় অনেক ভালো লাগতো। আর অন্তর আহম্মেদ ছোট থেকে অসুস্থ। ক্র্যাচে ভর করে ক্লাসে আসতো। হাঁটতে পারতো না। আমরা সবাই ভালো বন্ধু ছিলাম। আমরা মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। এমনিতেই ক্লাস কম হতো। আড্ডা দিতে পদ্মার পাড়ে চলে যেতাম।

রাজশাহী কলেজের এইচএসসি অ্যালামনাই উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শনিবার কলেজ ক্যাম্পাস নবীন-প্রবীণ ছাত্রছাত্রীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। বাহারি রঙের পোশাকে সবাই; মেয়েরা বেশিরভাগ পরেছেন শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি। যার যার ব্যাচের সহপাঠীরা একই রঙের কাপড় পরেছেন অনেকেই। ক্যাম্পাস এতটাই উৎসবমুখর যে, সেখানে শীত হার মেনেছে। আকাশে বাতাসে শুধু ভালোবাসার সুবাস। তাতে কনকনে শীতও পাত্তা পাচ্ছে না।

কলেজ ক্যাম্পাসের উত্তর দিকটায় একই রঙের কাপড় পরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সেলফি তুলছেন। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই পোশাক তৈরি করিয়েছেন। ভালোবাসার রঙে কাপড়গুলো পরেছেন তারা। মাসতুরা, রিশা ও অনিকারা পরেছেন একই পোশাক। এছাড়া অনজুমানিকারা আটজন পরেছেন একই রঙের কাপড়। এমন দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সবই ছবির ফ্রেমে আবদ্ধ হচ্ছেন। এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি। নিজের মধ্যে ভালোবাসার সবটুকু ইচ্ছেমতো ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। ভালোবাসায় কমতি নেই। এ তো সেই মিলনের দিন, ভালোলাগা-ভালোবাসার দিন। দূর আকাশে ডানা মেলার দিন।

স/আ