ভারত কি বাংলাদেশের পরীক্ষা নেওয়ার সামর্থ্য রাখে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আজকের দিনটাও কি বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে? সেটা জানতে আর কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। আজ সন্ধ্যায় ভুটানের চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে ভারতকে হারাতে পারলেই অনূর্ধ্ব–১৫ ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুকুট উঠবে বাংলাদেশের কিশোরীদের মাথায়। তা-ও আবার টানা দ্বিতীয়বার।

প্রতিবেশী দেশ ভারতকে হারিয়ে এই সুযোগ হেলায় হারানোর মতো যে নয়, বাংলাদেশের মেয়েরা তা গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকাতেই করে দেখিয়েছে। এবারও গত ফাইনালের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখতে চায় বাংলাদেশ।

বরাবরের মতো বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তাই শুনিয়েছেন পুরোনো কথাই, ‘আমি আশা করি, মেয়েরা ভারতের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলবে।’ আর মারিয়া-মণিকারা স্বাভাবিক খেলাটা পারলে সেটি যে কত ভয়ংকর হয়, তা এরই মধ্যে টের পেয়েছে টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটান।

ছয় দলের টুর্নামেন্টে অনুমিতভাবেই ফাইনালে উঠেছে দুই ফেবারিট দল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ভারত হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও নেপালকে। সব মিলিয়ে ভারত প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছে ১৫ বার। গোল খেয়েছে একটি। আর বাংলাদেশ ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানকে হারিয়ে। তিন ম্যাচে বাংলাদেশ কোনো গোল হজম না করেই দিয়েছে ২২টি। ৪টি করে গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াই চলছে তহুরা খাতুন ও ভারতের সিল্কি দেবীর মধ্যে।

শক্তিতে বাংলাদেশই এগিয়ে। বাংলাদেশের মেয়েদের ফিটনেস, কৌশল, বলের নিয়ন্ত্রণ, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও গতির সঙ্গে ভারত পেরে উঠবে না বলেই মনে করছে সবাই। গত বছর ভারতকেই সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে দুবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। লিগ পর্বে ৩-০ গোলে হারানোর পর ফাইনালে বাংলাদেশ জেতে ১-০ গোলে। বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় সর্বশেষ পাঁচবারের সাক্ষাতে বাংলাদেশ জিতেছে চারবার। ঢাকায় ২০১৪ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে ভারত জিতেছিল ২-১ গোলে। এরপর বাংলাদেশ ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়েছিল ৩-১ গোলে। ফাইনালে ভারতকে হারায় ৪-০ গোলে।

এই টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশ টানা সাত মাস অনুশীলন করেছে, ভারতীয় দলের দাবি, তাদের প্রস্তুতি মাত্র ২৩ দিনের। ওডিশার আবাসিক ক্যাম্পে অংশ নেওয়া মেয়েরাই খেলছে টুর্নামেন্টে। গত আসরে বাংলাদেশের কাছে হারের পর ভারতের কোচ ময়মল রকিকে বরখাস্ত করে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। গতবারের দল থেকে বাদ পড়েছে মণিকা দেবী, প্রতীক্ষা লাকরা, পুষ্প রানীসহ নয়জন। বাংলাদেশ দলে গত বছরের ১৮ ফুটবলারের সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে নতুন পাঁচজন। ভারতের দলে রয়েছে গতবারের পাঁচ ফুটবলার সিল্কি দেবী, অভিকা সিং, কৃতিনা দেবী, সুনিতা মুন্ডা ও প্রিয়াঙ্কা দেবী। বাকি ১৮ জনই নতুন। গত আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪টি) প্রিয়াঙ্কা এবার এখনো গোল করতে পারেনি!

চোট আছে দুই দলেই। নেপালের বিপক্ষে চোট পাওয়ায় কাল অনুশীলন করেনি সিল্কি। বাংলাদেশের আঁখি খাতুনও কাল অনুশীলন করেনি পায়ের মাংসপেশিতে হালকা চোট থাকায়। তবে দলের অন্যতম রক্ষণস্তম্ভকে ফাইনালে পাওয়ার আশা ছাড়েননি কোচ। বাংলাদেশকে বেশ সমীহ করছেন ভারতের কোচ ডি সুজা, ‘বাংলাদেশ কয়েক বছর ধরেই বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলছে। তা ছাড়া আমরা কোনো দলকেই হালকাভাবে নিচ্ছি না। ফাইনালে মেয়েরা সর্বশক্তি দিয়ে জেতার জন্য খেলবে।’

কিন্তু খেলাটা মেয়েদের ফুটবল বলেই একটা প্রশ্ন। ভারত কি এই বাংলাদেশের পরীক্ষা নেওয়ার সামর্থ্য রাখে?