ভারতে বাজেট পেশ; হুক্কাহুয়া বাজেট বলে কটাক্ষ মমতার

করোনার ধাক্কা সামলে সোমবার ভারতে পেশ হল প্রথম কেন্দ্রীয় বাজেট। আর তার জেরেই বদলে গেল বাজেট পেশের ধরন। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম পেপারলেস বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার লক্ষ্যে চিরাচরিত ব্রিফকেসের বদলে এবছর দেশীয় প্রযুক্তিকে তৈরি ট্যাব হাতে নিয়ে বাজেট পেশ করতে দেখা গেল অর্থমন্ত্রীকে। সাথে ছিলেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। এর ফলে সংক্রমণে ঝুঁকির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ খরচে রাশ টানা গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

সামনেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন। তাই একদিকে ভোটমুখী বাংলার নজর কাড়তে লাল-পাড় সাদা শাড়ি পরিহীত অর্থমন্ত্রীকে বাজেট পড়তে দেখা গেল। সেই সাথে তার ভাষণের শুরুতেই উঠে এল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতি। অন্যদিকে ভোটের কথা মাথায় রেখেই ২০২১-২২ আর্থিক বছরের বাজেটে অবকাঠামো খাতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বড় ঘোষণা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। জোর দেওয়া হল সড়ক ও রেলের উন্নয়নেও। সামনেই ভারতের যে রাজ্যগুলিতে বিধানসভার নির্বাচন রয়েছে সেই এলাকায় নতুন অর্থনৈতিক করিডরের পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। এর মধ্যে সড়ক-পরিবহন অবকাঠামো জোরদার করতে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

সোমবার বাজেট পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানান, পশ্চিমবঙ্গে ২৫ হাজার কোটি রুপি ব্যায়ে ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে। একইসাথে কলকাতা-শিলিগুড়ি রাস্তাও সংস্কার করা হবে। পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুর থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া পর্যন্ত ফ্রেট করিডর নির্মাণ করা হবে, গোমা থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ২৭৪ কিলোমিটার রেলের ট্র্যাক তৈরি করা হবে। ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিকরণ করা হবে। কোচগুলির আধুনিকরণ করা হবে। চা শিল্পেও এবার ১ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। অসম ও তামিলনাড়–র মতো ভোটমুখী রাজ্যগুলিতেও হাইওয়ে প্রকল্প পেয়েছে।

২০২১-২২ এর বাজেটে রেল নিয়েও একাধিক ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। রেলের জন্য ১,১০,০৫৫ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১,০৭,১০০ কোটি রুপি শুধুমাত্র মূলধন ব্যায়ের জন্য। তিনি জানান ৪৬ হাজার কিলোমিটার রেল লাইনে ট্রেন চলবে বিদ্যুতে। এছাড়াও র্পটন রেলওয়ে ট্র্যাকে নতুন ও আধুনিক কোচ বাড়ানো হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। বাজেট বরাদ্দে রাখা হয়েছে মৎস বন্দরের কথাও। দেশের আর্থিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই পাঁচটি মৎস বন্দরের উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এদিন বাজেট পেশের সময়ই অর্থমন্ত্রী জানান এমন এক পরিস্থিতিতে এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে যা আগে কখনও করা হয়নি।

 

যদিও বাজেট পেশের শুরুতেই মধ্যবিত্ত কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন কারণ মধ্যবিত্তদের করছাড়ের বিষয়ে এদিন নতুন কোন ঘোষণা করেননি অর্থমন্ত্রী। তবে ৭৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ-যারা সুদের ওপর নির্ভরশীল তাদের আয়ের ওপর সম্পূর্ণ করছাড় দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে ২ লাখ ৮৩ হাজার কোটি রুপি বরাদ্গদ করা হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া, পবন হংস, বিপিসিএল’এর মতো সংস্থাগুলিকে বেসরকাকিরণ করার কথা ঘোষনা করা হয়েছে। বিমাক্ষেত্রেও বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা বাড়ানো হয়েছে।
যদিও এই বাজেটকে ভেকধারী সরকারের ফেকধারী বাজেট বলে কটাক্ষ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি। এদিন বিকালে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাজেট নিয়ে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। বাজেটের কড়া সমালোচনা করে মমতা বলেন ‘আজকে একটা বাজেট করেছে। তৈরি থাকুন আবার দাম বাড়বে। পেট্রোলে ২.৫০ রুপি এবং ডিজেলে ৪ রুপি সেস বসিয়েছে। এই সেস আপনাদের শেষ করে দেবে। সেসের রুপি রাজ্য সরকার পায় না। একেবারে জিজিয়া করের মতো এই রুপি তুলে নিয়ে চলে যায়। তাছাড়া জ্বালানির দাম বাড়ার অর্থই হল রান্না ঘরে আগুন লাগা।’

রেল, বিএসএনএল, বিমা ক্ষেত্রগুলিকে বেসরকারিকরণের বিরোধীতা করে একে হুক্কাহুয়া প্রোজেক্ট বলেও কটাক্ষ করেন মমতা। তার অভিমত সরকারি চাকরীজিবীরাও আজ সুরক্ষিত নয়। কোনদিন ব্যাংকে গচ্ছিত রুপিও দেখবেন চলে গেছে।

বিজেপিকে নিশানা করে মমতার প্রশ্ন ‘ওরা দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে। এবার একটু ওদের বিক্রি করে দিন। ওদের বলুন কত রুপি দিলে যাবে? তোমাদের আর কত রুপি লাগবে?’

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন