ভারতে পাচার হওয়া শিশুরা কেন ফিরতে পারছে না?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: ভারতে অবৈধভাবে ঢোকা ৬টি শিশুকে আজ (বুধবার) বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।

দিনাজপুর জেলার কিশোর সাগর চন্দ ভারতের সীমান্তেু তিনি ঢুকে পড়েছিলেন আত্মীয়র বাসায় বেড়ানোর জন্য। এরপর বিএসএফ সদস্যরা তাকে আটক করে। সেটি গতবছরের ঘটনা। এরপর নানা প্রক্রিয়া শেষ করে অবশেষে বুধবার বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাকে।

হিলি সীমান্ত থেকে টেলিফোনে এই কিশোর বলছিল “আমি চোরাই-ভাবে ঢুকে পড়ছিলাম। আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে গেছি। এরপর বিএসএফ আটক করছে। আমাদের এলাকা থেকে এরকম অনেকে গেছে। আমার মত অনেকে সেখানে আছে”।

ভারতে অবৈধভাবে ঢোকার জন্য আটক হওয়া সাগর সহ মোট ছয় কিশোরকে বুধবার হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই শিশুদের রাখা হয়েছিলো দক্ষিণ দিনাজপুরে বালুঘাটে ‘শুভায়ন’ নামের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। সেই আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো আরও ৩০টির বেশি শিশু আছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য আর্জি জানিয়েছিল তারা।

ছয় শিশুকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছে যারা তার অন্যতম সংগঠন -চাইল্ড লাইনের সমন্বয়কারী সুরজ দাশ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “দালালরা অল্পবয়সীদের টার্গেট করে বেশি। ফলে এসব পাচার ও অনুপ্রবেশ ঘটেই চলেছে “।

সাধারণত ভারতে পাচার বা অবৈধভাবে ঢোকা শিশুদের আটকের পর সরকারি সেফহোমে রাখা হয় অস্থায়ীভাবে। তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার পর কোলকাতায় বাংলাদেশ হাই-কমিশনে পাঠানো হয়। এরপর ঢাকায় খবর পাঠানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশকে ওই শিশুদের দেয়া ঠিকানা ও নাগরিকত্ব যাচাই করতে বলা হয়। তারপর শুরু হয় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া । আইন অনুসারে ষাট দিন অর্থাৎ দুমাসের মধ্যেই ফেরত পাঠানোর কাজ শেষ করার নিয়ম।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা গেছে, ভারতে চার-পাঁচ বছরও থাকতে হচ্ছে অনেক শিশুকে। কেন তাদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এত সময় লাগছে?

“অনেক শিশু ৪/৫ বছরও আছে। জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে । শিশুদের ক্ষেত্রে এক ধরনের সদিচ্ছা অভাব কাজ করে”, বলছিলেন সুরাজ দাশ।

দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মো: আফতাব হোসেন বিবিসিকে জানালেন, হিলি সীমান্ত দিয়ে গত বছর ফেরত আসে নয়টি শিশু। সেখানে এ বছর প্রথম সাত মাসে ফেরত এসেছে ২৪টি শিশু। এটা কেবল হিলি সীমান্তের চিত্র। অন্যান্য এলাকা থেকেও এভাবে শিশুদের পাচার বা অবৈধভাবে ঢোকার ঘটনা ঘটছে। তবে ফিরিয়ে আনার সংখ্যা খুব বেশি নয়।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন জাতীয় মহিলা আইনজীবী জানায়, তাদের হিসেবে ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সালের এ পর্যন্ত ১৪শ ৭৩ জন পাচার ব্যক্তিকে তারা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। তার মধ্যে ১২শ ৫০ জনই নারী ও শিশু। আর বেশিরভাগই পাচার হয়েছিল ভারতের বিভিন্ন এলাকায়।

তবে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন ধাপে কাজ করা হচ্ছে ফলে দীর্ঘসময় লাগার বিষয়টি মানতে চাননা তারা।

ভারতের মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন বিভিন্ন তথ্য ও প্রতিবেদন থেকে তারা ধারনা করেন, পশ্চিমবঙ্গে পাঁচশোর মত এরকম শিশু বর্তমানে বিভিন্ন সেফহোমে আশ্রিত রয়েছে।

তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থানের সময়কাল পাঁচ বছরের বেশি ছাড়িয়ে গেছে। রিপ্যাট্রিয়েশন বা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এতই জটিল, যার কারণে ষাট দিনের জায়গায় ৪/৫ বছরও সেখানে আটকা থাকতে হচ্ছে এমন শিশুদের। কিন্তু তাদের কবে ফিরিয়ে আনা যাবে তা তারা নিজেরা যেমন জানেনা, তেমনি একাজে জড়িত কর্মকর্তারাও জানাতে পারছেন না। সূত্র: বিবিসি বাংলা