ভারতে এক বিচারপতির মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতির মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখার অভূতপূর্ব নির্দেশ দেওয়ার পরে ওই বিচারক বলেছেন, তিনি মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে দেবেন না।

বরং ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের যে বেঞ্চ ওই নির্দেশ দিয়েছিল, সেটির সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ জারি করেছেন ওই বিচারক সি এস কারনান।

বিচারক সি এস কারনানের বিরুদ্ধে স্বত:প্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার মামলাও চলছে, জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

ভারতের আইনের ইতিহাসে এরকম ঘটনা এর আগে কখনো শোনা যায়নি।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সি এস কারনান নিজের বাসভবনে এক বিশেষ আদালত বসিয়ে পাল্টা নির্দেশটি জারি করেছেন । যদিও তাঁর কাছ থেকে সব বিচারিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আগেই নিয়ে নিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত, তাই মি. কারনানের জারি করা নির্দেশের কোনও আইনি অনুমোদন নেই বলেই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

বিচারপরিত কারনানের আইনজীবি পিটার রমেশ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিচারপতি কারনান মেডিকেল পরীক্ষায় সহযোগিতা করবেন না। সুপ্রিম কোর্টে একটি আদালত অবমাননার মামলা চলছে বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে। এধরণের মামলায় মেডিকেল পরীক্ষার আদেশ দেওয়া যায় না। সেটা করতে হলে ২০১৭ সালের মানসিক ব্যাধি আইন অনুযায়ী করতে হয়, যেটা ওই আদেশে উল্লেখিত নেই।”

তিনি বলেন, “বিচারপতি কারনান মনে করছেন, সর্বোচ্চ আদালতের যে মাননীয় বিচারকরা এই নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদেরই পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে – কারণ তারা বিচারপতি কারনানের মতো একজন সুস্থ মস্তিষ্কের বিচারকের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছেন।”

সোমবার ভারতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়েছিল, যেভাবে বিচারপতি কারনান বেঞ্চের সাতজন বিচারককে কলকাতায় তাঁর আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং সেই সংক্রান্ত যে বিবৃতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলি দেখে সুপ্রিম কোর্টের মনে হয়েছে যে বিচারপতি কারনান হয়তো আদালত অবমাননার মূল মামলায় নিজের পক্ষে ঠিকমতো সওয়াল করতে পারবেন না।

সেজন্যই কলকাতায় একটি চিকিৎসক দলকে তাঁর মানসিক সুস্থতা খতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই ঘটনাকে ভারতের ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র আইনজীবি বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।

“এটা অভূতপূর্ব তো বটেই, এরকম ঘটনা আগে হয় নি। তবে আমার মনে হয়, সুপ্রিম কোর্ট বোধহয় একটু ভুল করে ফেলছে। বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থাকত, তাহলে তো সেটা তাদের নিজস্ব বিবাদ মেটানোর যে ব্যবস্থাপনা আছে, তা দিয়েই করা যেত। আদালত অবমাননার মামলা হল কেন!”

“তিনি অন্য বিচারপতিদের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন, সেগুলোর তদন্ত করে জনসমক্ষে তথ্য প্রকাশ করা যেত যে বিচারপতি কারনানের অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন,” বলেন তিনি।

নির্দেশনা – পাল্টা নির্দেশনার এই ঘটনাক্রম চলছে বেশ কয়েক মাস ধরেই।

সোমবার সর্বোচ্চ আদালত এই নির্দেশও দিয়েছে যে বিচারপতি কারনানের দেওয়া ওইসব নির্দেশনা যেন ভারতের কোনও আদালত বা ট্রাইব্যুনাল না মানে। সূত্র: বিবিসি বাংলা