ভারতের পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক বসানো হবে কিনা – তা নিয়ে আলোচনা চলছে মন্ত্রণালয়ে

বাংলাদেশের পেঁয়াজচাষীদের লোকসানের ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ওপর শুল্ক বসানো হবে কিনা – এ আলোচনার মধ্যেই বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘ভারত নিজের স্বার্থে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে।’

তিনি বলেন, “ভারত নিজের স্বার্থে কখনো পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, কখনো খুলে দেয়। এখন তারা খুলে দিয়েছে। “

এমন অবস্থায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে কিনা সে বিষয়টি চিন্তা করে দেখা হচ্ছে – সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

শুল্ক আরোপ নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে বলেও জানান মি. মুনশি।

গত সেপ্টেম্বরে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। তখন অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। দাম সহনীয় মাত্রায় রাখতে তখন পণ্যটির উপর যে ৫ শতাংশ শুল্ক ছিল সেটি বাতিল করা হয়েছিল – যা এখনো বহাল আছে।

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, শুল্ক আরোপ করা হলেও সেটা যাতে ভারত ছাড়া অন্য যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল তাদের উপর প্রভাব না ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

তিনি বলেন, “আমাদের স্ট্র্যাটেজিটা হলো আমরা কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করবো, আবার আমরা ভোক্তাদের কথাও চিন্তা করবো।”

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন আগামী তিন বছরে যাতে পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ যাতে স্বনির্ভর হয় সেটি অর্জনের চেষ্টা করা হবে।

“আর এর জন্য উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে তারা যাতে মুনাফা অর্জন করতে পারে সেই বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।”

আগামী তিন বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন তিন লাখ টন বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের।

এদিকে দেশী পেঁয়াজের দাম যাতে একেবারে পড়ে না যায় তার জন্য ব্যবস্থা নিতে আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন কৃষকরা।

দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা বলছেন, এরই মধ্যে যে পেঁয়াজ উঠেছে তা বিক্রি করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।

এমনি একজন রাজবাড়ির জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার তালুকপাড়া গ্রামের কৃষক লতিফ মোল্লা। এ বছর সাড়ে তিন একর জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে মুড়িকাটা নামের পেঁয়াজ।

তবে লতিফ মোল্লা বলছেন, এবার পেঁয়াজে লাভের মুখ দেখার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ পেঁয়াজ চাষে যে খরচ পড়েছে তার চেয়ে অনেক কম দামে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

“যদি বাইরের মাল (পেঁয়াজ) না আসে, যখন আমাদের এই আবাদগুলা ওঠে, তাহলে আমরা একটু বাঁচতে পারি। কিন্তু বাইরের মাল সরকার আমদানি করে – এই জন্য আমরা লস খাচ্ছি।”

দুই বিঘা জমিতে লালতীর আর মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন ফরিদপুর সদর উপজেলার আড়ুয়াডাঙ্গি গ্রামের কৃষক সোহরাব হোসেন। এরিমধ্যে তার মুড়িকাটা জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। তীরকাটা উঠতে সময় লাগবে আরো দুয়েক মাস।

মি. হোসেন বলেন, প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকার মতো খরচ হয়েছে তার। আর বাজারে এই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে প্রায় অর্ধেক দামে।

“বাজারে পেঁয়াজ যাচ্ছে ৮০০ টাকা করে। আর আমার খরচ হইছে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে মার্চে যখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হবে, তখন পেঁয়াজের দাম মারাত্মকভাবে পড়ে যাবে। বলছিলেন, পেঁয়াজ চাষী সোহরাব হোসেন।

“এখনই যদি পেঁয়াজের এই অবস্থা হয় তাহলে যখন পেঁয়াজ উঠবে তখন তো কেউ ৩০০ টাকা করেও পেঁয়াজ নেবে না।”

এদিকে রাজধানী ঢাকার স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে দুদিন আগে থেকেই দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা করে কমতে শুরু কমে ২৫ টাকায় নেমেছিল।

তবে পেঁয়াজে এখনো ঢাকায় এসে না পৌঁছানোয় প্রতি কেজিতে দাম কিছুটা বেড়ে আবার ৩২ টাকায় দাড়ায়।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সেলিম মল্লিক জানান, বুধবার থেকে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসলে দেশী পেঁয়াজের দাম আবার কমে যাবে।

“দেশী পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। ভারতের পেঁয়াজ ঢুকলেই দেশী পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।”

গত বছরের সেপ্টেম্বরে যখন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে তখন দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হয়। তখন বাজার স্থিতিশীল রাখতে তুরস্ক, মিশর ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিল সরকার।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আসছে যা খুচরা বাজারে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হবে।

ভারত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ। প্রতি বছর দেশটি প্রায় ২০ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করে।

দক্ষিণ এশিয়ার রন্ধনপ্রণালীতে পেঁয়াজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।

ভারতের পেঁয়াজের ওপর বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলংকাও ব্যাপকভাবে নির্ভর করে।

সূত্র:বিবিসি