অজ্ঞাত ভাইরাসে দুই শিশর মৃত্যু

ভাইরাস সনাক্ত না হওয়ায় চিন্তিত চিকিৎসক, রাজশাহীজুড়ে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক :

অজ্ঞাত ভাইরাসে মুনতাহা মারিশা (২) ও মুফতাউল মাসিয়া (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এখন পর্যন্ত এই দুই শিশু কোন ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে জানতে পারেনি চিকিৎসকরা। নিপা ভাইরাসে এই দুই শিশু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এমন ধারণা করেছিল চিকিৎসকরা।

 

কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর নিপা ভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে সেখান থেকে সরে এসেছে চিকিৎসকরা।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসটি সনাক্ত করতে আরো সময় লাগবে। এ ভাইরাস সনাক্তের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার আছে।

পরিবারের বক্তব্য অনুযায়ী, কুড়িয়ে পাওয়া বরই খাওয়ার পরই দুই শিশুর শরীরে জ্বর আসে। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এমন কি দুই শিশুর বাবা মঞ্জুর হোসেন (৩৫) ও মা পলি খাতুনও (৩০) এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আইসোলেশনে রয়েছে। মঞ্জুর হোসেন রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক। তিনি পরিবার নিয়ে ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া।

অজ্ঞাত ভাইরাসে রাজশাহীতে দুই শিশুর মৃত্যুর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরপরই পুরো রাজশাহীজুড়ে শুরু হয় আতঙ্ক। বিশেষ করে অজ্ঞাত এই ভাইরাস নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও অনেকটাই চিন্তিত। কারণ এখন পর্যন্ত মৃত দুই শিশুর নমুনা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোনো ফলাফল আসেনি। ভাইরাসটি কি ধরনের, ছোঁয়াচে কি না, একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে সংক্রামিত হতে পারে কি না, এসব বিষয় নিয়ে চিৎিসকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। তারা ভাইরাসটি সনাক্তের চেষ্টা করছেন।

 

রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক শংকর কে বিশ্বাস বলেন, অজানা ভাইরাসে দুই শিশুর মৃত্যুর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যেখানে নিপাহ ভাইরাসের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অজানা এই ভাইরাস নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে আইইডিসিআর। এরপরই এই ভাইরাস সম্পর্কে জানা যাবে। যতদিন এই ভাইরাস সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা না আসবে ততদিন বরই জাতীয় ফল না খাওয়ার পরামশ্য দেন তিনি।

 

এদিকে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম আহম্মদ বলছেন, তারা মৃত দুই শিশুর সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা হাসপাতালে করেছেন। কিন্তু কোনো ফলাফল আসেনি। যার কারণে ওই দুই শিশুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনি বলছেন, এই ভাইরাসটি সনাক্ত করতে আরো বেশি পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার।

 

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বিকেলে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। ওই দিন রাতেই তাকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর পর তার গায়ে কালো দাগ দেখা যায়। এর দুইদিন পর গত শুক্রবার বড় মেয়ে মাসিয়ার একভাবে জ্বর আসে। দ্রুত তাকে রাজশাহীর সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। পরের দিন শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে সেও মারা যায়। এরপর দুই শিশুর বাবা-মাও জ¦রে আক্রান্ত হলে আর বাড়িতে যেতে না দিয়ে রামেক হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়। তাদের রামেক হাসপাতালে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আইসোলেশনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।