ভরা যৌবনে ফিরেছে পদ্মা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পদ্মার ঢেউ রে মোরে শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা, যা রে পদ্মার ঢেউ রে। গান গুলো প্রাচীন হলেও আজও বাঙ্গলীর হৃদয়ে গেথে আছে। এ বর্ষয় যেন পদ্মা তার নিজ যৌবনে ফিরে এসেছে। পদ্মার দু’কুল ভোরে গেছে পানিতে। পদ্মার বুকের জেগে ওঠা চরের ঘর-বাড়িগুলো তার গর্ভে গ্রাস করেছে। আর পদ্মার দুই কুল পানিতে ছুঁই ছুঁই অবস্থা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে অবাহত রয়েছে পানি বৃদ্ধি। গতকাল শনিবাররে তুলনায় আজ রোববার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পানি বেড়েছে তিন সেন্টিমিটার। তারা বলছেন, যে ভাবে পানির চাঁপ আসছে তাতে আরো পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপকারী শহীদুল ইসলাম সিল্কিসিটি নিউজকে জানায়, গত কয়েক দিনের চেয়ে পদ্মার পানি বেড়েছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৯৫, তার আগের দিন শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৮৮ ও বিকেল সাড়ে ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৯২, তার একদিন আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৭৮ ও বিকেল সাড়ে ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার।

তিনি বলেন, কয়েকদিনে তুলনায় পানি বেশি বেড়েছে। আর এই পানি দিনে দিনে বাড়তে থাকছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী ১৮ দশমিক ৫০ হোলে বিপদসীমা ধরা হয়।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ বিভাগ ১/২ উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার সিল্কসিটি নিউজকে জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মা নদীর পানি বেড়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ফারাক্কার পানি এসেছে এই নদীতে।

তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে অস্বাভাবিকভাবে পানি বেড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় পদ্মার তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নদীর ওপারের চর মাজারদিয়াড় এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা নদীর বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন।

এদিকে, পদ্মার পানি অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে রাজশাহীর শহর রক্ষা বাঁধ পুলিশ লাইন এলাকায় বেশ কিছু যায়গা ভেঙে গেছে। তাছাড়া একই এলাকার আরো কিছু যায়গা ভেঙে গেছে।

শুধু তাই নয়, পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীর ভাঙ্গনে আলাতুলি ও চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলিন হয়ে গেছে।

জানা গেছে, সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের রোডপাড়া গ্রাম এলাকায় গত জুন মাসের শেষ দিক নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। কয়েকদিনে ৩০টি কাঁচা পাকা বাড়ির বাসিন্দা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নদীতে বিলিন হয়ে গেছে আম বাগানসহ বহুগাছপালা ও ফসলি জমি। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন কমপ্লেক্স, একটি মাদ্রাসা, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও ৪০টি ঘরবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা।

গোয়ালডুবি গ্রাম এলাকায় সদর ও শিবগঞ্জ রক্ষা প্রকল্পের শেষ মাথা থেকে এই ভাঙ্গন শুরু হয়ে ভারতীয় সীমানা বরাবর নাড়–খাটি পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার ব্যাপি ভাঙ্গন চলছে। যেভাবে নদী ভাঙ্গছে তাতে অল্প দিনের মধ্যেই ঝুঁকির মধ্যে থাকা এই ৪০টি বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে।

এদিকে, নওগাঁর আত্রাইয়ে গত বছরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের ফলে উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ফুলবাড়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়ার র্দীঘ ১১ মাসেও মেরামত হয়নি। ফলে ওই এলাকার হাজার হাজার জনগন তাদের আবাদি ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবু সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, গত বছরের বন্যায় সড়কটি বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে এলাকার জনগণকে দীর্ঘ দিন থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব বাঁধটি পুননির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

স/আ