ভরা পদ্মার ছলছল যৌবন দেখতে উপচে পড়া মানুষের ভীড়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভরা পদ্মার যৌবন চারিদিক যেন টলমল করছে। উথলে পড়া সেই যৌবনের ঢেউ এসে আছলে পড়ছে তীরে। ওদিকে পশ্চিমে নিলাকাশের আভা পড়ে সেই যৌবনকে আরো বিকশিত করছে বিকেলের দিকে। আর তা দেখতে রাজশাহীর পদ্মা পাড়ে নামছে বিনোদন পিপাসু মানুষের ঢল।

 

রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধজুড়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে দুপুর পর থেকেই বিনোদন পিপাসুদের ঢল নামছে পদ্মা পাড়ে। পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার খবরেই অধিকাংশকে টানছে। এমন ভীড় সাধারণত কোনো উৎসবের দিনগুলোতেই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এখন প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের ভীড় বাড়ছে পদ্মার ভরা যৌবন দেখার জন্য।

  • Rajshahi photo-30-08-16-12 copy
    গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর বড়কুঠি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শত শত তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ কফি বারের সামনে অবস্থান করছেন। তাদের কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থেকে অপলোক নয়নে তাকিয়ে আছেন ভরা পদ্মার দিকে। কেউ পদ্মার তীরে উঠা পানির একটু ওপরে পেতে রাখা চেয়ারে বসে পা দুলাচ্ছেন পানির মাঝে। কেউ কেউ হেঁটে হেঁটে পদ্মার পানি দেখছেন নয়ন ভরে। আবার কেউ বসে বসেই ভাবছেন পদ্মা নিয়ে নানা ভাবনা।

অন্যদিকে কেউ কেউ জুটি বেঁধে বা দল বেঁধে নৌকায় চড়ে ঘুরছেন পদ্মার বুকে। তীব্র গরম উপেক্ষা করে এসব বিনোদন প্রিয়সী মানুষগুলো সময় কাটাচ্ছেন।
কথা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়ন কবির আজাদের সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, ‘গত কয়েক বছর ধরে আমি রাজশাহীতে আছি। এর আগে শুধুই গল্প শুনতাম পদ্মা বর্ষায় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। এবার নিজ চোখে তা দেখলাম। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা যেন এক নতুন রুপ লাভ করেছে। পদ্মার এ সৌন্দর্য দেখে মন কাড়ছে। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে আসছি পদ্মার পানির কাছে।’

  • রাজশাহী কলেজের আরেক শিক্ষার্থী জেসমিন সুলতানা সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘প্রায় সারা বছরই পদ্মা যেন মরুভ’মির মতো দেখতে লাগে। সর্বনাশা ফারাক্কার বাঁধের কারণে সুস্কমৌসুমে পানি থাকে না বলে পদ্মা তখন যৌবন হারায়। কিন্তু এখন ভরা বর্ষায় পদ্মা যেন যৌবন ফিরে পেয়েছে। তবে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ার খবর পেয়েই বার বার পদ্মাকে দেখতে ছুটে আসছি। মনও ভালো হয়ে যাচ্ছে।’

রাজশাহী নগরী থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মোহনপুরের সইপাড়া বাড়ি আকবর আলীর। মধ্যবয়স্ক এই ব্যক্তি পরিবার নিয়ে এসেছিলেন শহরে কেনা কাটা করার জন্য। কেনা কাটা শেষে শনিবার বিকেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যান পদ্মা পারে। কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

 

  • জানতে চাইলে তিনি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘বাসায় থাকতেই শুনেছি পদ্মায় পানি বেড়েছে। শহররক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে পড়েছে বলেও শুনেছি। তাই সেই দৃশ্য দেখতে পরিবার নিয়ে ছুটে এসেছি পদ্মা পারে।’

নগরীর পাঠানপাড়া এলাকার বৃদ্ধ আজিজুল ইসলাম সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘এই পদ্মায় এক সময় জাহার চলতো। বড় বড় জাহাজ এসে ভিড়ত এখানে। মালপত্র নামাতো আবার উঠাতো।

 

বড়কুঠির নিচেই জাহাজ ভিড়ত। আবার তালাইমারী এলাকাতেও জাহাজ ভিড়ত। এগুলো কেবলই স্মৃতি। সর্বনাশা ফারাক্কা পদ্মাকে গিলে খেয়েছে। তাই বর্ষা ছাড়া এখন আর পদ্মায় তেমন পানি দেখা যায় না। আবার কোনো বষয়াতেও পদ্মা তার পুরো যৌবন ফিরে পায় না। কিন্তু এবার ফারাক্কায় সবকটি বাঁধ নাকি খুলে দিয়েছে। তাই পানিও এবার হঠাৎ বেড়েছে ব্যাপক হারে। এই পানি দেখতেই ছুটে আসছে হাজার হাজার মানুষ। আমাদেরও ভাল লাগছে।’

 
এদিকে ভরা পদ্মার রুপ দর্শন করতে আসা দর্শনার্থীদের কারণে পদ্মা পারে গড়ে উঠা ফুচকা, চটপটি, ফাস্ট ফুডসহ বিভিন্ন দোকান-পাটে ব্যবসা বেড়েছে কয়েক গুন। বিশেষ করে বিকেলের দিকে পদ্মা পাড়ের দোকানগুলোতে যেন লাইন পড়ে যাচ্ছে। এসময় ক্রেতাদের ভিড়ে ফুরসত পাচ্ছেন না বিক্রেতারা।

 
প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগস্ট বিকেল ছয়টায় রাজশাহীতে পদ্মায় পানির উঁচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৪৬ মিটার। ওইদিন রাজশাহী পয়েন্টে বিপতসীমার ১৮ দশমিক ৫০ মিটার থেকে মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় পদ্মা। যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পানি বৃদ্ধির রেকর্ড এটি।