নতুন পেশা হ্যাকিংয়ে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: কেউ চাকরি করতেন বহুজাতিক সংস্থায়। কেউ ছিলেন সাহিত্যের ছাত্র। তবে এ সব পরিচয় এখন গৌণ। বদলে যাওয়া শহরে ওই যুবকদের রোজগারের মাধ্যম এখন— হ্যাকিং।

কলকাতা শহরে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চশিক্ষিত অথবা স্বশিক্ষিত যুবকদের একাংশ বেছে নিচ্ছেন ‘এথিক্যাল হ্যাকারে’র পেশা। তাঁদের অনেকের মাসিক রোজগারই লক্ষ টাকার গণ্ডি ছাড়িয়েছে।

কারা হ্যাক করার বরাত দেন? আইআইটি কানপুরের প্রাক্তন ছাত্র, যাদবপুরের বাসিন্দা এক হ্যাকার জানান, বিভিন্ন পেশা এবং চরিত্রের মানুষ যোগাযোগ করেন। তাঁদের মধ্যে একাধিক সংস্থার কর্তা থেকে শুরু করে সন্দেহবাতিকগ্রস্ত স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা— সকলেই রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শেক্সপিয়র সরণির একটি শিক্ষাসংস্থার মালিক যোগাযোগ করেছিলেন। ২০১৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাঁর সম্পর্কে যে নেতিবাচক লেখালেখি রয়েছে, সেগুলি মুছে দিতে হবে।’’ ওই হ্যাকার জানান, দরে না পোষানোয় তিনি ওই কাজ করেননি।

নামী কর্পোরেট সংস্থার চাকরি ছেড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন ছাত্র এখন পেশাদার হ্যাকার। তিনি বলেন, ‘‘অনেক পুরুষ-মহিলা সঙ্গীদের সম্পর্কে সন্দেহ হওয়ায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপে তাঁদের সঙ্গীরা কার সঙ্গে চ্যাট করছেন, তা জানতে চান। আমার হ্যাক করা তথ্যের জেরে একাধিক বিয়ে এবং সম্পর্ক ভেঙেছে। তাঁদের মধ্যে একজন আমার প্রাক্তন বস!’’ ওই হ্যাকার জানান, কোনও সংস্থার ওয়েবসাইট হ্যাক করার চেয়ে অনেক কম পরিশ্রমে ব্যক্তিগত প্রোফাইল হ্যাক করা যায়। তাঁর কথায়, ‘‘মূলত বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার কর্মীরা এমন কাজের বরাত বেশি দেন।’’

শহরের এই নব্য হ্যাকারদের একাংশ কম্পিউটার সায়েন্সের পড়ুয়াও নন। ’৯০য়ের দশকের মাঝামাঝি প্রেসিডেন্সিতে সাহিত্য পড়তেন, এমন এক হ্যাকারের কথায়, ‘‘আমাদের কলেজজীবনে কম্পিউটারের তেমন চল ছিল না। আমি নিজের উৎসাহেই কম্পিউটার ঘাঁটতাম। পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাইবার ক্যাফেতে বসে থাকতাম। এরপর মূলত নিজের উদ্যোগেই হ্যাকিং শুরু করি। শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে এখন এটাই আমার পেশা।’’ তবে হ্যাকাররা জানিয়েছেন, ঝুঁকি এড়াতে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই ক্লায়েন্টদের কাছে পরিচয় গোপন রাখেন তাঁরা।

সাইবার অপরাধ দমনে সক্রিয় পুলিশের চোখ এড়িয়ে হ্যাকিং শিখতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন অনেকেই। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্পে কর্মরত এক হ্যাকারের কথায়, ‘‘আমি পরিচয় গোপন করে অনলাইনে কয়েকজনকে হ্যাকিং শেখাই। এতে রোজগারও হয় যথেষ্ট।’’ সূত্র: এবেলা