‘বড় ভাইদের’ ফোন পেয়েই দ্রুত সরে যায় ধর্ষকরা

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানি হলে ধর্ষকদের রক্ষায় তৎপর হন তাদের রাজনৈতিক ‘বড় ভাইয়েরা’। আসামিদের ধরতে কলেজ গেটে পুলিশ আশা মাত্রই বড় ভাইদের ফোন পায় তারা।

 

তারপরই দ্রুত পালিয়ে যায়। রোববার পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে মামলার ২নং আসামি ছাত্রলীগ নেতা তারেকুল ইসলাম তারেক ও ৬নং আসামি ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রহমান মাসুম জবানবন্দিতে এমনটিই জানিয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, প্রায় একই বক্তব্য দিয়েছে তারেক ও মাসুম। তবে দু’জনের বক্তব্যেই আসে ধর্ষণে যুক্ত ছিল সাইফুর, অর্জুন, রনি আর তারেক। মাসুম ও রবিউল ধর্ষণের আগেই প্রায় অচেতন হয়ে যায় ভিকটিম। ফলে তারা ধর্ষণ করতে পারেনি।

মাসুম ও রবিউল মোটরসাইকেলে এসে শুধু তাদের সহযোগিতা করেছে। তারেক জানায়, এমসি কলেজ গেট থেকে ভিকটিমকে জোর করে নেয়ার সময় তাকে গাড়ি চালাতে বলে সাইফুর। সে নিজে গাড়ি চালিয়েই তাদের নিয়ে যায় হোস্টেলে।

এর আগে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে রোববার বেলা আড়াইটায় তাদেরকে পুলিশি পাহারায় সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।

পরে আদালত তাদের প্রত্যেককে রিফ্রেশমেন্টের জন্য সময় দেন। এরপর পৃথক পৃথক আদালতে তাদের জবানবন্দি নেয়া হবে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী  জানান, তারা প্রত্যেকেই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, তারেকুল ইসলাম তারেক অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে, মাহফুজুর রহমান মাসুম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ সাইফুর রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এর আগে শুক্র ও শনিবার মামলার অপর ছয় আসামির রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

তারা হল- সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, মিছবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিন। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর, তারেক, অর্জুন, রবিউল, রনি ও মাসুমকে এজাহারভুক্ত আসামি করে মামলা হয়। মামলার এজাহারের বাইরে আরও দু-তিনজনকে আসামি করা হয়।

নগরীর বাইরে পলাতক থাকা অবস্থায় মোট আটজনকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ ও র‌্যাব-৯। মামলায় এজাহারভুক্ত ছয়জন আসামিসহ গ্রেফতার হওয়া মোট আটজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এর আগে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় গ্রেফতার ৮ আসামির প্রত্যেককে ধাপে ধাপে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

ধর্ষণের প্রতিবাদে ময়মনসিংহে মানববন্ধন : সারা দেশে ধর্ষণসহ সব অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শহরে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি নারী শাখা।

নগরীর ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে রোববার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি নারী শাখার সভাপতি ফেরদৌস আরা মাহমুদা হেলেনের বক্তব্য রাখেন সিপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, সাধারণ সম্পাদক বাহার মজুমদার, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফাহমিদা ইয়াসমিন রুনা, নারী শাখার সাধারণ সম্পাদক শামিয়া সারোয়ার, নারী নেত্রী মরিয়ম সৈয়দ, ছাত্র ইউনিয়নের বকুল সূত্রধর প্রমুখ।

 

সূত্রঃ যুগান্তর