শুক্রবার , ৮ মার্চ ২০১৯ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বড় ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগে নারী

Paris
মার্চ ৮, ২০১৯ ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে বছরে ২০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম বিক্রি করছে মৌসুমী ইসলামের কারখানা। ৭৫ হাজার বর্গফুটের রান্নাঘর থেকে ঢাকা শহরের অফিসে-বাড়িতে খাবার সরবরাহ করছেন আফরোজা বেগম। মানসম্পন্ন প্রসাধনসামগ্রীর অনলাইন বাজার গড়েছে শারমিন ইসলামের সাজগোজ ডটকম। ব্যাংক সেবার ব্যবসা শুরু করেছে শামীম আরা খানমের আই সঞ্চয়। দেশের বাইরে শাখা খুলেছে আছিয়া খালেদা নীলার তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এমন বড় আর ব্যতিক্রমী ব্যবসায় আসছেন নারীরা। সংখ্যায় কম, তবে তালিকা বড় হচ্ছে। বড় হওয়ার পথে আছে অনেক বাধাও।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নিজস্ব গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, অর্থনীতিতে নারীর যে অবদান গণনায় আসে না, তার পরিমাণ জিডিপির ৭৭ থেকে ৮৭ শতাংশ। ফলে নারীর প্রকৃত অবদান গণনায় এলে জিডিপির হিসাবে বড় উল্লম্ফন ঘটতে পারে।

ঠিক কতজন নারী উদ্যোক্তা দেশের বড়, ছোট, মাঝারি, ক্ষুদ্র উদ্যোগে জড়িত, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে বড় উদ্যোক্তা হাতে গোনা কয়েকজন, মাঝারিও কম। এমনকি ক্ষুদ্রের সংখ্যাও খুব বেশি হবে না। ২০১৭ সালে আর্থিক লেনদেনবিষয়ক বহুজাতিক কোম্পানি মাস্টারকার্ডের নারী উদ্যোক্তাবিষয়ক এক জরিপে বলেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে যত উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের প্রায় ৩২% নারী। আর নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, ব্যবসা শুরুর জন্য প্রথমেই পরিবার থেকে বড় সমর্থন প্রয়োজন। এরপর মূলধন, ট্রেড লাইসেন্স, বাজারজাতের সমস্যা তো রয়েছেই। এ ছাড়া নিরাপত্তা এখনো বড় প্রশ্ন।

উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকঋণ পেতে নারী উদ্যোক্তাদের যেসব সমস্যা ছিল, তা কিছুটা কমে এসেছে। তবে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পণ্য বাজারজাত। এ জন্য সরকারকে সহায়তা করতে হবে। পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

বড় কারখানা বড় উদ্যোগ
মৌসুমী ইসলামের প্রতিষ্ঠান প্রমিক্সো লিমিটেড হাসপাতালের বিছানা, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সরঞ্জাম, ফিজিওথেরাপি সরঞ্জাম ও একবার ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা সরঞ্জাম (যেমন সিরিঞ্জ, নিডল, কেনোলা, গ্লাভস) উৎপাদন করে বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করে। পাশাপাশি চিকিৎসা সম্পর্কিত প্লাস্টিক উৎপাদনসহ ৬৮ ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি হয় তাঁর কারখানায়। ২০১০ সালের শেষের দিকে গাজীপুরে ৩০ বিঘা জমিতে কারখানা গড়ে তোলেন তিনি। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল এনে কাজ শুরু হলেও এখন অনেক কাঁচামাল দেশেই হচ্ছে। মাত্র ১৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি।

মৌসুমী ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা ব্যবসা করতে চান, তাঁদের সময় নিয়ে পরিকল্পনা করে শুরু করতে হবে। পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। মেধার যথাযথ ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যবসাকে নিজের খাদ্য হিসেবেই ভাবতে হবে।’

আছিয়া খালেদা নিজে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ভালো চাকরি করতেন। ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নে বাংলাদেশের প্রথম সদস্য ও ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। ২০১৩ সালে দেশে প্রতিষ্ঠা করেন উইমেন ইন ডিজিটাল নামের আউটসোর্সিং কোম্পানি। এ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশের গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী অনলাইন সফটওয়্যার, গেমস, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বানিয়ে দিচ্ছে। আছিয়া তাঁর কোম্পানির শাখা খুলেছেন নেপালে, ইচ্ছা আছে আরও দেশে যাওয়ার।

আছিয়া খালেদা জানালেন, ‘শুধু শহুরে নারী নয়, গ্রামের নারীদেরও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। গ্রামীণ ও শহুরে নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে সংসার সামলে ঘরে বসেও গ্রাফিক ডিজাইন, ডেটা এন্ট্রিসহ নানান কাজ করছেন।’

শামীম আরা খানম ২৫ বছর ব্যাংকিং পেশায় ছিলেন। গত বছরের শুরুতে চাকরি ছেড়ে গড়ে তোলেন আই সঞ্চয় নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নিজের মেয়েকে যুক্ত করার পাশাপাশি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নারী উদ্যোক্তা রোকিয়া আফজাল রহমান এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আমার দেশ আমার গ্রামের সাদেকা হাসান সেঁজুতির পরিবারকেও এ উদ্যোগে যুক্ত করেছেন।

আই সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য ব্যাংক সেবার ব্যবসা করা। প্রতিষ্ঠানটি দি সিটি ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে রাজধানীর লালবাগে এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ চালু করেছে। সারা দেশে ১৪টি এজেন্ট চালু করতে ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। শামীম আরা খানম বলেন, ‘দেশের যেখানে ব্যাংক সেবা পৌঁছেনি, সেখানেই পৌঁছাতে চাই আমরা।’

আফরোজা বেগমের ৭৫ হাজার বর্গফুটের রান্নাঘর থেকে রাজধানীর শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে যাচ্ছে। এই রান্নাঘরের নাম খান’স কিচেন। স্বামীর সহায়তায় ২০১৭ সালে রাজধানীর বেরাইদে প্রায় ১৫ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে কিচেনটি। জানালেন, পরিবারের সহায়তা ছাড়া নারীদের পক্ষে বড় পরিসরে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করাটা বেশ কঠিন।

মাঝারি থেকে ক্ষুদ্র
সারা দেশের প্রতিটি এলাকাতেই নারীরা ঘরে-বাইরে কাজে জড়িয়ে আছেন। ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে ব্লক, বাটিক, বুটিক, সেলাই-ফোঁড়াইয়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা। যা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। শুধু এক ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অন্তত ৬৫ হাজার স্বাধীন হস্তশিল্পী। তাঁদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী।

নারী উদ্যোক্তা বাড়াতে কম সুদে, সহজে ঋণ পাওয়াসহ নানা সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ঋণে সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। ২০১৬ সালের জাতীয় শিল্পনীতিতে এসএমই খাতে ঋণের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নির্দেশনা রয়েছে, পুনঃ অর্থায়ন ঋণের (কোনো ব্যাংক ঋণ দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সমপরিমাণ টাকা ব্যাংককে দিয়ে দিচ্ছে) কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তারা পেয়েছেন মাত্র ৬ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা, ঋণ পেয়েছেন ৪৬ হাজার ১৬২ নারী উদ্যোক্তা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভালো উদ্যোগ নিয়ে কিছু নারী এগিয়ে আসছেন। তবে বেশির ভাগই এখনো প্রচলিত ধ্যানধারণা নিয়ে চলছে। অনেক উদ্যোক্তা ব্যাংকে ঠিকমতো নথিপত্র জমা দিতে পারছেন না। সময় এসেছে প্রশিক্ষিত করে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার।

সরকারের পক্ষ থেকে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রতি বাজেটে ১০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও রাখা হচ্ছে। তবে সেই টাকার পুরোটা ব্যবহারই হচ্ছে না।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বাজেট) ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘নারীদের জন্য সরকার বরাদ্দ রেখেছে। কিন্তু নারীরা বাটিক বুটিকের বাইরে সেভাবে চিন্তা করতে পারছেন না। ফলে পুরো বরাদ্দ খরচ করা যাচ্ছে না।’

নতুন ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
সিঙ্গাপুরে নকিয়া মোবাইল ফোনে চাকরি করতেন মালিহা মেহের কাদির। ২০১৪ সালে দেশে ফিরে চালু করেন সহজ ডটকম। যার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের ঘরে বসে বাস ও লঞ্চের টিকিট কেনার সুবিধা চালু হয়। এরপর এতে ধীরে ধীরে যুক্ত হয় সিনেমা ও ক্রিকেট ম্যাচের টিকিট। এখন মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং সেবাও মিলছে।

ফার্মাসিস্ট সিনথিয়া শারমিন ইসলাম ২০১৩ সালে চালু করেন সাজগোজ ডটকম। নারীদের জন্য বাংলা ভাষায় এ পোর্টালে প্রসাধন নিয়ে কাউন্সেলিং, পরামর্শের পাশাপাশি সাজকম ডটকমের নিজস্ব স্টোর থেকে উন্নত দেশের প্রসাধনসামগ্রী কেনারও সুযোগ পাচ্ছেন নারীরা। ২০১৩ সালে শুরু হওয়া সাজগোজ ডটকমের ফেসবুক পেজের অনুসারী বর্তমানে ১৩ লাখ।

নাসিমা আক্তার নিশা ২০১০ সালে রেভেরি সফটওয়্যার কোম্পানি গড়ে তোলেন। তিনি বর্তমানে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যুগ্ম সম্পাদক। নাসিমা আক্তার জানান, ই-ক্যাবে নিবন্ধিত সাড়ে ৮০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০ শতাংশ নারীদের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যবসা করা ২০ হাজার পেজের মধ্যে ১২ হাজার পেজই চালাচ্ছেন নারীরা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারহানা এ রহমানের মতে, ব্যবসা মানেই ঝুঁকি। নারীদের সাহস করে ঝুঁকিটা নিতে হবে।

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য